October 6, 2025

বিজ্ঞানচেতনার প্রজ্বলিত প্রদীপ — ড. মেঘনাদ সাহা

সোমালিয়া ওয়েব নিউজঃ আজ, ৬ অক্টোবর — ভারতের বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী, পদার্থবিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদ ডঃ মেঘনাদ সাহার জন্মদিবস। তাঁর আবিষ্কার, অধ্যবসায় ও দেশপ্রেম আজও ভারতীয় বিজ্ঞানচেতনার এক অনন্য প্রতীক।

১৮৯৩ সালের এই দিনে ঢাকা জেলার কালিয়াকুড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মেঘনাদ সাহা। দারিদ্র্যের মধ্যেও তাঁর মেধা ও কঠোর পরিশ্রমই তাঁকে নিয়ে যায় বিজ্ঞানের জগতে এক উজ্জ্বল স্থানে।

বিশ্ববিজ্ঞানের ইতিহাসে মেঘনাদ সাহার নাম অমর হয়ে আছে তাঁর আবিষ্কৃত সাহা আয়নীকরণ সমীকরণ (Ionization Equation)-এর মাধ্যমে। এই সমীকরণ সূর্য ও নক্ষত্রের তাপমাত্রা ও গঠন বিশ্লেষণে এক যুগান্তকারী দিশা দেয়। বিশ্বের প্রধান মানমন্দিরগুলিতে আজও সাহা সমীকরণ ব্যবহৃত হয়। এই সমীকরণ সূর্য ও নক্ষত্রের তাপমাত্রা ও গঠন বিশ্লেষণে এক যুগান্তকারী দিশা দেয়। বিশ্বের প্রধান মানমন্দিরগুলিতে আজও সাহা সমীকরণ ব্যবহৃত হয়। তাপ আয়নন সূত্র মেঘনাদ সাহা আবিষ্কার করেন। এই সূত্রটি সাহা থার্মাল আয়নাইজেশন ফর্মুলা নামে পরিচিত, যা বিভিন্ন তাপমাত্রা ও চাপে পদার্থের আয়নিত অবস্থা নির্ণয় করতে সাহায্য করে।

তিনি প্রথম প্রমাণ করেন যে নক্ষত্রের আলোকবর্ণ থেকে তার তাপমাত্রা নির্ণয় করা যায় — এই অবদান তাঁকে এনে দেয় আন্তর্জাতিক খ্যাতি।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি ছিলেন ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স (IACS)-এর অন্যতম প্রাণপুরুষ।
বিজ্ঞানের পাশাপাশি সমাজ, শিক্ষা ও জাতীয় উন্নয়ন নিয়েও তাঁর চিন্তা ছিল সুদূরপ্রসারী। তিনি বিশ্বাস করতেন — “বিজ্ঞানই দেশের মুক্তির একমাত্র পথ।”

ব্রিটিশ শাসনের সময় তিনি বিজ্ঞানচর্চাকে জাতীয় আন্দোলনের অংশ হিসেবে দেখতেন। স্বাধীন ভারতের পরিকল্পনা কমিশন ও নদী নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে তাঁর সক্রিয় ভূমিকা ছিল।
তিনি ছিলেন লোকসভা সদস্যও — বিজ্ঞানকে জনজীবনের সঙ্গে যুক্ত করার প্রয়াসে সংসদে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা তুলেছিলেন।

ড. সাহা শুধু একজন বিজ্ঞানী নন, তিনি ছিলেন এক আন্দোলন।
আজ, যখন আমরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে সমাজগঠনের ভিত্তি হিসেবে দেখছি, তখন মেঘনাদ সাহার চিন্তাধারা আরও প্রাসঙ্গিক।

তাঁর জীবনের প্রতিটি অধ্যায় শেখায় —

“বিজ্ঞান মানে কেবল গবেষণা নয়, বিজ্ঞান মানে মানবতার উন্নয়নের সংগ্রাম।”

Loading