সোমালিয়া ওয়েব নিউজঃ ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে ১৯৯৮ সাল এক যুগান্তকারী বছর। সেই বছরই অটলবিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে ভারত পরিচালিত করেছিল পোখরান পারমাণবিক পরীক্ষা — যা বিশ্বমঞ্চে ভারতের আত্মসম্মান ও স্বাধীনতার ঘোষণা ছিল। কিন্তু তার পরেই শুরু হয়েছিল প্রবল আমেরিকান চাপ ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা।
তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রপতি বিল ক্লিনটন ভারতীয় দূতাবাসকে স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন — ভারত যেন অবিলম্বে পারমাণবিক পরীক্ষা বন্ধ করে “নন-ফার্স্ট ইউজ” চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। দিল্লি থেকে উত্তর এসেছিল ধৈর্যের ভাষায় — “অপেক্ষা করুন।”
দুই দিন পরই বাজপেয়ী সরকার দ্বিতীয় দফা পরীক্ষার মাধ্যমে আমেরিকাকে অবাক করে দেয়। এই ঘটনা শুধু সাহস নয়, ছিল ভারতের সার্বভৌম সিদ্ধান্ত গ্রহণের ঘোষণা।
এরপর শুরু হয় কূটনৈতিক ঠান্ডা যুদ্ধ। আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা জারি করে, আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ে, অথচ বাজপেয়ী হার মানেননি।
১৯৯৯ — পতন ও পুনর্জন্ম
সেই বছরই দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা চরমে ওঠে। জয়ললিতার সমর্থন প্রত্যাহারে বাজপেয়ী সরকার পতন হয়, কিন্তু কয়েক মাস পরই জনগণের ভোটে আবার ক্ষমতায় ফিরে আসে এনডিএ।
এই জয় ছিল আমেরিকান কূটনীতির কাছে এক চ্যালেঞ্জের সমান। অবশেষে ক্লিনটন ২০০০ সালে ভারতে সফরে আসেন, এবং ধীরে ধীরে নিষেধাজ্ঞাগুলি প্রত্যাহার শুরু হয়।
২০০১–২০০৩ : বুশ, ইরাক ও কূটনৈতিক ভারসাম্য
জর্জ ডব্লিউ বুশ ক্ষমতায় আসার পর ভারতের প্রতি প্রত্যাশা ছিল স্পষ্ট— আফগানিস্তান ও ইরাক ইস্যুতে মার্কিন সমর্থন।
বাজপেয়ী কিন্তু কূটনৈতিক বুদ্ধিতে আমেরিকার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি জাতিসংঘের প্রস্তাবের শর্ত জুড়ে দেন, জানতেন আমেরিকা একা এগোচ্ছে।
একদিকে তিনি চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উষ্ণ করেন, সিকিমকে ভারতের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি আদায় করেন, অন্যদিকে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফকে চাপ দেন সন্ত্রাসবাদবিরোধী প্রতিশ্রুতি দিতে।
এই পর্বে ভারতের কূটনীতি প্রথমবারের মতো মার্কিন নির্ভরতা ছাড়াই আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে।
বর্তমান সময়ের প্রতিধ্বনি
আজ প্রায় ২৫ বছর পর আবারও আন্তর্জাতিক রাজনীতি তপ্ত।
চীনের আগ্রাসন, মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত, এবং আমেরিকার নির্বাচনী বছর— এই তিনে মিলেছে বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা।
মোদী সরকারের সামনে আজও সেই পুরনো প্রশ্ন— ভারত কি স্বাধীন সিদ্ধান্ত নিতে পারবে, না কি বৈশ্বিক চাপের কাছে নত হবে?
অটলজির সময় এনডিএ ছিল দুর্বল, বিরোধীরা ছিল প্রভাবশালী। আজ পরিস্থিতি উল্টো।
তবু ইতিহাস শেখায়— কূটনৈতিক আত্মমর্যাদা রক্ষায় ভারতের মেরুদণ্ড যত শক্ত, তত স্থিতিশীল সরকার টিকে থাকে।
অটলবিহারী বাজপেয়ী এক দুঃসময়ে আমেরিকার চাপ, চীনের নজর, পাকিস্তানের হুমকি—সব সামলে ভারতের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রেখেছিলেন।
নরেন্দ্র মোদীর সরকার আজ অনেক শক্তিশালী, তবুও একই ধরনের চাপের মুখে পড়ছে—অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক, ও রাজনৈতিক।
ইতিহাস বলে, ভারত যখনই নিজের স্বার্থে অটল থেকেছে, তখনই বিশ্বমঞ্চে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।
অতএব, মোদী সরকারের সামনের চ্যালেঞ্জ শুধু রাজনৈতিক নয়—এটা ভারতের আত্মমর্যাদারও পরীক্ষা।

More Stories
বিজ্ঞানচেতনার প্রজ্বলিত প্রদীপ — ড. মেঘনাদ সাহা
নীতিশ সরকারের নতুন দান — ২৫ লক্ষ মহিলার ব্যাঙ্কে পৌঁছল ১০ হাজার টাকা
বিজয়া দশমী: অধর্মের পরাজয় ও ধর্মের জয় উদযাপন