December 1, 2025

“বাংলার ঝোপঝাড়ের জ্বর – স্ক্রাব টাইফাস”

সোমালিয়া ওয়েব নিউজঃ বাংলার গ্রামেগঞ্জে অকালমৃত্যুর সময় হল জুলাই থেকে নভেম্বর, তবে যেকোনো সময়েই হতে পারে।

সাপের কামড়, ইনফ্লুয়েঞ্জা, বাচ্চাদের সর্দিজ্বর (RSV আর অ্যাডিনো), ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, বর্ষার জ্বর (লেপটো) আর অন্যতম ভয়ংকর এই ঝোপঝাড়ের জ্বর স্ক্রাব টাইফাস।

 স্ক্রাব টাইফাস হল একটি জ্বরজনিত সংক্রামক রোগ। এটি ট্রম্বিকিউলিড মাইট বা চিগারের কামড়ে সংক্রমিত হয়। এই রোগে জ্বর, ফুসকুড়ি, এসচার, প্রাথমিক ক্ষত, লিম্ফ্যাডেনোপ্যাথি ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়। 

স্ক্রাব টাইফাসের বৈশিষ্ট্য:

  • এটি ওরিয়েন্টিয়া সুতসুগামুশি দ্বারা সৃষ্ট। 
  • এটি পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং উত্তর অস্ট্রেলিয়ায় স্থানীয়। 
  • দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এবং কোরিয়ান ও ভিয়েতনাম সংঘাতের সময় সামরিক কর্মীদের মধ্যে এই রোগের প্রাদুর্ভাব ছিল। 
  • এই রোগের জীবাণু এঁটুলি পোকার মতো দেখতে ট্রম্বিকিউলিড মাইটস বা টিক-এর মতো পরজীবী পোকার কামড়ে মানবদেহে ছড়ায়। 
  • এই রোগের চিকিৎসার জন্য ডক্সিসাইক্লিন অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। 

স্ক্রাব টাইফাসের লক্ষণ: 

জ্বর, ফুসকুড়ি, এসচার, প্রাথমিক ক্ষত, লিম্ফ্যাডেনোপ্যাথি, খিঁচুনির মতো উপসর্গ.


স্ক্রাব টাইফাস টেস্ট কী? –স্ক্রাব টাইফাস আইজিএম (ইমিউনোগ্লোবুলিন) পরীক্ষার আদেশ দেওয়া হয় যখন একজন ব্যক্তি স্ক্রাব টাইফাসের লক্ষণগুলি যেমন মাথাব্যথা, জ্বর, পেশীতে ব্যথা বা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল লক্ষণগুলি প্রদর্শন করে। পরীক্ষাটি স্ক্রাব টাইফাস সংক্রমণের প্রতিক্রিয়া হিসাবে শরীরে IgM এর উপস্থিতি সনাক্ত করে।

বাবা-মা আর দুই দিদিকে ফেলে রেখে চলে গেলো নদীয়ার ১৩ বছরের ফুটফুটে মেয়ে বর্ণিকা মণ্ডল। চলে গেল ১০ দিনের জ্বরে। চলে গেল সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য বাংলার ঝোপঝাড়ের জ্বরে। ঠিক সময়মতো সামান্য, সস্তা ওষুধ – doxycycline এর দ্বারা সম্পূর্ণ নিরময়যোগ্য হলেও চিকিত্সায় দেরী হলে মারাত্বক রূপ ধরতে পারে এই ঝোপঝাড়ের জ্বর। দূর্গাপুজোতে দুই দিদি আর বন্ধুদের সাথে হইহই করে মোবাইলে সেল্ফি তুলেছে নদীয়ার গাঁয়ের মেয়ে বর্ণিকা। গত দশদিন ধরে জ্বর, মাথাব্যথা, গায়ে-হাতেপায়ে ব্যাথা, একটু একটু করে খারাপ হতে হতে বগুলা হাসপাতাল হয়ে কল্যাণী জওহরলাল হাসপাতাল হয়ে যখন AIIMS Kalyani তে পৌঁছল – তখন বর্ণিকা নিস্তেজ, অচেতন। তিনদিন ভেন্টিলেটরে রেখে দিবারাত্র যমে-মানুষে টানাটানি করলেন Rohit Bhowmick ও তাঁর বন্ধু, সহকর্মী আর ছাত্রছাত্রীরা Suptika Halder, Samya Mitra ও অন্যান্যরা। ধরে রাখতে পারলেন না বর্ণিকাকে।

এই ঝোপঝাড়ের জ্বরে মৃত্যুর কারণ মূলত: তিনটে – ফুসফুসে আক্রমণ (ARDS), মস্তিষ্কে আক্রমণ (encephalitis), এবং সারা শরীরে অতিমাত্রায় প্রদাহ তৈরি করা দেহরসের ঝড় (cytokine storm)।

বাংলার গ্রামে গ্রামে এই বার্তা রটে যাওয়া দরকার –

জুলাই থেকে নভেম্বর – জ্বর দুদিনে না কমলেই হাসপাতালে দৌড়তে হবে।

গ্রামবাংলার ডাক্তারবাবুদের সচেতন হতে হবে। প্রথমদিকে জ্বরের সাথে সর্দিকাশি না থাকলেই পরীক্ষায় পাঠাতে হবে, এবং সর্দি কাশি বা anatomically localizable কারণ ছাড়া জ্বর বেশি থাকলেই দেরী না করে জ্বর শুরু থেকে দু-তিন দিনের মাথায় ceftriaxone আর doxycycline (টাইফয়েড, লেপটো আর স্ক্রাব টাইফাস এর কথা মাথায় রেখে) শুরু করে দিতে হবে।

বাংলার সুজলা সুফলা বর্ষা আর অকালমৃত্যু না ডেকে আনুক।

(নীচের ছবিটা বর্ণিকার বুকের এক্স-রে – জ্বর শুরু থেকে নয়দিনের মাথায় তোলা – দুই ফুসফুস ভর্তি সাদা সাদা ছোপ দেখাচ্ছে ঝোপঝাড়ের জ্বর কিভাবে ভয়ানক ARDS করতে পারে)

From Dr Sayantan banerjee

Loading