December 1, 2025

শ্রীলঙ্কায় বড় পদক্ষেপ চিনের

সোমালিয়া ওয়েব নিউজ: এশিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে, বিশেষত ভারত মহাসাগরীয় এলাকায় চিনের আধিপত্য সর্বদাই ছিল বেশি। ভারতকে নানান ভাবে সমস্যায় পড়তে হয়েছে এইজন্য। সম্প্রতি আলোচনার শীর্ষে ফের চীনের নাম উঠে এলো। ভারতের এক প্রতিবেশী দেশে চীন বিনিয়োগ করতে চলেছে ৪৫০ কোটি ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় যার মূল্য ৩৭ হাজার কোটি টাকা। সোমবার সেই দেশের সরকার এই বিষয়ে ছাড়পত্র দিয়ে দিয়েছে। এতক্ষণে নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছা করছে সেই দেশ সম্পর্কে; আজকের প্রতিবেদনে সেই নিয়েই আলোচনা করা হবে।আমরা আজকে আলোচনা করে নেব শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে। শ্রীলঙ্কার বাজারে চিন প্রবেশ করেছিল চলতি বছরের জুলাই মাসে। শ্রীলঙ্কাতে বিনিয়োগ করবে চীনা তৈলশোধনকারী সংস্থা সিনোপেক। এই সংস্থা শ্রীলঙ্কার হামবানটোটা দ্বীপে বড় তৈলশোধনাগার তৈরি করবে, এমনটাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সোমবার সিনোপেককে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে শ্রীলঙ্কার মন্ত্রিসভা। চীন হামবানটোটায় ৩৭ হাজার কোটি টাকার যে তৈলশোধনাগার তৈরি করবে, তাতে তেলের ব্যবসা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শ্রীলঙ্কার মন্ত্রী কাঞ্চন উইজেসেকারা। হামবানটোটা কিন্তু শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় বৃহত্তম বন্দর। এর স্থান আসলে কলম্বোর পরেই। ভূ-রাজনীতিগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই দ্বীপটি বরাবর থাকতো আলোচনার শীর্ষে। বহুদিন ধরেই চীন এখানে নিজের আধিপত্য কায়েম করেছে। বন্দরটি ২০১০ সালে তৈরি করা হয়। ২০১৭ থেকে তা শ্রীলঙ্কান বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং চিনের একটি বন্দর গোষ্ঠীর যৌথ পরিচালনার অধীনে রয়েছে। চীনা গোষ্ঠীর নাম হামবানটোটা আন্তর্জাতিক বন্দর গোষ্ঠী। হামবানটোটায় সিনোপেকের তৈল লশোধনাগার তৈরি হলে শ্রীলঙ্কার তেলের ব্যবসায় চীনের আধিপত্য সবথেকে বেশি হবে। এখন থেকে ভারতকে টপকে বাণিজ্য করবে চীন। যদিও কয়েক বছর আগেও এখানে ভারতের আধিপত্য ছিল সবথেকে বেশি।দেশের মধ্যে অন্যতম পরিচিত নাম এখনও লঙ্কা আইওসি (লঙ্কা ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন)। এটি আসলে ভারতের ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশনের একটি শাখা। এত বছর চুটিয়ে ব্যবসা করেছে এই সংস্থা। ২০০৩ সালে শ্রীলঙ্কায় পা রাখে ইন্ডিয়ান অয়েল। কিছু দিনের মধ্যেই দেশের পেট্রল এবং ডিজ়েলের ব্যবসার ১৬ শতাংশে আধিপত্য কায়েম করেছিল তারা। পাশাপাশি লুব্রিক্যান্ট, বিটুমিন, বাঙ্কারিংয়ের মতো সামুদ্রিক জ্বালানির বাজারেও ৩৫ শতাংশ অধিগ্রহণ করেছিল ভারতীয় শোধন সংস্থা। শ্রীলঙ্কায় তারা এক বছরের মধ্যে নিজেদের জায়গা পাকা নিয়েছিল। চলতি বছরে শ্রীলঙ্কায় ব্যবসা বৃদ্ধি করেছে ইন্ডিয়ান অয়েল। সেখানে বৃদ্ধি পেয়েছে পেট্রল পাম্পের সংখ্যা। তাতে চীনের সঙ্গে কোনোভাবেই পাল্লা দেওয়া সম্ভব নয়।ভারতের এই পড়শি দেশ শুধু আর তেলের ব্যবসায় ভারতীয় সংস্থার উপর ভরসা করে থাকতে চাইছে না। নিজেদের আর্থিক সংকট কাটিয়ে তোলার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শ্রীলঙ্কার বাণিজ্যের দিগন্ত উন্মোচন করা হবে বিভিন্ন বিদেশি সংস্থার সামনে এটাই এখন সরকারের লক্ষ্য। বহুদিন ধরেই এই বিষয়টি চর্চিত যে, ভারতকে চাপে ফেলতে এবং সমু্দ্রে আধিপত্য কায়েম করতে চীনের লক্ষ্য শ্রীলঙ্কা, বিশেষত হামবানটোটা। শ্রীলঙ্কা কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করে। চীনের লক্ষ্য সেখানে প্রভাব বিস্তার করা। যদি একবার হামবানটোটা বন্দরে চিনের তৈলশোধনাগার তৈরি হয় ওই এলাকায় বেজিংয়ের ক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পাবে। ভারতকে সমস্যায় ফেলার জন্যই চীন ওই বন্দর ব্যবহার করবে কি না, এখন তা শুধু সময়ের অপেক্ষা।

Loading