সোমালিয়া ওয়েব নিউজঃ প্রাচীন চীনের রাজদরবার ছিল জাঁকজমক, ক্ষমতা ও রাজকীয়তা দিয়ে পরিপূর্ণ। কিন্তু এই আলোকচ্ছটায় ঢাকা পড়ে ছিল ভয়ঙ্কর এক নির্মমতা—পুরুষদের খোজা বানানো। রাজাদের হারেমে হাজার হাজার নারী থাকতেন, যাদের রক্ষা ও নিয়ন্ত্রণে নিযুক্ত থাকতেন কিছু পুরুষ—যাদের জীবন কেটে যেত ‘খোজা’ হিসেবে, যৌন ক্ষমতা থেকে চিরতরে বঞ্চিত হয়ে।
চীনের রাজাদের হারেমে একসময় ২০ হাজার পর্যন্ত নারী ছিলেন, যাদের ‘রক্ষিতা’ বলা হতো। এই নারীদের দিয়ে রাজারা যেমন ভোগের চাহিদা মেটাতেন, তেমনি রাজরক্তে উত্তরসূরি নিশ্চিত করতে চাইতেন। আর সেই কারণেই রাজবংশে বাইরের রক্ত ঢুকবে—এই আশঙ্কায় পাহারাদার পুরুষদের খোজাকরণ করা হতো।
‘খোজা’ শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘Eunuch’। গ্রিক ‘Eunoukhos’ শব্দ থেকে এর উৎপত্তি, যার অর্থ—“শয়নকক্ষের রক্ষক”। চীনে খ্রিস্টপূর্ব ১৬০০ অব্দ থেকে শুরু করে বহু শতাব্দী ধরে এই নিষ্ঠুর প্রথা চলে এসেছে। সবচেয়ে ভয়ানক ছিল তৃতীয় প্রকার খোজাকরণ—যেখানে পুরুষাঙ্গ এবং অণ্ডকোষ উভয়ই কেটে ফেলা হতো। ধারালো ছুরির মাধ্যমে এই অপারেশন চলত, যার ফলে মৃত্যু ঝুঁকি থাকত মারাত্মক।
এই অপারেশনগুলো হতো রাজপ্রাসাদের দূরবর্তী, নির্জন কোনও কক্ষে। রোগীকে কাঠের পাটাতনে শুইয়ে গরম জল ও মরিচ বাটার মাধ্যমে অবশ করা হতো। এরপর ছুরি চালিয়ে একেবারে কেটে ফেলা হতো যৌনাঙ্গ। অপারেশনের পর রোগীকে তিন দিন খাবার ছাড়াই রাখা হতো। চতুর্থ দিনে প্রস্রাব করতে পারলে বোঝা যেত, অপারেশন সফল হয়েছে। না পারলে তার মৃত্যু প্রায় অনিবার্য ছিল।
একসময় অপারেশনে মৃত্যুহার অনেক বেশি থাকলেও, কালের সঙ্গে দক্ষতা বেড়ে গেলে মৃত্যুহার হাজারে ১-এ নেমে আসে। এই খোজাদের অনেকে পরবর্তীতে রাজদরবারে প্রশাসনিক দায়িত্বেও আসতেন, কারণ তারা সন্তান উৎপাদনে অক্ষম হওয়ায় রাজপরিবারের পক্ষে ‘নিরাপদ’ বলে বিবেচিত হতেন।
মানবাধিকার ও ইতিহাস বিশ্লেষকদের মতে, প্রাচীন চীনের এই খোজাকরণ ছিল এক নিষ্ঠুর, নৃশংস ও পিতৃতান্ত্রিক সমাজের নির্মম প্রতিফলন, যেখানে নারীর স্বাধীনতা যেমন ছিল না, তেমনি পুরুষদেরও ব্যবহার করা হতো নিছক উপকরণ হিসেবে।

More Stories
১৩ হাজার ডলারের বিনিময়ে কেনা এক টুকরো বিরানভূমি, যা পরিণত হলো প্রকৃতির স্বর্গে
কেন ব্যবহার করা হয় “ঘট” হিন্দু পূজায়?
মা দুর্গার মুখে উর্ণনাভ: মহামায়ার চিহ্ন