সোমালিয়া ওয়েব নিউজঃ দুর্গাপূজা হোক বা লক্ষ্মী, সরস্বতী কিংবা মনসা পূজা—প্রতিটি পূজার অন্যতম আবশ্যিক অঙ্গ হলো ঘট। প্রতিমা থাকুক বা না-ই থাকুক, পূজা কখনোই ঘট ছাড়া পূর্ণ হয় না। প্রশ্ন জাগে, কেন ঘট এত জরুরি?
পুরোহিত ও শাস্ত্রজ্ঞদের মতে, ঘট কোনো নির্দিষ্ট দেবতার প্রতিমা নয়। বরং এটি ভগবানের নিরাকার স্বরূপের প্রতীক। যেমন সাকার প্রতিমার মাধ্যমে ভক্তরা ভগবানের রূপকে উপলব্ধি করেন, তেমনই নিরাকার চেতনার প্রতিফলন ঘট স্থাপনের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। তাই প্রায় সব পূজোয় ঘট স্থাপন একান্ত আবশ্যক।
ঘটের উপাদান ও তার প্রতীকী ব্যাখ্যা:
- পঞ্চগুড়ি: (চাল, ডাল, নুন, সরিষা, হরিতকী ইত্যাদি) → প্রতীক পঞ্চমহাভূত (ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ, ব্যোম)।
- মৃত্তিকা/পিঠ: এর ওপর ভিত্তি তৈরি হয়—যা পৃথিবীর প্রতীক।
- পঞ্চশস্য: প্রতীক মানুষের পাঁচটি দুর্বলতা—কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মাৎসর্য।
- ঘট (কলস): প্রতীক মানবদেহ।
- পঞ্চরত্ন: প্রতীক পঞ্চইন্দ্রিয় (চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, ত্বক, জিহ্বা)।
- জল: প্রতীক দেহরস বা রক্ত।
- পঞ্চপল্লব: প্রতীক পাঁচ বায়ু (প্রাণ, আপান, উদান, সমান, ব্যান)।
- নারিকেল: প্রতীক মানবমুখ—যেখানে চোখ, মুখ, নাকের আভাস মেলে।
- বস্ত্র (গামছা/পোশাক): প্রতীক দেহের আচ্ছাদন।
- কান্ডকাঠি: প্রতীক চার বেদ।
আসলে, ঘট হলো মানুষের শরীরের প্রতিরূপ। জীবনীশক্তি, ইন্দ্রিয়, দেহরস, বায়ুপ্রবাহ—সব মিলেই মানুষ সম্পূর্ণ। তাই ঘট স্থাপন মানে দেহের ভেতরে ঈশ্বরচেতনার প্রতীকী প্রতিস্থাপন।

More Stories
১৩ হাজার ডলারের বিনিময়ে কেনা এক টুকরো বিরানভূমি, যা পরিণত হলো প্রকৃতির স্বর্গে
মা দুর্গার মুখে উর্ণনাভ: মহামায়ার চিহ্ন
মা দুর্গার দশ হাত ও দশ অস্ত্রের প্রতীকী তাৎপর্য