October 5, 2025

লবণ যদি নষ্ট হয়ে যায়, কে করবে তার পরিশোধন?

সোমালিয়া ওয়েব নিউজঃ এক তরুণ, সদ্য বিবাহিত। তাঁর স্ত্রী—শালীন, ধার্মিক ও সজ্জনা। গ্রামের এক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে যুবক বাধ্য হন গ্রাম ছাড়তে। স্ত্রীকে নিয়ে চলে যান এক অজানা অঞ্চলের অন্য গ্রামে। নতুন পরিবেশে জীবন গুছিয়ে নেন। প্রতিদিনের মতো সেখানে গ্রামের মোড়লের আসরে যান, কথা বলেন, শোনেন, শেখেন।

একদিন, হঠাৎ মোড়ল তাঁর বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় স্ত্রীর এক ঝলক দর্শন পান—নির্বাক সৌন্দর্য, রূপ আর গাম্ভীর্যের অপূর্ব সংমিশ্রণ। সেই মুহূর্তেই কামনার বিষবাষ্প ঢুকে যায় মোড়লের হৃদয়ে। পরিণত হন লালসার শিকার।

পরিকল্পনা আঁটেন—যুবককে গ্রাম থেকে দূরে পাঠাতে হবে। একদিন আসরে বলেন,
“শুনেছি দূরে এক দারুণ চারণভূমি আছে। যাচাই করে আসতে হবে।”

চারজন লোক বাছাই করেন। তাদের একজন সেই যুবক।

যাত্রা শুরু হয়।

রাত গভীর হলে মোড়ল চুপিচুপি যুবকের ঘরের দিকে এগোলেন। অন্ধকারে গিয়ে দেয়ালে ধাক্কা লাগায় শব্দ হয়। স্ত্রী জেগে উঠে জিজ্ঞেস করেন,
“কে ওখানে?”

মোড়ল নিজের পরিচয় দেন।
“এত রাতে?”—আশ্চর্য হয় স্ত্রী।

মোড়ল এবার মুখোশ ফেলে বলেন,
“তোমায় দেখার পর শান্তি নেই। তোমায় চাই।”

স্ত্রী শান্ত, স্থির গলায় বলেন,
“ভালবাসা চাইলে দিতে পারি… কিন্তু আগে একটা প্রশ্নের উত্তর দিন। উত্তর সঠিক হলে—আপনার ইচ্ছা পূর্ণ হবে।”

মোড়ল খুশি হয়ে বলেন,
“বলুন।”

স্ত্রী জিজ্ঞেস করেন—
“যেমন মাংস নষ্ট না হয় বলে আমরা লবণ ব্যবহার করি, তবে যদি লবণ নিজেই পচে যায়… তাহলে কে তা পরিশোধন করবে?”

মোড়ল স্তব্ধ। চিন্তায় ডুবে যান।

দিন যায়, রাত যায়—কোনো উত্তর মেলে না। পরদিন আসরে গিয়ে প্রশ্নটি সকলকে করেন। কিন্তু কেউই উত্তর দিতে পারে না।

এক কোণে বসে থাকা এক বৃদ্ধ এতক্ষণ নীরব ছিলেন। মোড়ল তাঁর দিক ফিরে প্রশ্ন করলেন,
“আপনি কিছু বলছেন না কেন?”

বৃদ্ধ ধীরে বলেন:
“কারণ এটা কেবল প্রশ্ন নয়—এ এক বার্তা।

তিনি চাইলে আপনাকে অপমান করতে পারতেন, কিন্তু তা করেননি। বরং আপনার বিবেক জাগিয়ে তুলেছেন।”

তারপর বৃদ্ধ ব্যাখ্যা দেন:

“মাংস নষ্ট হলে লবণ তা রক্ষা করে। কিন্তু লবণ নিজেই পচে গেলে—তাকে কে রক্ষা করবে?

অর্থাৎ,
নেতারা যদি ভুল করেন, সমাজ কোথায় যাবে?
যদি শিক্ষক পথ হারান, ছাত্ররা কার দিক অনুসরণ করবে?
যদি পিতা ভুল করে, সন্তান কার ছায়ায় চলবে?

তাই নেতা, শিক্ষক, পিতা—এই সমাজের ‘লবণ’। এদের নৈতিকতা হারালে, পুরো সমাজ পচে যায়।”

মোড়ল নীরবে চোখ মুছলেন। লজ্জা ও অনুশোচনায় মাথা নত করলেন।

Loading