সোমালিয়া ওয়েব নিউজ : কন্দকাটা ভূতগুলোর মাথা নেই,তাও দিব্যি ঘুরে বেড়ায়, এটা ভূতেদের দুনিয়ায় মাথাবিহীন হলেও কারও জন্যে কোনো অসুবিধা হয় না। কিন্তু বাস্তব দুনিয়ায় মুন্ডু হীন হয়ে ঘুরে বেড়ানো, এটা বরং বড্ড বেশি ভুতুড়ে। ১৯৪৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এরকমই এক কন্দকাটা মোরগের জন্ম হয়। তবে সে জন্ম ডিম থেকে হয়নি, কৃষক লয়েড ওলসনের কুঠার থেকে হয়েছিল। কিন্তু একটি মুন্ডু বিহীন মুরগি রীতিমত ঝড় তুলেছিল কলোরাডোর ফ্রুটা শহরের লয়েড ওলসেন ও তাঁর স্ত্রী ক্লারার মুরগির দোকানে। সময়টা ছিল ১৯৪৫-এর সেপ্টেম্বরের এক সকালে। কারণ সেই দিন ব্যবসার খাতিরে প্রায় গোটা চল্লিশেক মুরগী কেটেছিলেন লয়েড ওলসেন ও তার স্ত্রী ক্লারা। কিন্তু হঠাত্ই সেই ৪০ টি মুরগির মধ্যে মাত্র একটি মুরগি যার মন ডুবে গিয়েছিল তার পরেও নিজের প্রাণ বাঁচাতে রীতিমতো টলতে টলতে বহুদূর পৌঁছে গিয়েছিল। সেই হয়তো মুরগিটির প্রাণ এখনো আছে এইভেবে তাকে খাঁচা বন্দি করে নিশ্চিন্তে রাত্রে ঘুমাতে গিয়েছিলেন তারা। তবে হঠাত্ সকালবেলা উঠে দেখেন এখনো প্রাণা রয়েছে সেই মুরগিটির। বিষয়টি সত্যিই আশ্চর্যজনক। কার্যত এমন বিরল ঘটনা ঘটায় রীতিমতো রাতারাতি খবর ছড়িয়ে পড়ে গোটা শহরে। রীতিমতো খোঁজ পড়ে যায় সাংবাদিকদেরও। যার কারণে দোকানের মালিক লয়েড ওলসেন সেই মুরগির নতুন নামকরণ করেছিলেন। তার নাম দেওয়া হয়েছিল ‘মিরাক্ল মাইক’। রীতিমতো এই মহার্ঘ মুরগিটিকে কেন্দ্র করে একটি বিভিন্ন জায়গায় প্রদর্শনী শুরু হয়ে গিয়েছিল। অর্থাত্ যে মুরগির ভাগ্য ছিল অন্যের প্লেটে যাওয়ার সে রাতারাতি কোন সেলিব্রেটির থেকে কম ফেমাস হয়নি। তবে মুণ্ডুহীন এই মুরগি বেচেঁ ছিল প্রায় ১৮ মাস। যদি এর পরে হঠাত্ মৃত্যু হয় তার। তবে এই মুণ্ডুহীন মুরগি রহস্য জানতে রীতিমতো উদগ্রীব ছিল গোটা চিকিত্সক মহল। কারণ এই বিরল ঘটনা প্রায়ই ঘটে না বললেই চলে। সুতরাং মিরাকেল মাইকের পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছিল যখন লয়েড ওলসেন তার মুন্ডচ্ছেদ করেছিল তখন তখন তার একটা কান বাদ দিয়ে চোখ, ঠোঁট-সহ গোটা মাথাটাই কেটে বাদ চলে যায় ।যার কারণেই একটি মুরগির মস্তিষ্কের পেছনে থাকে তার মূল অংশ। যেখান থেকে শরীরের প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ সক্রিয় থাকে। মাইকের ক্ষেত্রও ঘটেছিল সেই ঘটনা। মাইকের মস্তিষ্কের এই অংশটাই তার শ্বাস-প্রশ্বাস, হৃদ্স্পন্দন, খিদে, হজম নিয়ন্ত্রণ করত । সময় মতো মাইকের ক্ষতর কাছে রক্তও জমাট বেঁধে গিয়েছিল, ফলে সে ভাবে রক্তক্ষরণও হয়নি । মাথা না থাকায় একটি ড্রপারে করে তরল খাবার ও জল সরাসরি খাদ্যনালিতে ঢেলে দেওয়া হত । এছাড়াও মুখ নোংরা হয়ে গেলে সেটি পরিষ্কার করার জন্য একটি সিরিঞ্জ ব্যবহার করা হতো। এই ভাবেই কাটছিল দিনগুলি। পরবর্তীতে একদিন পশ্চিম আমেরিকার ফিনিক্স শহরে প্রদর্শনীর শেষে একটি মোটেলে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন লয়েড দম্পতি ও মাইক । ঠিক সেই সময়ে খাদ্য গ্রহণ করতে গিয়ে হঠাত্ খাবার গলায় আটকে গিয়েছিল। এরপরই বিকট আওয়াজ করায় জেগে উঠেছিল দম্পতি। তবে ভাগ্যক্রমে সিরিঞ্জটি প্রদর্শনী হলেই ফেলে এসেছিল লয়েড ও তার স্ত্রী। সুতরাং গলার থেকে খাবার বের করতে না পারায় শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যু হয়েছিল মীরাকেল লয়েডের। যদিও মৃত্যু সংবাদটি প্রকাশ্যে আসতে দেয়নি দম্পতিরা। দীর্ঘদিন ধরে সকলের কাছে মিথ্যা কথা বলে গিয়েছেন তারা। কেউ জানতে চাইলেই বলা হয়েছিল মুরগিটিকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। সেই কারণেই মরে গিয়েও সকলের মাঝে দীর্ঘদিন বেঁচে ছিল মাইক। তার পর থেকে মাইকের স্মৃতিতে প্রতি বছর মে মাসে গোটা শহর জুড়ে পালন হয় ‘হেডলেস চিকেন ফেস্টিভ্যাল’ ।
More Stories
১৩ হাজার ডলারের বিনিময়ে কেনা এক টুকরো বিরানভূমি, যা পরিণত হলো প্রকৃতির স্বর্গে
কেন ব্যবহার করা হয় “ঘট” হিন্দু পূজায়?
মা দুর্গার মুখে উর্ণনাভ: মহামায়ার চিহ্ন