November 30, 2025

রেজিস্ট্রি ম্যারেজ হলেও, আনুষ্ঠানিক বিবাহ না হলে সম্পূর্ণ বিবাহ নয়! জানালো সুপ্রিম কোর্ট

সোমালিয়া ওয়েব নিউজ : সম্প্রতি হিন্দু বিবাহ নিয়ে শীর্ষ আদালত মতে সইসাবুদ করে কাগজে-কলমে বিয়ে বিয়েই নয়। অগ্নিসাক্ষী, সাতপাকে বাঁধা ও সিঁদুর দান না হলে হিন্দু বিবাহ আইনে তা বিয়ে বলেই মান্যতা পেতে পারে না। তাহলে কি বিয়ের অনুষ্ঠান ছাড়া হিন্দু বিবাহ বৈধ নয়? রেজিস্ট্রি বিয়েকে কি বিয়ে বলা যাবে না? জেনে নেওয়া যাক সুপ্রিম কোর্ট এ বিষয়ে কী বলল।
সম্প্রতি একটি মামলার রায়ে শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ হল, হিন্দু বিবাহে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিক আচার-অনুষ্ঠানই মুখ্য বিষয়। এবং অনুষ্ঠানের প্রমাণই বিবাহের যোগ্য সাক্ষী। ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট যথেষ্ট নয়। হিন্দু বিবাহ আইনের ৭ নম্বর ধারার কথা উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, যতক্ষণ না পাত্র-পাত্রী এ ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠান করছেন, ততক্ষণ তাকে হিন্দুমতে বিয়ে বলা যাবে না। এক নিঃশ্বাসে আদালত এও বলেছে যে, এখনকার আধুনিক যুবক-যুবতীরা বিয়ের বৈধ অনুষ্ঠান ছাড়াই নিজেদের স্বামী-স্ত্রী বলে পরিচয় দিতে চাইছে। আদালতের মতে, বিয়ের অনুষ্ঠান ছাড়া দম্পতির বৈবাহিক সম্পর্কের কোনও মর্যাদা নেই। ফলে তা হিন্দু বিবাহ আইনে বিয়ে বলেই পরিগণিত হতে পারে না। সর্বোচ্চ আদালত এও বলেছে যে, অনুষ্ঠান ছাড়া একজন ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশন অফিসার ৮ নম্বর ধারা মোতাবেক বিয়ে দিতে পারেন না। রেজিস্ট্রেশন পর্ব তখনই সম্পূর্ণ বলে গণ্য হবে, যতক্ষণ না ওই অফিসার বৈধ বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পর্কে নিশ্চিত হবেন। সুতরাং, যদি কাউকে বিয়ের শংসাপত্র দেওয়া হয়ে থাকে এবং বিয়ের অনুষ্ঠান না হয়ে থাকে, তাহলে ৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী ওই বিয়ের কোনও বৈধতা থাকে না, বলেছে শীর্ষ আদালত।
আদালতের পর্যবেক্ষণ হল, বিয়ে হল একটি পবিত্র বন্ধন। সারা জীবনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়া। পারস্পরিক সম্মান, মর্যাদাবোধের বিনিময়। নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া, সমান অধিকার এবং সুসম্পর্ক টিকিয়ে রাখার এক পবিত্র বন্ধন। বৈবাহিক আচার-অনুষ্ঠানে যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হয় পরস্পরকে, তা সারা জীবনের জন্য টিকিয়ে রাখার দায়বদ্ধতা গড়ে ওঠে। তাঁরা সেই গুরুত্ব অনুভব করতে পারেন। আদালত এও মনে করে যে, এই অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধতা থেকেই পারস্পরিক বিশ্বাস ও বোঝাপড়া এমন স্তরে পৌঁছায় যেখানে সম্পর্কে ভাঙন ও বিচ্ছেদ খুব কম ক্ষেত্রেই ঘটে।
সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, হিন্দু বিয়ে হল একটি সংস্কার। ভারতীয় সমাজের এর গভীর মূল্যবোধ আছে। বৈধ হিন্দু বিবাহে যে সন্তানের জন্ম হয়, তাদের আইনের প্রতি সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে। তাই আমরা যুবক-যুবতীদের কাছে আবেদন করছি এ বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করুন। প্রাতিষ্ঠানিক বিবাহের কথা ভাবুন এবং এর সামাজিক স্বীকৃতিকে গুরুত্ব দিন। আদালত আরও বলেছে, বিয়ে কেবলমাত্র নাচগানের অনুষ্ঠান নয়। কিংবা সিঁদুর পরালাম আর লোক খাওয়ালাম। অথবা পণ কিংবা উপহারের বিনিময় বিয়ে নয়। বিয়ে কখনই বাণিজ্যিক বিপণন নয়। বিয়ে হল একজন পুরুষ এবং নারীর আজীবন সম্পর্ক স্থাপন। ভারতীয় সমাজের মূল বা শিকড় গেঁথে রয়েছে এই বিয়ের মধ্যে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিভি নাগরত্ন এবং অগাস্টিন মাসিহ-র বেঞ্চ একটি বিচ্ছেদ মামলায় এই মত পোষণ করে। এক পাইলট দম্পতির বিচ্ছেদ মামলায় আদালত এইসব মন্তব্য করেছে। প্রসঙ্গত এই দুজনের রেজিস্ট্র ম্যারেজ সম্পূর্ণ হলেও বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়নি। তাঁরা দুজনেই আলাদা বসবাস করতেন। পরে যখন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় তখন ওই যুবতী পণের অভিযোগ দায়ের করেন শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে। পালটা স্বামীও বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা করেন। সুপ্রিম কোর্ট তাঁদের দুজনেরই আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। আদালতের দাবি , হিন্দু বিবাহ শুধু দুজনের রেজিস্ট্র ম্যারেজ সম্পূর্ণ হলেও বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়নি যেহেতু এটা কোনো বিয়ে নয়।

Loading