October 5, 2025

অসমে শিল্পী জুবিন গর্গের প্রয়াণে শোকের জোয়ার, রাজনীতি ও ভেদাভেদ ছাপিয়ে একত্রিত জনসমুদ্র

সোমালিয়া ওয়েব নিউজঃ অসমে যেন এক স্বপ্নভঙ্গের দিন। জনপ্রিয় গায়ক ও সমাজকর্মী জুবিন গর্গের প্রয়াণে রাজপথে নেমে এসেছে হাজার হাজার মানুষ। শিল্পীর বিদায়ে রাজ্যজুড়ে নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া। রাজনৈতিক বিভাজন, ধর্মীয় ভেদাভেদ—সব কিছু মুছে গিয়ে এক কণ্ঠে মানুষ বলছে, “জুবিন আমাদেরই।”

অসম সরকার তাঁর সম্মানে রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে। শেষকৃত্য না হওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে রাজ্যের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষা। ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ রেখেছেন। বন্ধ হয়েছে ফুড ডেলিভারি সার্ভিসও। ক্রিকেট দল থেকে সাংস্কৃতিক সংগঠন—সব ক্ষেত্র থেকেই শোকপ্রকাশ এসেছে। রাজনৈতিক দলগুলিও ভেদাভেদ ভুলে একসঙ্গে শোক জানিয়েছে।

অবিশ্বাস্য আবেগঘন মুহূর্তের সাক্ষী হয়েছে অসম : শিল্পীর কফিন কাঁধে তুলে নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী নিজে, এবং তাঁরই একটি গান গেয়ে স্মৃতিকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। ডিজিপি রাস্তায় নেমে ভিড় সামলাচ্ছেন, সাধারণ মানুষের সঙ্গে কাঁদছেন পুলিশকর্মীরাও।

কেন এই ব্যতিক্রমী ভালোবাসা? ,জানাগেছে তিনি শুধু গায়ক নন, জুবিন ছিলেন মানবিক মানুষ। নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ানো, অভাবীদের সাহায্য, গাছ লাগানো, আহত পশুপাখিকে ঘরে এনে চিকিৎসা—এসব ছিল তাঁর জীবনের অঙ্গ। খ্যাতি পেয়ে কখনও রাজ্য ছেড়ে যাননি। বরং অসমিয়া সিনেমার সংকটে তিনি নতুন প্রাণসঞ্চার করেছিলেন।

লেখক সমর দেব জানিয়েছেন, ব্রাহ্মণ সন্তান হয়েও তিনি পৈতে ত্যাগ করেছিলেন, ছিলেন জাতপাত ও ধর্ম-বর্ণের ঊর্ধ্বে। শাসক, প্রশাসন, ব্যবসায়ী—কাউকেই ছাড়েননি সমালোচনায়। সিএএ ও এনআরসি বিরোধী আন্দোলনে সরব হয়ে উঠেছিলেন, প্রয়োজনমতো সরকারের সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনাও করেছেন।

গায়ক হিসেবে ‘ইয়া আলী’, ‘বোঝেনা সে বোঝেনা’ কিংবা অসমিয়া ‘জোনাক জোনাক’-এর মতো গান তাঁকে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে দিয়েছিল। কিন্তু শিল্পীসত্তার বাইরেও সমাজসেবী হিসেবে তিনি সাধারণ মানুষের হৃদয়ে অমলিন হয়ে থাকবেন।

এই প্রয়াণ নতুন করে চেনালো আসামের মানুষকেও। শিল্পীর বিদায়ে ভেদাভেদ ভুলে গোটা রাজ্যের ঐক্যবদ্ধ শোক এক বিরল দৃষ্টান্ত।

পশ্চিমবঙ্গে শিল্পী প্রয়াণে যেখানে বিভাজন, সমালোচনা, কিংবা দলীয় দৃষ্টিকোণ মুখ্য হয়ে ওঠে, সেখানে অসম দেখাল অন্য এক চিত্র। মানুষ প্রমাণ করল, সত্যিকারের শিল্পীর স্থান রাজনীতির ঊর্ধ্বে, ভেদাভেদের বাইরে।

জুবিন গর্গ নাকি বলেছিলেন, তাঁর মৃত্যুর পর আসাম কাঁদবে সাত দিন ধরে। বাস্তবে দেখা গেল, কেবল সাত দিন নয়, এই কান্না গড়িয়ে যাবে আরও বহুদিন, কারণ শিল্পী বেঁচে থাকেন মানুষের ভালোবাসাতেই।

Loading