October 5, 2025

বারাণসীর মণিকর্ণিকা ঘাট: অনন্ত চিতার আলোয় মোক্ষের সন্ধান

সোমালিয়া ওয়েব নিউজঃ প্রাচীন নগরী কাশীর গঙ্গাতীরে অবস্থিত মণিকর্ণিকা ঘাটে প্রতিদিনই দেখা যায় জন্ম-মৃত্যুর পারম্পরিক ছায়াপাত। হিন্দু ধর্মের বিশ্বাস অনুসারে, এই পবিত্র ঘাটে চিতায় দাহ হওয়া মানে আত্মার চিরমুক্তি — পুনর্জন্মের চক্র থেকে চিরবিদায়। হাজার হাজার বছরের ইতিহাস, পুরাণ ও সংস্কৃতির সাক্ষ্য বহন করে চলেছে এই স্থান।

স্থানীয় পুরোহিতদের মতে, এখানে প্রতিদিন প্রায় ২০০টির বেশি শবদাহ সম্পন্ন হয়। চিতার আগুন কখনও নিভে না — দিনের পর দিন, রাতের পর রাত, দগ্ধ হয় মানবদেহ, আর গঙ্গার শান্ত ঢেউয়ে ধুয়ে যায় পার্থিব বন্ধন।

পুরাণ মতে, ভগবান শিব ও মা পার্বতী এই স্থানে স্নান করতে এসে এক সময় দেবীর কানের দুল (মণিকর্ণ) ফেলে দেন। সেই থেকেই ঘাটের নাম “মণিকর্ণিকা”। ধর্মপ্রাণ হিন্দুদের বিশ্বাস, যিনি এখানে দেহত্যাগ করেন, তিনি মোক্ষ লাভ করেন।

এই ঘাট শুধু ধর্মীয় স্থান নয়, ইতিহাস ও সংস্কৃতির এক জীবন্ত দলিল। কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. শশীকান্ত ত্রিপাঠী বলেন, “মণিকর্ণিকা কেবলমাত্র এক শশ্মান নয়; এটি একটি আধ্যাত্মিক চেতনার প্রতীক, যেখানে মৃত্যুই শেষ নয় বরং নতুন পথের সূচনা।”

তবে, অতিরিক্ত জনসমাগম ও শবদাহের ধোঁয়া ঘাটের আশপাশে পরিবেশ দূষণও সৃষ্টি করছে বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা। এ নিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ গ্রহণের কথাও জানানো হয়েছে।

পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে পর্যটক ও তীর্থযাত্রীরা প্রতিনিয়ত আসছেন এই ঘাটে। কেউ শেষকৃত্যের জন্য, কেউ বা এই জীবনের ভাঙাগড়ার দর্শন নিজের চোখে দেখার জন্য।

মণিকর্ণিকার এই চিরন্তন আগুন যেন কেবল দেহ দগ্ধ করে না, বরং মানুষের মনের অন্ধকারও পুড়িয়ে দেয় — মনে করিয়ে দেয়, সবকিছু শেষ হলেও আত্মা অনশ্বর।

Loading