ডায়াবিটিস ও হার্ট–স্ট্রোক রোধে যুগান্তকারী ওষুধ ‘রাইবেলসাস’

ইউএসএফডিএ অনুমোদন পেল সেমাগ্লুটাইডের ওরাল সংস্করণ, চিকিৎসকদের মতে গেম চেঞ্জার ভারতে

সোমালিয়া ওয়েব নিউজঃ  গত দেড়–দু’ বছরে ওজন ও ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণের ওষুধ সেমাগ্লুটাইড বিশ্বজুড়ে চিকিৎসাক্ষেত্রে বিপ্লব এনেছে। ইনজেকশন আকারে এর ব্যবহার আগেই জনপ্রিয় হলেও, এবার ওরাল (ট্যাবলেট) রূপে তৈরি ওষুধ ‘রাইবেলসাস’ (Rybelsus) নতুন ইতিহাস গড়ছে। সম্প্রতি মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FDA) রাইবেলসাসকে ছাড়পত্র দিয়েছে এমন একমাত্র মুখে খাওয়া ডায়াবিটিস ওষুধ হিসেবে, যা শুধু রক্তে শর্করাই নিয়ন্ত্রণ করে না—বরং হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকিও উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে সক্ষম।

ওষুধটি তৈরি করেছে ইউরোপীয় বহুজাতিক সংস্থা নোভো নর্ডিক্স (Novo Nordisk)। ভারতীয় বাজারে ইতিমধ্যেই এর দৃঢ় উপস্থিতি রয়েছে। ফলে ইউএসএফডিএ–র এই অনুমোদনকে দেশের চিকিৎসক মহলের বড় অংশ স্বাগত জানিয়েছেন।

সোল ট্রায়ালের ফলাফল: হার্ট–স্ট্রোক ঝুঁকি কম ১৪ শতাংশ

নোভো নর্ডিক্স পরিচালিত সাম্প্রতিক ‘সোল ট্রায়াল’ (SOUL Trial)–এ ৯,৬৫০ জন প্রাপ্তবয়স্ক টাইপ–২ ডায়াবিটিস রোগীকে চার বছর ধরে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। একদল রোগী প্রতিদিন ১৪ মিলিগ্রাম সেমাগ্লুটাইড গ্রহণ করেছেন, অপর দলকে দেওয়া হয়েছে প্লেসিবো ও নিয়মিত চিকিৎসা।

ফলাফলে দেখা গেছে—যাঁরা সেমাগ্লুটাইড নিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে বড়সড় কার্ডিয়োভাসকুলার জটিলতার ঝুঁকি গড়ে ১৪% কম।
গুরুতর হার্ট–স্ট্রোক–সম্পর্কিত জটিলতা ঘটেছে রাইবেলসাস গ্রুপে ৪৭.৯%, আর প্লেসিবো গ্রুপে ৫০.৩%।

এই গবেষণার ফলাফল সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক মেডিক্যাল জার্নাল ‘দ্য নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন’–এ।

চিকিৎসকদের অভিমত

“উচ্চ রক্তে শর্করার কারণে ধমনিতে প্রদাহ সৃষ্টি হয়, যা ব্লকেজ ও ক্লটের ঝুঁকি বাড়ায়। সেমাগ্লুটাইড এই প্রদাহ–চক্র ভেঙে হৃদযন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখে।” “ওষুধটির শক্তিশালী অ্যান্টি–অ্যাথেরোস্ক্লেরোটিক প্রভাব রয়েছে, ফলে ধমনির দেওয়াল শক্ত বা সরু হয় না। এতে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের সম্ভাবনা কমে।” তবে সতর্ক করে বলেন—“সোল ট্রায়ালের অংশগ্রহণকারীদের বেশিরভাগই পুরুষ ও শ্বেতাঙ্গ; তাই জাতি ও লিঙ্গভেদে এই ফলাফল কতটা বৈধ, তা আরও গবেষণা দাবি করে।”

কীভাবে কাজ করে রাইবেলসাস

সেমাগ্লুটাইড একটি GLP-1 রিসেপ্টর অ্যাগোনিস্ট, যা শরীরে ইনসুলিন ক্ষরণ বাড়ায়, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমায় এবং ক্ষুধা দমন করে। এর ফলে ওজনও হ্রাস পায়। চিকিৎসকরা মূলত টাইপ–২ ডায়াবিটিস রোগীদের ক্ষেত্রে এই ওষুধ প্রেসক্রাইব করেন।

ভারতে প্রাসঙ্গিকতাভারতে রাইবেলসাসের ব্যবহার শুরু হয় প্রায় দেড় বছর আগে, ইউরোপ–আমেরিকায় চালুর কিছুদিন পরেই। দেশজুড়ে ডায়াবিটিস ও অকাল হার্ট অ্যাটাকের বাড়বাড়ন্তের প্রেক্ষিতে বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন একটি ওরাল ওষুধ চিকিৎসা–বিজ্ঞানে নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে।