October 6, 2025

বন্যার আগে এবং পরে লিবিয়ার বন্দর শহর ডারনা বর্তমানে ধ্বংসস্তূপ

সোমালিয়া ওয়েব নিউজ: লাশের পর লাশ জমেছে লিবিয়ার ডারনায়। যাঁরা বেঁচে গিয়েছেন, তাঁরা যে দিকে তাকাচ্ছেন এই একই দৃশ্য দেখছেন। শহরের জমা জল, কাদার স্রোত, সমুদ্রের জল, ধসে যাওয়া বাড়ির ছাদে-জানলায়— সর্বত্র মৃতদেহের ছড়াছড়ি। শহরটায় যেন আর কিছু নেই। পাহাড়ছোঁয়া ঢালু জমিতে গড়ে ওঠা শহর ডারনা। তার এক প্রান্তে ভূমধ্যসাগর। তবে ডারনাকে আপাতত মৃত্যু উপত্যকা ছাড়া অন্য কিছু ভাবা যাচ্ছে না। গত তিন দিনে মৃত্যুর সংখ্যা সরকারি হিসাবে ৫৩০০ ছাড়িয়েছে। লিবিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত বন্যায় নিখোঁজ ১০ হাজারের বেশি মানুষ। ফলে আশঙ্কা, মৃতের সংখ্যা আরও অনেক বাড়তে পারে।রাজনীতি, সন্ত্রাস-সহ নানা সমস্যায় জর্জরিত লিবিয়া দেশটিতে যে গুটিকতক ধনী শহর রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম ডারনা। অন্তত রবিবারের আগে পর্যন্ত তা-ই ছিল। সাজানো-গোছানো এই বন্দর শহরে রাজনৈতিক উথালপাথাল ছিল কম। নীল সাগরের গর্জনই বেশি। শহরকে বেড় দিয়ে যে সড়কটি এগিয়েছে, তারই গা ছুঁয়ে আছে সমুদ্র। উল্টো দিকে একের পর এক মাথা তুলেছে ইমারত। কিন্তু রবিবারের পর সেই রাস্তা, উঁচু ইমারতগুলির অনেকটা অংশই আর নেই। ভূমধ্যসাগরীয় ঝড় ড্যানিয়েল সাজানো শহরটাকে প্রায় ধ্বংস করে ফেলেছে। সুনামির মতো তীব্র আর বিশাল জলস্রোত বদলে দিয়েছে গোটা শহরের মানচিত্রকেই। অন্তত বন্যার আগে এবং পরের উপগ্রহচিত্র তা-ই বলছে।সংবাদ সংস্থা বিবিসি যে উপগ্রহচিত্র প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, বন্যার আগের ভূমধ্যসাগরের গাঢ় নীল জল রবিবারের পর রং বদলে হয়েছে ঘোলাটে সবুজ। শহরের মাঝ বরাবর বয়ে যাওয়া ওয়াদি ডারনা নদী দিয়েই সুনামির মতো জলস্রোত বয়ে গিয়ে মিশেছিল সাগরে। সেই নদীর দু’পাশে ছিল ঘন জনবসতি। সে সব স্রেফ ধুয়েমুছে গিয়েছে। রুক্ষ দেশ হলেও বন্দর শহর ডারনায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল সবুজালি। সে সবের চিহ্ন নেই বন্যা পরবর্তী ডারনায়। বদলে চারপাশে শুধুই ঘোলাটে কাদা, জমা জল। ভেঙে গিয়েছে উপকূলকে বেড় দেওয়া রাস্তা। সমুদ্রের জলে বদলে গিয়েছে উপকূলরেখাটিও।গত ৪ সেপ্টেম্বর গ্রিসের উপকূলে ভূমধ্যসাগরের উপর তৈরি হয়েছিল সামুদ্রিক ঝড় ‘ড্যানিয়েল’। যার জেরে ৫ এবং ৬ সেপ্টেম্বর গ্রিসে রেকর্ড বৃষ্টি হয়েছিল। গ্রিসের জাগোরা গ্রামের একাংশে ২৪ ঘণ্টায় ৭৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। যা ওই অঞ্চলের প্রায় ১৮ মাসের মোট বৃষ্টিপাতের সমান। এর পরেই রবিবার ঝড় আছড়ে পড়ে লিবিয়ার উপকূলে। ‘ড্যানিয়েল’-এর তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে যায় আল-বায়দা, আল-মার্জ, তোবরুক, বাতাহ, বেনগাজি-র মতো শহর। তবে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা হয় ডারনার।প্রবল বৃষ্টি এবং হড়পা বানে প্রথমে একটি বাঁধ ভাঙে ডারনা নদীর। তার পর তার জলের তোড়ে সশব্দে ভেঙে যায় আরও দু’টি নদীবাঁধ। বাঁধে জমা জল এর পরই সুনামির মতো বয়ে যায় শহরের উপর দিয়ে। ভাসিয়ে নিয়ে যায় শহরের বাড়িঘর। বন্যার জলে খেলনার মতো ভাসতে দেখা যায় বাস, ট্রাক, গাড়িকে।১ লক্ষ ২৫ হাজার মানুষের বাস এই বন্দর শহরে। সরকারি হিসাবে এই জনসংখ্যার প্রায় ১২ শতাংশই হয় নিখোঁজ, নয় মৃত। লিবিয়ার বিমান পরিবহণ মন্ত্রী এবং পূর্বাঞ্চলীয় প্রশাসনের জরুরি পরিস্থিতি কমিটির সদস্য হিচেম আবু চকিওত সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, ‘‘শহরের ২৫ শতাংশ স্রেফ মুছে গিয়েছে।প্রাকৃতিক এই বিপর্যয়ে আহতের সংখ্যাও কম নয়। ডারনার সরকারি হাসপাতালে সেই জখমদের চিকিৎসার জায়গা নেই প্রায়। হাসপাতালের বাইরে কাতারে কাতারে পড়ে রয়েছেন জখম মানুষ। তাঁদের সংখ্যা প্রায় হাজারের কাছাকাছি। মৃতদেহ চিহ্নিত করার জন্যও হাসপাতালে ভিড় করেছেন প্রিয়জনেরা। সব মিলিয়ে বেহাল দশা ডারনার।

Loading