সোমালিয়া ওয়েব নিউজঃ বীরভূম জেলার নানুর — বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক গৌরবময় স্থান। এই নানুরেই অবস্থিত কবি চণ্ডীদাসের মন্দির, যা আজও ভারতের পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বিভাগের সংরক্ষিত একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন। তবে দুঃখের বিষয়, এই স্থানের গৌরব ও ঐতিহ্য এখনো খুব একটা পরিচিত নয় সাধারণ মানুষের কাছে।
কে ছিলেন চণ্ডীদাস?
বাংলা সাহিত্যে একাধিক চণ্ডীদাসের উল্লেখ পাওয়া যায়। কেউ বলেন, বৈষ্ণব পদাবলির রচয়িতা চণ্ডীদাস ও শ্রীকৃষ্ণকীর্তন-এর চণ্ডীদাস একই ব্যক্তি; আবার কেউ বলেন, তাঁরা দুই ভিন্ন মানুষ — একজন বাঁকুড়ার ছাতনার, আরেকজন বীরভূমের নানুরের। ইতিহাসবিদদের মতে, ১৩৭০ খ্রিস্টাব্দে নানুরেই চণ্ডীদাসের জন্ম, পদবি ছিল ‘বাড়ুজ্জে’ বা ‘বন্দ্যোপাধ্যায়’। দারিদ্র্যের কারণে পরে তাঁর পরিবার চলে যায় ছাতনায়, যেখানে পণ্ডিতগিরি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন তিনি।
চণ্ডীদাস ও রামীর প্রেমকাহিনি
চণ্ডীদাস ছিলেন বাশুলীদেবীর মন্দিরের পুরোহিত। সেখানেই তাঁর জীবনে আসে এক নতুন অধ্যায় — মন্দিরে দেবদাসী হিসেবে আসেন রজকিনী রামী। ধীরে ধীরে দু’জনের মধ্যে গড়ে ওঠে গভীর সম্পর্ক। সমাজ তখন এই প্রেমকে মেনে নিতে পারেনি। প্রচলিত কাহিনি অনুযায়ী, স্থানীয় মানুষের হাতে বা পাঠান সুলতানের রোষে চণ্ডীদাস ও রামীর করুণ মৃত্যু ঘটে। তাঁদের স্মৃতির নিদর্শন হিসেবে আজও নানুরে রয়েছে সেই মাটির ঢিবি, যেখানে তাঁদের দেহাবশেষ সমাধিস্থ করা হয়েছিল বলে বিশ্বাস।
বর্তমান নানুরে যা দেখা যায়
বর্তমানে এই স্থানে রয়েছে বাশুলীদেবীর মন্দির, যা এক শৈল্পিক টেরাকোটা আটচালা স্থাপত্যে নির্মিত। পাশে রয়েছে বিশালাক্ষী মন্দির, দুর্গা ও কালীপূজার ঠাকুরদালান, এবং অন্যান্য প্রাচীন দেবালয়। ঐতিহাসিক দৃষ্টিতে আজও সংরক্ষিত আছে রজকিনী রামীর ব্যবহৃত কাপড় কাচার পাটাটি, যা রক্ষাকালী মন্দির সংলগ্ন এলাকায় দেখা যায়।
কীভাবে পৌঁছাবেন?
হাওড়া থেকে ট্রেনে আহমদপুর জংশন বা কীর্ণাহার স্টেশনে পৌঁছে সেখান থেকে স্থানীয় যানবাহনে নানুর আসা যায়। এছাড়া বোলপুর বা বর্ধমান থেকেও বাসযোগে সহজে পৌঁছানো সম্ভব। থানার কাছেই অবস্থিত চণ্ডীদাসের এই ঐতিহাসিক মন্দির।
চণ্ডীদাসের প্রেম, তাঁর কাব্য ও মানবতাবোধ আজও বাংলার সাহিত্য ও সংস্কৃতির অমর অধ্যায়।

![]()

More Stories
পাঁচ লক্ষ কণ্ঠে গীতা পাঠের ডাক ব্রিগেডে, রাজ্যপালকে আমন্ত্রণ সনাতন সংস্কৃতি সংসদের
বিধানসভা নির্বাচনের আগে ইভিএম–ভিভিপ্যাটের এফএলসি শুরু রাজ্যে, চলবে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত
হাতুড়ে ডাক্তারি বনাম পাশ করা ডাক্তার—অরাজকতার জঞ্জালে বাংলার স্বাস্থ্যব্যবস্থা