সোমালিয়া ওয়েব নিউজঃ বিপ্লবী ইন্দুভূষণ রায় (১৮৯০-১৯১২) ছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন বিপ্লবী। তিনি চন্দননগরের মেয়রের উপর বোমা হামলার সাথে জড়িত ছিলেন এবং আলীপুর ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত হন, যার ফলস্বরূপ তাকে আন্দামানে নির্বাসনে পাঠানো হয়। ১৯০৮ সালের ১১ এপ্রিল তিনি চন্দননগরের মেয়রের উপর বোমা হামলার চেষ্টা করেন। এর ফলস্বরূপ, ২ মে তিনি আলীপুর ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার হন। এই মামলায় তাকে দ্বীপান্তরিত করা হয় এবং আন্দামানের সেলুলার জেলে পাঠানো হয়। সেখানে তিনি ব্রিটিশ পুলিশের নির্মম অত্যাচারের শিকার হন এবং ২৯ এপ্রিল, ১৯১২ সালে আত্মহত্যা করেন।
আন্দামানের কুখ্যাত সেলুলার জেল। ব্রিটিশ শাসনের নিষ্ঠুরতার এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। এখানেই মানবতার সব সীমা অতিক্রম করে মৃত্যু মুখে ঠেলে দেওয়া হল এক তরুণ বিপ্লবীকে—ইন্দুভূষণ রায়। বয়স মাত্র আঠারো।
জেলের জীবনের এক ভয়ংকর অধ্যায় শুরু হয় তাঁর জন্য, যখন তাকে জঙ্গলের মধ্যে আঠা–যুক্ত গাছ থেকে আঁশ বের করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। গাছের আঠার বিষে ইন্দুর দু’হাতে ভয়াবহ ঘা দেখা দেয়। সেই দগদগে, বিষাক্ত ঘা থেকে ব্যথায় কাতর ইন্দু একদিন জেলরকে কাতর কণ্ঠে বলেছিল—”আমার হাতে ঘা, আমি ভাত খেতে পারি না, অনুগ্রহ করে অন্য কোনও কাজ দিন।”
কিন্তু জেলর ছিলেন নির্দয়। তিনি একবারও ইন্দুর হাতের দিকে তাকালেন না। শুধু বললেন—”বাঁ হাত দিয়ে খাও।” ইন্দুর আকুতি অব্যাহত, “আমার দুই হাতেই ঘা, দয়া করে যদ্দিন না সারছে অন্য কাজ দিন।” কিন্তু মানবিকতা যেন সে জেলের চার দেওয়ালে জায়গা পায়নি।
পরদিন ইন্দুকে নির্দেশ দেওয়া হয় ঘানি টানার। শরীরে অল্প একটু শক্তিও নেই, হাতের ঘায়ে যন্ত্রণায় কাতর, ভাত গলায় নামে না—সেই অবস্থায় ঘানি টানতে বলা হল তাঁকে। অসহায় ইন্দু আরও একবার চেষ্টা করলেন বোঝাতে, বললেন, “আমি ঘানি টানতে পারব না, আমি মরেই যাব স্যার।” কিন্তু কর্ণপাত করেনি ব্রিটিশ জেলর। তাঁর ঠান্ডা দৃষ্টি আর আদেশই ছিল শেষ কথা।
পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, বারংবার অনুরোধ সত্ত্বেও ইন্দুকে জেলের বাইরে জঙ্গলে পাঠানো হয় গাছের আঁশ ছাড়াতে। যখন ইন্দু অনুরোধ করেন তাঁকে জেলের ভিতরে কাজ দিতে, তখন তাঁর হাত-পায়ে শিকল পরিয়ে ভিতরে নেওয়া হয় বটে, কিন্তু সে সুখও ছিল ক্ষণিকের। দুই দিন যেতে না যেতেই আবার হুকুম আসে—জঙ্গলে যেতে হবে।
বিপ্লবী ইন্দু আর পারেননি। যন্ত্রণা, অবহেলা, আর হৃদয়হীন নিষ্ঠুরতার ভার সইতে না পেরে অবশেষে নিজের কুর্তা ছিঁড়ে দড়ি বানিয়ে গলায় পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন। সে ছিল এক নীরব প্রতিবাদ, ব্রিটিশ বর্বরতার বিরুদ্ধে।
দেশের জন্য প্রাণ দেওয়া এই তরুণের মৃত্যু যেন আজও ইতিহাসের পৃষ্ঠায় লেখা রয়ে গেছে—রক্তের অক্ষরে।


More Stories
জয়রামবাটিতে স্টেশনের উদ্বোধন ১১ ডিসেম্বর করার দাবি : কামারপুকুর রেল চাই পক্ষের আবেদন
দার্জিলিংয়ে প্রবল বৃষ্টি ও ধসে মৃত ১৩, নিখোঁজ ১
কালীঘাটে বিজয়া সম্মিলনীতে মমতা–অভিষেক