সোমালিয়া ওয়েব নিউজ : সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা দুবাইয়ের ভিডিওগুলিতে দুবাই, আবু ধাবি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলিতে রাস্তাগুলিতে ব্যাপক জলাবদ্ধতা দেখা যাচ্ছে, গাড়ি এবং অন্যান্য যানবাহনে যাত্রীদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য দুর্ভোগ পোহাতে হয়। দুবাই মেট্রো স্টেশনও প্লাবিত হতে দেখা গেছে। পাশাপাশি শপিংমলও তলিয়ে গেছে। কোথাও মাহসড়ক ভেঙে বিশাল গর্ত তৈরি হয়েছে। সেইসঙ্গে উড়োজাহাজের যাত্রা বাতিলের পাশাপাশি মেট্রো স্টেশনের কার্যক্রমও থেমে গেছে। খালিজ টাইমস জানিয়েছে, ১৯৪৯ সালের পর থেকে এমন বৃষ্টিপাত দেখেনি মরুভূমির দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের মানুষ। সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত মুষলধারায় বৃষ্টিপাত আগের সব রেকর্ড ছাপিয়ে গেছে। বিশ্ব ব্যাংকের ক্লাইমেট চেঞ্জ নলেজ পোর্টালের তথ্য বলছে, আরব আমিরাতে বছরে গড়ে ১৪০ থেকে ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। সেখানে মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশটির আল আইন শহরের খাতম আল শাকলা এলাকায় ২৪ ঘণ্টার কম সময়ে ২৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া কর্তৃপক্ষ। দুবাই আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে বছরে গড়ে ৯৪.৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। কিন্তু ২৪ ঘণ্টাতেই দুবাইয়ে ১৪২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। মরুভূমির দেশ আরব আমিরাতে ভারী বৃষ্টিপতের ঘটনা খুবই ব্যতিক্রম। দেশটির ন্যাশনাল সেন্টার অব মেটিওরোলজি জানিয়েছে, একদিনের হিসাবেই ৫০টিরও বেশি আবহাওয়া স্টেশন ১০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। এর মধ্যে চারটি স্টেশন রেকর্ড করেছে ২০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত। সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার রাত ৯টা পর্যন্ত তুমুল বৃষ্টিপাতে দুবাইয়ের পথঘাট ও বিমানবন্দরের ট্যাক্সি চলাচলের পথ তলিয়ে যায়। বৃষ্টির কারণে বিমান চলাচল বন্ধ রাখতে হয়। বিমাবন্দরে আসা যাত্রীদেরও চেক-ইন প্রক্রিয়াও স্থগিত রাখা হয়। সেসব ঘটনার ছবি ও ভিডিওতে দেখা যায়, দুবাইয়ের জেবেল আলী মেট্রো স্টেশনের ভেতরে আটকে আছেন দুই শতাধিক যাত্রী। স্টেশনের ভেতরে ও সিঁড়িতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন তারা। যাত্রীদের মধ্যে মোহাম্মদ কাশান নামে এক ব্যক্তি বৃষ্টিপাতের কারণে আট ঘণ্টা ঘরে ধরে ওই স্টেশনে আটকে ছিলেন। খালিজ টাইমসকে তিনি বলেন, “মেট্রো সার্ভিস কখন পুনরায় শুরু হবে, সেটি এখনো স্পষ্ট নয়। জেবেল আলীতে এসেছিলাম কাজের জন্য। বুর দুবাইয়ে বাড়ি ফেরার ট্রেন ধরার আশায় ছিলাম। কিন্তু আটকে গেলাম। কোনো ট্যাক্সি নেই আশেপাশে।”আরব আমিরাতের পুলিশ বলছে, বৃষ্টিপাতের কারণে রাস আল খাইমা শহরের সড়কে একটি গাড়ি ভেসে গিয়ে ৪০ বছর বয়সী এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। শারজাহ ও দুবাইয়ের বিভিন্ন এলাকার আবাসিক ভবনেও পানি ঢুকেছে। এতে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। দেশজুড়ে ব্যাপক বৃষ্টিপাতের কারণে শহরে বন্যার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ৩টা থেকে শারজাহর আল মাজাজ এলাকার কিছু আবাসিক ভবনে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। লিফটেও বৃষ্টির পানি ঢুকে পড়ে। উম্মে আল আইমান নামে শারজাহর এক বাসিন্দা খালিজ টাইমসকে বলেন, “রাত ৩টা থেকে কোনো বিদ্যুৎ নেই আমাদের ভবনে। এই মুহূর্তে ইন্টারনেট সংযোগও নেই। ভাগ্যিস বিদ্যুৎ চলে যাবার পর এক বালতি পানি ধরে রেখেছিলাম। এখন পানির সংযোগও নেই।”পুরো এলাকা তলিয়ে যাওয়ার কারণে কোথাও বেরও হতে পারছি না। আগে বিদ্যুৎ না থাকলে কোনো শপিং মল কিংবা গাড়িতে অন্য কোথাও যেতাম। এখন সে সুযোগও নেই। ৫০ মিটার দূরেই একটি হাইপার মার্কেট আছে, কিন্তু সেখানেও যেতে পারছি না। গোটা সড়ক তলিয়ে গেছে। এমনকি ফুটপাতও দেখতে পাচ্ছি না।” সড়ক ডুবে যাওয়ার কারণে আরব আমিরাতের বিভিন্ন এলাকায় বাস সার্ভিস বন্ধ হয়ে গেছে। আল আইন শহরের আল কুয়া এলাকায় পানির স্রোতে মহাসড়ক ভেঙে বিশাল গর্ত তৈরি হয়েছে। দুবাই রোডস অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক্সে বলেছে, বিরূপ আবহাওয়া পরিস্থিতির কারণে আবু হাইল স্টেশন থেকে গোল্ড সোক স্টেশন পর্যন্ত মেট্রো রেল পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে। যাত্রীদের জন্য বাস সার্ভিসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দেশটির কেন্দ্রীয় আবহাওয়া বিভাগ ২৪ ঘন্টার সতর্কবার্তা জারি করেছে।
![]()

More Stories
বিদ্যুতের খুঁটি নয়, শিল্পকর্ম! অস্ট্রিয়ার নয়া উদ্ভাবনে বিশ্ব স্তম্ভিত
জোহানেসবার্গে জি–২০ শীর্ষ সম্মেলনে মোদীর ছ’দফা নয়া উদ্যোগ
অশ্বিনীর বরিশাল