বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের “ইছামতী”

সোমালিয়া ওয়েব নিউজ; সত্যিই, ইছামতী নদী একসময়ে ছিল জীবন্ত, প্রবাহিত এবং জীবনের অঙ্গ, কিন্তু বর্তমানে তার অবস্থা অনেকটাই ভিন্ন। নদীটি এখন বেশিরভাগ অংশে শুষ্ক এবং সেখানে ধান চাষ করা হচ্ছে—এটি বাস্তবের এক কঠিন চিত্র।বিভূতিভূষণ তাঁর উপন্যাসে ইছামতী নদীর সৌন্দর্য, নদী তীরের প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রার চিত্র তুলে ধরেছেন। তাঁর বর্ণনায় নদী ছিল এক মহিমান্বিত সৃষ্টি, যেখানে পাখির কলরব, সবুজের অপূর্ব সমারোহ, এবং নৌকায় চড়ে মানুষের চলাচল ছিল জীবনের এক অঙ্গ। কিন্তু আধুনিক সভ্যতার ছোঁয়ায় এখন সেই নদী হারিয়ে যেতে বসেছে।১৯৫০ সালে যখন বিভূতিভূষণ “ইছামতী” উপন্যাসটি লিখেছিলেন, তখন ইছামতী ছিল এক প্রাণবন্ত নদী, কিন্তু আজ তার বেশিরভাগ অংশ শুকিয়ে গেছে, কচুরিপানা আর পলি জমে পড়ে নদীটির অস্তিত্ব ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণু হয়ে উঠেছে। নদীর উৎসমুখে রেলসেতুর পাশে মাটি ফেলে সড়কপথ তৈরি করা হয়েছে, যা নদীর জলপ্রবাহকে পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে। এমনকি একসময় যেখানে নৌকা চলত, সেখানে এখন তৈরি হয়েছে রাস্তা। এই পরিণতির মাধ্যমে বিভূতিভূষণ যেমন নদীর সৌন্দর্য ও জীবনের এক অমোঘ সম্পর্কের কথা বলেছেন, তেমনি আজকের দুঃখজনক বাস্তবতার মধ্য দিয়ে নদীর বিপন্ন অবস্থার প্রতি এক গভীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। বর্তমানে নদী ও নদীভিত্তিক জীবনের এমন বিপন্নতা শুধুমাত্র ইছামতী নয়, বাংলার বহু নদীরই বাস্তবতা। চিরকালীন এই নদীভিত্তিক জীবনধারা আর নৌকাভিত্তিক চলাচল আজ এক অদৃশ্য অতীত হয়ে গেছে। যে নদী ছিল জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ, তা আজ আর ধীরে ধীরে মৃতপ্রায়। এটি একটি সাংস্কৃতিক বিপন্নতার চিত্র, যেখানে প্রকৃতি এবং মানুষের সম্পর্কের মিথস্ক্রিয়া দ্রুত পরিবর্তিত হয়ে চলেছে।

Loading