সোমালিয়া ওয়েব নিউজঃ
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অমর সৃষ্টি দেবদাস কেবল প্রেমকাহিনি নয়, এটি এক মানবিক, মানসিক ও সামাজিক দ্বন্দ্বের প্রতিচ্ছবি। এই উপন্যাসে পার্বতী বা ‘পারো’ চরিত্রটি আজও নারীচরিত্রের জাগ্রত শক্তির এক নিদর্শন। সমাজের চোখে সে একজন পরিত্যক্ত প্রেমিকা, কিন্তু অন্তর্নিহিতভাবে সে এক মানসিক বিজয়িনী।
পার্বতী:একজন বাস্তববাদী নারী
পার্বতী কষ্ট পেয়েছিল—এ কথা অস্বীকার করা যায় না। ভালোবেসেছিল সে, গভীরভাবে। তবু সে ভেঙে পড়েনি।
তার চরিত্রে আমরা দেখতে পাই—
- বাস্তবতাবোধ: প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে সে আত্মধ্বংসের পথ বেছে নেয়নি। বরং সমাজ ও সংসারের কঠিন কাঠামোর সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে।
- সহনশীলতা: দেবদাস যখন ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, পার্বতী তখন নিজের মনকে স্থির রাখতে পেরেছে। নারীশক্তির এই সহনশীলতা বহু যুগ ধরেই সমাজে ভারসাম্য রক্ষা করে এসেছে।
- নীরব দৃঢ়তা: তার নীরবতা কোনো পরাজয় নয়, বরং নিজেকে নতুন করে প্রতিষ্ঠিত করার এক সঙ্কেত।
ভালোবাসা মানেই দুর্বলতা নয়
পার্বতীর ভালোবাসা আবেগে ভরা হলেও তা ছিল আত্মমর্যাদার সীমার মধ্যে।
- সে জানত, কান্না বা অসুস্থতায় দেবদাস ফিরবে না।
- সে বুঝেছিল, নিজের প্রতি সম্মান বজায় রেখেই প্রেমকে মূল্য দিতে হয়।
- “জ্বরটুকু অব্দি আসিল না”—এই বাক্য শুধু শরীরের অবস্থা নয়, এক মানসিক অবস্থার পরিচয় । দেবদাস অসহায় হয়ে পড়লেও পার্বতী রয়ে গিয়েছিল সংহত, স্থির ও বিবেচনাপ্রসূত।
মানসিক শক্তি: নারীর নিরব সিংহত্ব
নারীর মানসিক শক্তি প্রায়শই সমাজে আড়ালেই থেকে যায়। দেবদাসের মতো পুরুষ যেখানে আত্মবিনাশকে প্রেমের পরিণতি মনে করে, সেখানে পার্বতীর মতো নারী সম্ভ্রম রক্ষা করেই প্রেমকে জীবনের গভীরে ধারণ করে।
পার্বতী জানত:
- সম্পর্ক না থাকলেও সম্মান থাকতে পারে।
- প্রত্যাখ্যাত হলেও ভেঙে না পড়ে নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করে তোলা যায়।
পার্বতী জয়ী হয়েছিল—কোনো ঢাক-ঢোল না পিটিয়ে, প্রেমের নামে আত্মবিসর্জন না দিয়ে, নিজেকে সম্মান করে।
তার এই মানসিক দৃঢ়তা শুধু সাহিত্যের গণ্ডিতে নয়, বাস্তব জীবনেও এক উদাহরণ হয়ে রয়ে গেছে।
“ভালোবাসা যদি আত্মসম্মান হারিয়ে দেয়, তবে তা প্রেম নয়;
আর যদি ভালোবাসা শক্তি জোগায়, তবে তা নারীসুলভ নয়, এক সর্বজনীন মানবিক শক্তি।”

More Stories
হরিচরণ
আজ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিন
আজ তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মবার্ষিকী পালিত হচ্ছে