শিশুদের উদ্দত আচরণের দায় কার?

সোমালিয়া ওয়েব নিউজঃ সম্প্রতি সমাজজুড়ে এক নতুন প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে— ছোটদের মধ্যে বাড়ছে উদ্দত আচরণ, অবাধ্যতা ও আত্মকেন্দ্রিকতা। অভিভাবক, শিক্ষক থেকে সমাজবিদ— সকলে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন এই পরিবর্তন নিয়ে। প্রশ্ন উঠেছে, শিশুদের এই পরিবর্তনের জন্য দায়ী কে? পরিবার, সমাজ, না আধুনিক প্রযুক্তি?

আজকের শিশুরা টেলিভিশন, মোবাইল বা ইন্টারনেটের প্রভাবে খুব অল্প বয়সেই নানা তথ্য ও দৃশ্যের সংস্পর্শে চলে আসছে। যেগুলোর অনেকটাই তাদের মানসিক বয়সের উপযোগী নয়। ফলে তাদের চিন্তাধারা ও ব্যবহারেও আসছে এক অদ্ভুত পরিবর্তন।

মনোবিজ্ঞানীদের মতে, শিশুরা যা দেখে, তা-ই শেখে। অথচ বর্তমানে তারা পরিবারের কাছ থেকে পাচ্ছে না পর্যাপ্ত সময়, ভালোবাসা ও সংলাপের পরিবেশ। মা-বাবা অফিস, সোশ্যাল মিডিয়া বা ব্যস্ত জীবনে আটকে পড়ায় শিশুদের মানসিক বিকাশে দেখা দিচ্ছে ঘাটতি। ফলে তারা অনেক সময় মনোযোগ আকর্ষণের জন্যই রূঢ় বা উদ্দত আচরণ করছে।

সমাজতত্ত্ববিদদের বক্তব্য, প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক জীবনে মানবিক সম্পর্ক ক্রমেই ফিকে হচ্ছে। আগে যেমন সন্ধ্যাবেলায় পরিবার একসঙ্গে বসে গল্প করত, এখন সবাই নিজ নিজ মোবাইলে ব্যস্ত। শিশুরাও তাই শিখছে— মানুষ নয়, মেশিনই সঙ্গী। ফলে সহানুভূতি, শ্রদ্ধা, সংযমের মতো গুণ হারিয়ে যাচ্ছে তাদের আচরণ থেকে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সমস্যার সমাধান শুধুমাত্র স্কুল বা সমাজ নয়, পরিবারের মাধ্যমেই সম্ভব। বাড়িতে অভিভাবকরা যদি নিজেরাই মোবাইল বা টিভির বদলে সন্তানদের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটান, তাদের সঙ্গে গল্প করেন, খেলেন, তবে শিশুর মানসিক ভারসাম্য অনেকটাই ফিরতে পারে।

আজকের দিনে প্রয়োজন— প্রযুক্তির সুফল গ্রহণের পাশাপাশি মানবিক মূল্যবোধ ও সামাজিক দায়বদ্ধতার শিক্ষা শিশুদের মধ্যে গড়ে তোলা। নাহলে আগামী প্রজন্ম আরও বেশি আত্মকেন্দ্রিক ও অসহনশীল হয়ে উঠবে, যা সমাজের পক্ষে বিপজ্জনক। শিশুরা সমাজের ভবিষ্যৎ। তাই তাদের সঠিক দিশা দেখানো, স্নেহ ও মূল্যবোধে বড় করে তোলা— এ দায় পরিবার ও সমাজ উভয়েরই।