October 6, 2025

কাঁকসায় আদিবাসী তরুণীর পাঠশালা

সোমালিয়া ওয়েব নিউজ: পরিস্থিতির কাছে বশ্যতা স্বীকার না করে তার সঙ্গে লড়াই করে জেতার মানসিকতা যাদের আছে তারা জীবনযুদ্ধে সহজে হেরে যায়না। ফাইট, ফাইট এণ্ড ফাইট মন্ত্রে যারা দীক্ষিত ডিপ্রেসন তাদের গ্রাস করতে পারেনা। তাদের জীবনের মূলমন্ত্র হলো Struggle for existence – অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম। পরবর্তীকালে এরাই অন্যের কাছে লড়াইয়ের দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠে। পৃথিবীর ইতিহাস ঘাঁটলে এইধরণের অসংখ্য উদাহরণ দেখতে পাওয়া যায়।পশ্চিম বর্ধমানের আদিবাসী অধ্যুষিত কাঁকসা ব্লকের মলানদিঘীর মোলডাঙ্গা আদিবাসী পাড়া। সত্তরের বেশি পরিবার এখানে বাস করে। এদের অধিকাংশ ক্ষেত মজুর। পুরোপুরি অভাবের সংসার। বহুকষ্টে এরা সংসার প্রতিপালন করে।ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শেখানো এদের কাছে অনেকটা বিলাসিতা। অনেকেই কষ্ট হলেও তাদের লেখাপড়া শেখানোর চেষ্টা করে।এই পাড়াতেই বাস করে হিমানী মুর্মু। মা-বাবা ও চার ভাই-বোন মিলে ছয় জনের সংসার। আর্থিক অনটন লেগেই আছে। তার মাঝেও মা-বাবার স্বপ্ন ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শেখানোর। ওরা বড় হবে, চাকরি করবে, সংসারের অভাব দূর করবে। স্বপ্ন পূরণের জন্য হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে শুরু করে। বাকি তিন সন্তান বিদ্যালয়ের গণ্ডি টপকে যাওয়ার পর সংসারের অভাবের জন্য কলেজে ভর্তি না হলেও বাড়ির বড় মেয়ে হিমানী থামতে চায়নি। তার লক্ষ্য অনেক দূর পর্যন্ত প্রসারিত- বড় হতে চাই মাগো বড় হতে চাই, ভদ্রলোকের ছেলের মত লেখাপড়া শিখতে চাই। এইভাবেই মা-বাবার স্বপ্ন সে পূরণ করবে।
মলানদিঘী দুর্গাদাস বিদ্যামন্দির থেকে হিমানী ২০১০ সালে মাধ্যমিক ও ২০১২ তে উচ্চ মাধ্যমিকের বাধা অতিক্রম করে এবং পরবর্তী সময়ে বাংলায় স্নাতক (সাম্মানিক) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে। ওর লক্ষ্য শিক্ষকতা করা। স্বপ্ন পূরণের জন্য বিএড ডিগ্রিও সে অর্জন করে। এরপরই শুরু হয় স্বপ্ন ভঙ্গের পালা। শিক্ষক হতে গেলে পরীক্ষা দিতে হবে। বিভিন্ন কারণে এইরাজ্যে শিক্ষক নিয়োগের জন্য নির্ধারিত এসএসসি পরীক্ষা আপাতত বন্ধ। ফলে সমস্ত রকম যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও ওর মত শিক্ষকতা করার স্বপ্ন দেখা লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত ছেলেমেয়ে পরীক্ষায় বসে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এদিকে কারও নজর নাই।লক্ষ্য শিক্ষকতা করা, নিজের এলাকায় পেছিয়ে পড়া আদিবাসী ছেলেমেয়েদের কাছে নিজেকে আলোকবর্তিকা রূপে তুলে ধরা যারা তাকে দেখে শত কষ্টের মধ্যেও ভাল করে পড়াশোনা করবে। তাই যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও হিমানী অন্য চাকরির জন্য চেষ্টা করেনি। তার আশা একদিন অন্ধকার দূর হবে, মানুষের বিবেক জাগ্রত হবে, তার মত ছেলেমেয়েরা নিজেদের প্রমাণ করার সুযোগ পাবে।এখানেই অনেকের মত ভেঙে পড়তে পারত সে। শিক্ষকতার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য বিকল্প পথ বেছে নেয়। গ্রামের গরীব ঘরের ছেলেমেয়ে আর্থিক অবস্থা খারাপের জন্য যাদের গৃহশিক্ষক নাই তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সে পাঠশালা খুলে বসে। অবৈতনিক এই পাঠশালা। তার এই উদ্যোগে গ্রামবাসীরা খুব খুশি। এইভাবেই আদিবাসী পরিবারের এক শিক্ষিতা তরুণী দিনের পর দিন প্রত্যন্ত গ্রাম্য এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে।

Loading