October 5, 2025

ছড়ায় ছড়ায় দেওয়াল লিখন

সোমালিয়া সংবাদ, আরামবাগ:‌ নির্বাচনে বিভিন্ন দলের প্রচারের অন্যতম একটি প্রধান মাধ্যম হল দেওয়াল লিখন। সেখানে প্রার্থীর নাম ও প্রতীক চিহ্ন ছাড়াও প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। আর সেই দেওয়াল লিখনকে  আকর্ষণীয় করে তুলতে দীর্ঘদিন ধরেই তার পাশে অনেকেই ছড়া ব্যবহার করে থাকেন। আর এই ছড়া হল সাধারণ ভোটারদের আকৃষ্ট করার অন্যতম একটি উপায়। এবারের বিধানসভা নির্বাচনেও বিভিন্ন দেওয়ালে নানারকম ছড়া শোভা পাচ্ছে। আর এক্ষেত্রে বাম-কংগ্রেসের সংযুক্ত মোর্চা ও বিজেপির থেকে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে শাসক তৃণমূল কংগ্রেস। আরামবাগ মহকুমার বিভিন্ন দেওয়াল লিখনে মূলত তাদেরই বেশি ছড়া দেখা যাচ্ছে। কোথাও তুলে ধরা হয়েছে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন, আবার কোথাও রাজ্যের অন্যতম প্রধান বিরোধীদল বিজেপিকে ছড়ায় ছড়ায় আক্রমণ করা হয়েছে। যেমন গোঘাটের একটি দেওয়াল  লিখনে দেখা গেল কন্যাশ্রী নিয়ে ছড়া। সেখানে তৃণমূলের প্রতীকের পাশে লেখা হয়েছে– ‘কন্যাশ্রীর বোনটা আমার/ হচ্ছে যখন ইঞ্জিনিয়ার/ যুদ্ধ সে বোন জিতেই লবে/বন্ধু এসো খেলা হবে।’ পুরশুড়াতে তৃণমূল প্রার্থী দিলীপ যাদবের একটি দেওয়াল লিখনে তাঁর নাম ও প্রতীকের পাশে লেখা হয়েছে মানুষের নিত্যদিনের যন্ত্রণার কথা– ‘কিনতে গ্যাস কাঁপছে হাত/ শুনবো না আর মন কি বাত/ কাঁদছে কৃষক কাঁদছে মা/ এই বিজেপি আর না।’ এখানেই আরও একটি দেওয়াল লিখন অনেকেরই চোখে পড়ছে। সেখানে লেখা হয়েছে– ‘বাবা আর দেয় না বিয়ে/ কন্যাশ্রীর টাকা নিয়ে/ পড়ছে কন্যা, বলছে তাই/ দিদিমণি তোমায় চাই।’ আবার আরামবাগের একটি দেওয়ালে দেখা গেল বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের চিত্র। সেখানে শুধুমাত্র একটা ছড়া লেখা হয়েছে। কারা লিখেছে সে কথা সেখানে উল্লেখ নেই। সেখানে লেখা আছে– ‘আদি বিজেপি দিচ্ছে ডাক/ বঙ্গে এবার দিদিই থাক।’ খানাকুলের একটি দেওয়ালে দেখা গেল কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের সঙ্গে রাজ্যের তৃণমূল সরকারের তুলনার ছবি। সেখানে লেখা হয়েছে– ‘১৫ লক্ষের স্বপ্ন দেখিয়ে ভাত দিল না পাতে/৫ লক্ষের স্বাস্থ্যসাথী সবার হাতে হাতে।’ খানাকুলের তৃণমূল প্রার্থী মুন্সি নজবুল করিমের একটি দেওয়াল লিখনের পাশে লেখা আছে– ‘লকডাউন পকেট ফাঁকা/ পেট্রোল ডিজেল ১০০ টাকা।’ আরামবাগ কেন্দ্রের প্রার্থী সুজাতা মন্ডলের দেওয়াল লিখনে বিজেপিকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করা হয়েছে। সেখানে বিজেপি দলের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়েছে–‘ মুরগি মেরে খেলে চিকেন পার্টি/ পাঁঠা মেরে খেলে মটন পার্টি/ আর দেশের টাকা মেরে খেলে/ ভারতীয় জনতা পার্টি।’ কোথায় আবার সদ‍্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীকে উদ্দেশ্য করে লেখা হয়েছে– ‘পদ্মফুলে দিলে ছাপ/ ঘরে ঢুকবে কেউটে সাপ।’ পাশে রয়েছে একটি সাপের ছবি। আর লেখা আছে, আই এম এ ডিসকো ড্যান্সার। একটি দেওয়ালে দেখা গেল আবার মজার ছড়া। সেখানে তৃণমূলের প্রতীকের পাশে লেখা আছে– ‘মোদি তুমি দুষ্টু লোক/ তোমার চুল-দাড়িতে উকুন হোক।’ অন্যদিকে তৃণমূলকে আক্রমণ করে বিজেপি লিখেছে–‘শিক্ষক পেটায় রাস্তায় ফেলে/ চাইলে ডিএ কুকুর বলে/ মিথ্যা গর্ব নিজেকে নিয়ে/ বাংলা চায় না এমন মেয়ে।’ আরও একটি দেওয়ালে দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির হাওয়াই চটিকে আক্রমণ করে ছড়া। সেখানে লেখা হয়েছে– ‘পাড়ায় পাড়ায় আওয়াজ তোলো/ হাওয়াই চটি বদলে ফেলো।’ আবার অন্য একটি দেওয়ালে লেখা হয়েছে– ‘দিদির পায়ে হাওয়াই চটি/ ভাই ভাইপোরা কোটিপতি।’এই সমস্ত ছড়া এবার চায়ের দোকানে আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে। কেউ কেউ এইসব ছড়া দেখে পড়তে পড়তে  বেশ মজাও পাচ্ছেন। ভোটের ইভিএমে এর কতটা প্রভাব পড়বে সে কথা হয়তো ২রা মে-র পর জানা যাবে। কিন্তু আপাতত সাধারণ মানুষ যে এই ছড়া পড়ে বেশ কিছুটা মজা পাচ্ছেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

Loading