October 5, 2025

ভাদ্র সংক্রান্তিতে অরন্ধন উৎসব: বাঙালির রান্না পুজোর সনাতনী ঐতিহ্য

সোমালিয়া ওয়েব নিউজঃ ভাদ্র সংক্রান্তি মানেই গ্রামবাংলায় এক বিশেষ উৎসবের আবহ। দক্ষিণবঙ্গের সনাতনী হিন্দু সমাজে এই দিনে পালিত হয় অরন্ধন বা রান্না পুজো। আগের দিন রান্না করা খাবার সংক্রান্তির দিনে দেবী মনসাকে নিবেদন করে খাওয়ার মধ্য দিয়েই পালিত হয় এই প্রাচীন উৎসব।

লোকমুখে অরন্ধনকে বলা হয়— “ভাদ্রে রেঁধে আশ্বিনে খাওয়া”। কোথাও একে বলা হয় “ইচ্ছারান্না”, আবার বিশ্বকর্মা পুজোর দিনে পালিত হলে সেটি পরিচিত হয় “বুড়োরান্না” নামে।

হেঁসেলের উনানের গর্তকেই প্রতীক হিসেবে ধরা হয় দেবী মনসার। গৃহিণীরা শালুকপাতা ও ফনিমনসার ডাল দিয়ে ঘট স্থাপন করে দেবীকে আরাধনা করেন। পূজার আগের দিন রান্না করা বিভিন্ন পদ যেমন— ইলিশ, চিংড়ি, শাকসবজি, ডাল, চালতার চাটনি, তালের বড়া, মালপোয়া, ভাজাভুজি ও পান্তাভাত— সাজিয়ে নিবেদন করা হয় দেবীর উদ্দেশ্যে। তবে বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, আমিষ রান্নায় মাছ ব্যবহৃত হলেও পিঁয়াজ ও রসুনের ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ

প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী রান্না হয় উনানের একটানা জ্বলা আঁচে। অনেক ধর্মপরায়ণ গৃহিণী উপোস থেকে ব্রত পালন করেন এবং পূজা শেষে মা মনসার ব্রতকথা পাঠ বা শ্রবণ করেন।

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই উৎসবের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র দেবীর আরাধনা নয়, বরং পরিবারের মঙ্গল, রোগ-শোক থেকে মুক্তি এবং সর্পভয় থেকে পরিত্রাণের প্রার্থনা।

গ্রামবাংলার সমাজজীবনে আজও অরন্ধন উৎসব বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। বাঙালির চিরন্তন প্রবাদ— “বারো মাসে তেরো পার্বণ”— এর অন্যতম উজ্জ্বল নিদর্শন এই অরন্ধন, যা আজও প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে বেঁচে আছে।

Loading