October 5, 2025

অভিনেতা পাহাড়ি সান্যাল

সোমালিয়া ওয়েব নিউজঃ পোশাকি নাম নগেন্দ্রনাথ, একাধারে অভিনেতা, গায়ক এবং সঙ্গীতজ্ঞ ছিলেন। তাঁর জীবনের ইতিহাস সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক। ছোটবেলা থেকেই সঙ্গীতের প্রতি তাঁর গভীর আকর্ষণ ছিল। তিনি এমন এক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন যেখানে সঙ্গীতের প্রতি ভালোবাসা ছিল। তাঁর বাবা ছিলেন ব্রিটিশ ভারতের সেনাবাহিনীর একাউন্ট্যান্ট, এবং দার্জিলিংয়ের পাহাড়ি অঞ্চলে পোস্টিং থাকার কারণে তাঁর নাম রাখা হয় **নগেন্দ্রনাথ**, অর্থাৎ “পাহাড়ের দেবতা”। আর ডাকনাম হিসেবে রাখা হয়েছিল **পাহাড়ি**। এই ডাকনামেই পরে তিনি পরিচিতি লাভ করেন। পাহাড়ির জীবনে অনেক দুঃখ ছিল। মাত্র দেড় বছর বয়সে মাকে হারানোর পর, দশ বছর বয়সে বাবাও মারা যান। এরপর তাঁর বড়দা তাঁকে পড়াশোনায় উৎসাহিত করে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠান। কিন্তু সঙ্গীতের প্রতি অদম্য আকর্ষণের কারণে তিনি পড়াশোনা শেষ না করে, লক্ষ্ণৌর **ভাতখন্ডে মিউজিক ইনস্টিটিউট**ে ক্লাসিকাল সঙ্গীতের তালিম নিতে চলে যান। ১৯৩৩ সালে, চলচ্চিত্রের জগতে পা রাখেন। তখন কলকাতা ছিল ভারতীয় সিনেমার প্রাণকেন্দ্র। প্রথম দিকে তিনি **নিউ থিয়েটার্স**-এর সাথে যুক্ত হন এবং সেখানে তাঁর অভিনয় জীবনের সূচনা হয়। **প্রেমাঙ্কুর আতর্থী**-এর পরিচালনায় **’ইহুদি কি লেড়কি’** ছবিতে তিনি প্রথম অভিনয় করেন। তাঁর গাওয়া গানগুলোও সমান জনপ্রিয় ছিল, যেমন **‘কেন পরাণ হল বাঁধনহারা’** গানটি ছিল প্লেব্যাক সঙ্গীতের যাত্রার অন্যতম মাইলফলক। পাহাড়ির অভিনয় জীবনে প্রায় দেড়শটিরও বেশি ছবিতে তিনি কাজ করেন। তাঁর অভিনীত চরিত্রগুলো ছিল অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়—গ্রাম্য মানুষ থেকে শুরু করে জাঁদরেল বাবাও, ডাক্তার কিংবা বিচারক—সব রকমের চরিত্রে তিনি পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। তাঁর অসামান্য অভিনয় ক্ষমতা এবং ভাষাজ্ঞান (বাংলা, হিন্দি, উর্দু, ইংরেজি) তাঁকে এক অনন্য অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। **সত্যজিৎ রায়ের** **‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’** এবং **‘অরণ্যের দিনরাত্রি’** ছবিতে তাঁর অভিনয় আজও স্মরণীয়। তিনি **‘অরণ্যের দিনরাত্রি’** ছবিতে গানও গেয়েছিলেন, যা ছিল তাঁর জীবনের শেষ গান। সাংস্কৃতিক জগতে পাহাড়ি সান্যালের অবদান ছিল ব্যাপক। কেবল চলচ্চিত্র নয়, তিনি **রঙ্গমঞ্চে**ও দারুণ সাফল্য অর্জন করেছিলেন, বিশেষ করে **‘বিশ্বরূপা’** নাটকে তাঁর অভিনয় আজও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়। ১৯৭৪ সালের **১০ ফেব্রুয়ারি** তিনি প্রয়াত হন, কিন্তু তাঁর কাজ এবং স্মৃতি আজও বাঙালি সংস্কৃতির অমূল্য অংশ হয়ে রয়েছে।

Loading