.
সোমালিয়া ওয়েব নিউজঃ
অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স: এক নীরব স্বাস্থ্যবিপর্যয়ের গল্প
অ্যান্টিবায়োটি আবিষ্কার চিকিৎসা বিজ্ঞানে এক যুগান্তকারী ঘটনা। ১৯২৮ সালে স্কটিশ বিজ্ঞানী স্যার আলেকজান্ডার ফ্লেমিং পেনিসিলিন আবিষ্কার করে মানবজাতিকে বহু মারাত্মক ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ থেকে রক্ষা করেছিলেন। তিনি তখনই সতর্ক করেছিলেন,
“এই অ্যান্টিবায়োটিক কোটি কোটি মানুষের প্রাণ বাঁচাবে, কিন্তু একদিন এগুলো আর কাজ করবে না। তখন তুচ্ছ কারণে মানুষ মরবে।”
আজ সেই ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তব হতে শুরু করেছে। কারণ—অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স।
অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স কী?
ধরা যাক, আপনার শরীরে ১ লক্ষ ব্যাকটেরিয়া আছে। এগুলো ধ্বংস করতে প্রয়োজন ১০টি এম্পিসিলিন ক্যাপসুল। আপনি খেলেন মাত্র ৭টি। এতে আপনি হয়তো সুস্থ হয়ে গেলেন, কিন্তু ৩০ হাজার ব্যাকটেরিয়া রয়ে গেল শরীরে।
এই জীবিত ব্যাকটেরিয়াগুলো তখন নিজেদের মধ্যে পরিকল্পনা করে এম্পিসিলিন প্রতিরোধী ‘জ্যাকেট’ বানায়। তারা বংশবিস্তারের সময় সেই জ্যাকেট সন্তানদেরও দেয়। ফলে পরবর্তীবার এম্পিসিলিন খেলে ব্যাকটেরিয়াগুলো আর মারা যায় না।
সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার হলো, এই রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়া শুধু এক ব্যক্তির শরীরেই সীমাবদ্ধ থাকে না। হাঁচি-কাশির মাধ্যমে তা ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকাজুড়ে। তখন আর শুধু অবিবেচক ওষুধ খাওয়া রোগী নন, বরং নিয়ম মেনে ওষুধ খাওয়া মানুষও পড়েন বিপদে।
বাস্তব চিত্র: আমাদের উপমহাদেশ
উন্নত বিশ্বে অ্যান্টিবায়োটিক কেবলমাত্র চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনে দেওয়া হয় এবং রোগীরাও ডোজ মেনে ওষুধ শেষ করেন। কিন্তু আমাদের উপমহাদেশে পরিস্থিতি ভয়াবহ।
অনেক সময় রোগী ফার্মেসিতে গিয়ে সামান্য জ্বর বা সর্দির কথা বললেই ফার্মাসিস্ট দিয়ে দেন শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক—যেমন: Azithromycin, Cefixime, Cefuroxime, Levofloxacin
এরপর বলেন, “এক ডোজ খেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে!” কিন্তু ডোজ শেষ না করলে যে ব্যাকটেরিয়া ‘জীবিত’ থেকে ভবিষ্যতের জন্য ভয়ানক হয়ে ওঠে—তা বোঝানো হয় না।
মেডিসিনের “বাইবেল” নামে পরিচিত Davidson’s Principles and Practice of Medicine বইতেও উল্লেখ আছে:
“This organism is resistant against this drug in the subcontinent.”
অর্থাৎ আমাদের অব্যবস্থাপনা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, চিকিৎসা বইয়েও আলাদাভাবে সতর্কতা জানানো হচ্ছে।
কেন এটা ভয়ানক?
- অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট সংক্রমণে সাধারণ জ্বর, সর্দি, কাশিও প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে।
- ছোটখাটো ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণে না এলে অপারেশন বা ক্যান্সার চিকিৎসাও কঠিন হয়ে পড়ে।
- ভবিষ্যতে এমন সময় আসতে পারে যখন সবচেয়ে আধুনিক হাসপাতালেও ডাক্তারদের হাতে থাকবে না কার্যকর ওষুধ।
করণীয় কী?
১. চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া কখনোই অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করা যাবে না।
২. পুরো ডোজ শেষ করতে হবে, মাঝপথে ওষুধ বন্ধ করা যাবে না—even if you feel better.
৩. ফার্মেসির দোকানদারদের এন্টিবায়োটিক দেওয়ার ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা ও কড়া মনিটরিং জরুরি।
4. গণমাধ্যমে সচেতনতা বাড়াতে হবে। যেমন: হাত ধোয়ার মতো, অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ব্যাপারেও জনসচেতনতা জরুরি।
আমরা এক ভয়ানক স্বাস্থ্যঝুঁকির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, যেখানে চিকিৎসা বিজ্ঞানের সব অর্জন ভেস্তে যেতে পারে। এখনই যদি সবাই মিলে সচেতন না হই, ভবিষ্যতের চিকিৎসা ব্যবস্থা দাঁড়িয়ে পড়বে এক অন্ধকার দেয়ালের সামনে।

![]()

More Stories
অ্যান্টি-ওবেসিটি ওষুধের চাহিদা তুঙ্গে
ডায়াবিটিস ও হার্ট–স্ট্রোক রোধে যুগান্তকারী ওষুধ ‘রাইবেলসাস’
৭২ ঘণ্টা উপবাসে রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার পুনর্জন্ম — যুগান্তকারী গবেষণার দাবি মার্কিন বিজ্ঞানীদের