December 1, 2025

বিবাহবিচ্ছেদের পর সন্তানের দেখভালে হাইকোর্টের নতুন নির্দেশিকা

বিচারপতি সৌমেন সেন, বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি শুভ্রা ঘোষের কমিটির উদ্যোগে প্রকাশিত গাইডলাইন পরিবার আইন ব্যবস্থায় নতুন দৃষ্টান্ত

সোমালিয়া ওয়েব নিউজঃ বিবাহবিচ্ছেদ বা দাম্পত্য মামলা চলাকালীন সময়ে সন্তানের মানসিক বিকাশ, নিরাপত্তা ও অভিভাবকত্বের ভারসাম্য বজায় রাখতে ঐতিহাসিক গাইডলাইন প্রকাশ করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। সমাজের পরিবর্তিত বাস্তবতায় শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে হাইকোর্টের এই নির্দেশিকা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।

বিচারপতি সৌমেন সেন, বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিচারপতি শুভ্রা ঘোষের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের কমিটি দীর্ঘ পর্যবেক্ষণ ও বিভিন্ন মামলা বিশ্লেষণ করে এই গাইডলাইন তৈরি করেছেন।
কমিটির বক্তব্য, “বিবাহ ভেঙে যেতে পারে, কিন্তু সন্তান তার বাবা-মাকে হারাতে পারে না।” সেই কারণেই এই নির্দেশিকায় জোর দেওয়া হয়েছে শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থ (Best Interest of the Child) বজায় রাখার ওপর।

গাইডলাইনে বলা হয়েছে, বাবা-মা যাঁর কাছেই সন্তানের অভিভাবকত্ব থাকুক না কেন, শিশুর যেন উভয় অভিভাবকের সঙ্গেই নিয়মিত যোগাযোগ থাকে।

  • সপ্তাহান্তে বা ছুটির দিনে সাক্ষাতের সুযোগ দিতে হবে।
  • ভিডিও কল, ফোন বা অনলাইন যোগাযোগের ব্যবস্থাও রাখা যেতে পারে, যদি দূরত্ব বা অন্য কোনও কারণে সামনাসামনি দেখা সম্ভব না হয়।
  • বিশেষ উপলক্ষ যেমন জন্মদিন, উৎসব, স্কুলের অনুষ্ঠান—এই সময়গুলোতেও সন্তানের বাবা-মা উভয়ের উপস্থিতি উৎসাহিত করা হয়েছে।

হাইকোর্টের নির্দেশিকায় স্পষ্ট বলা হয়েছে, ভরণপোষণের টাকা সময়মতো প্রদান করতে হবে।
যদি কোনও কারণে বিলম্ব বা অস্বীকার করা হয়, আদালত সেই পক্ষের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারে। কারণ, ভরণপোষণের অর্থ কেবল আর্থিক দায়িত্ব নয়—এটি সন্তানের শারীরিক ও মানসিক নিরাপত্তার ভিত্তি।

বিচারপতিদের মতে, দাম্পত্য কলহের মূল শিকার প্রায়শই হয় সন্তান। তাই,

  • পারিবারিক বিবাদে যেন শিশুকে ব্যবহার না করা হয়,
  • তার সামনে এক অভিভাবকের বিরুদ্ধে অন্যজনের অপবাদ দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে,
  • প্রয়োজনে শিশুর মানসিক কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থাও রাখতে হবে।

এই গাইডলাইন এখন থেকে রাজ্যের সব পারিবারিক আদালতের জন্য নির্দেশনামূলক নথি হিসেবে কাজ করবে। আদালতগুলি শিশু ও অভিভাবকের সাক্ষাতের সময়সূচি, ভরণপোষণের পরিমাণ এবং অভিভাবকত্ব সংক্রান্ত বিরোধে এই নির্দেশিকাকে অনুসরণ করতে পারবে।

হাইকোর্টের এই পদক্ষেপকে আইন বিশেষজ্ঞ ও সমাজকর্মীরা মানবিক উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন। তাঁদের মতে, বিবাহবিচ্ছেদ কেবল দুই প্রাপ্তবয়স্কের সম্পর্কের ভাঙন নয়, এটি শিশুর মানসিক জগতে গভীর প্রভাব ফেলে। তাই, এই নির্দেশিকা শিশুর প্রতি সমাজের দায়বদ্ধতার প্রতিফলন।

কমিটির পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, “সন্তান যেন বিচ্ছেদের শিকার না হয়—এই নীতিই আদালতের মূল লক্ষ্য।”

Loading