October 5, 2025

কিছু মেরুদন্ড আজও অবিকৃত, অবিক্রীত

সোমালিয়া ওয়েব নিউজ: সরকারি ব্যাঙ্ক,প্রাইভেট ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিসের সিনিয়র সিটিজেন স্কিম গুলো দেখছিলাম।পোস্ট অফিস ৮.২% দিচ্ছে, কিছু প্রাইভেট ব্যাঙ্ক এক দের শতাংশ বেশি।দুশো পাঁচশোয় বিকিয়ে যাওয়া সমাজে এককালীন দশ লাখ কম নয়। বিনা পরিশ্রমে প্রতিমাসে নূন্যতম ৮২০০ থেকে ১০০০০ টাকা স্থায়ী রোজকারের একটা বন্দোবস্ত হতেই পারতো। একটু কষ্ট করে হলেও আজকের বাজারদরে আট দশ হাজার টাকায় বুড়ো বুড়ির তিনবেলা ভাত ডাল, গ্যাস, প্রেসারের ওষুধের বন্দোবস্ত হয়ে যায়।সমস্যা টা অন্য জায়গায়।কিছু মেরুদন্ড তরুণাস্থির জায়গায় মজ্জা যুক্ত কঠিন হাড় দিয়ে তৈরী। বয়েসের ভারে সে মেরুদন্ড ঝুঁকে পড়েনি।বরং খুব সহজে ঝুঁকে পড়া যৌবন কে দেখিয়েছে একটা মেরুদন্ড যেটা দধিচীর হাড় দিয়ে তৈরী।সব প্রতিকূলতা, সামাজিক অবস্থা,অর্থাভাব সবের সাথে লড়াই করতে করতে হাড় গুলোর কিঞ্চিৎ ক্ষয় হলেও কাঠামো টা এখনো শক্ত, সোজা, টানটান।ঝুঁকে পড়েনি আর কোনো অবস্থাতেই ঝুঁকে পড়বেনা।এই দৃঢ় চেতনা অনন্ত কাল জুড়ে জন্ম দিয়েছে অসংখ্য অনুরূপ চেতনার।এই দৃঢ়চেতা পিতার ঔরসে জন্ম আর এক মেয়ের, এক মায়ের। সেলাই করে সংসার চালানো পিতা স্বপ্ন দেখেছিলো তাকে ডাক্তার বানাবে। ডাক্তার হয়েও গেলো, কিন্তু ওই যে ছোট থেকে যার কোলে পিঠে চড়ে বড়ো হওয়া সে মানুষটা বড়ো শক্ত, বড়ো অনমনীয়, বড়ো বেশি মাত্রায় আপসবিহীন তার জীবন।সামনে বিপুল অর্থ, প্রভাব, প্রতিপত্তি সব কিছুর হাতছানিতে জীবনটা হতেই পারতো একটু আপোষপন্থী। একটু চোখ কান বন্ধ রাখলেই হোতো।কটা বছর,দেখরে চোখ শোনরে কান করে চালিয়ে দিলেই সামনে অনেক অপসন, যেকোনো একটা বেছে নিলেই সফলতা দোরগোড়ায়।আজকের সমাজ যখন চাইছে কিছু ঝুঁকে পড়া মেরুদন্ড, আরো ভালো হয় যদি মেরুদন্ডটা না থাকে।সে সমাজে মেরুদন্ড সোজা রেখে চলার পথটা বড্ডো কঠিন।কেউ পারে, কেউ পারেনা।মেয়েটা পারেনি,পথটা অর্ধেক চলার আগেই থেমে গেলো!রাজনীতি, অরাজনীতি, সহকর্মী, সহমর্মী সব দিক দিক থেকেই আন্দোলন হবে। হওয়াটাও বাঞ্চনীয়। ব্যাবস্থার পড়াকাষ্ঠায় সঠিক বিচার আসবে বা নাও আসতে পারে।কিছুদিনের পর সবাই ভুলেও যাবে।ফেসবুক, হোয়াটস্যাপ, শহরের রাজপথ বা গ্রামের মেঠো রাস্তা জুড়ে ছড়িয়ে পড়া প্রতিবাদের আগুন নিভেও যাবে।আজ স্বাধীন ভারতবর্ষে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বোম বাঁধা শিখতে কলকাতায় আশা মেদিনীপুর এর আঠারোর ছেলেটা বা কোলকাতা থেকে পালিয়ে দেশ স্বাধীন করতে চাওয়া ব্যারিস্টারের সন্তান নতুন করে পথ দেখাতে আসবেন না।পথ দেখাবে ডাক্তার মেয়েটা, সেলাই করে ডাক্তার বানানোর স্বপ্ন দেখা তার বাবা মা।”সেলাই এর কাজ করে মেয়েকে বড়ো করেছি, সেলাই করেই খাবো। মেয়েকে হারিয়ে লক্ষ সন্তানের বাবা হয়েছি, তাই মেয়েকে বিক্রি করে টাকা নেব না।” ….. আগামী প্রজন্মকে পথ দেখাক সন্তান হারা এই পিতার অনমনীয় আদর্শ, হাজারো চিন্তার জন্ম হোক এই বৃদ্ধ পিতার আদর্শে।

Loading