October 5, 2025

অম্বুবাচীতে কালী ঠাকুরের মুখ ঢেকে রাখতে হয়??

সোমালিয়া ওয়েব নিউজঃ অম্বুবাচীতে কালী ঠাকুরের মুখ ঢেকে রাখতে হয় এটা বাঙালিকে কে শিখিয়েছে আমি একটু জানতে চাই। কি অদ্ভুত কুসংস্কার! দেখে খারাপ লাগে শিক্ষিত অশিক্ষিত নির্বিশেষে অনেক বাড়িতে এবং মন্দিরে এই কুৎসিত প্রথা কি সুন্দর ভাবে নিষ্ঠা ভরে পালন করা হচ্ছে। বাঙালির সবচেয়ে বড় জাতিগত চারিত্রিক দোষ হল এরা স্রোতে গা ভাসাতে খুব ভালবাসে, কখনো প্রশ্ন করে না।

মা, ঠাকুমা, দিদিমা, পাড়ার সবজান্তা কাকিমা, বামুন ঠাকুর বলেছে তাই কালী ঠাকুরের মুখ ঢেকে রাখছি। কারণ জানতে ইচ্ছে হয় না কখনো?

আসুন শিখি, অম্বুবাচী মানেই তিন দিন কালী ঠাকুরের মুখ ঢেকে রাখার নিয়ম পালনকারী উৎসব নয়, প্রকৃতির ঋতু পরিবর্তনকালীন একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় বা ধাপ হলো অম্বুবাচী। কৃষিতে এই তিথি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ এই দুই মাসে তপ্ত নিদাঘে‌ চাষের ক্ষেত, মাঠ, ঘাট, জলাশয় রুক্ষ,রিক্ত ,শুকিয়ে ফুটিফাটা হয়ে থাকে। আষাঢ়ের প্রথম বর্ষায় ধরিত্রী নতুনরূপে প্রাণ ফিরে পায়। গাছে নতুন পাতা আসে, চারিদিক সবুজ হয়ে যায়।

অর্থাৎ প্রকৃতি আবার নতুন রূপে প্রাণ সৃজন করে।

বৈদিক যুগেরও পূর্বে সুপ্রাচীনকাল থেকে ভারতভূমি মাতৃদেবীর উপাসনা করে এসেছে। আমরা আবহমান কাল ধরে সৃষ্টিকর্ত্রীকে জেনেছি আদ্যা মাতৃশক্তিরূপে। সেই সূত্র ধরেই আমরা প্রকৃতিকে কল্পনা করি মাদার নেচার হিসেবে, ভূমি আমাদের কাছে বসুমাতা বা ধরিত্রী।

আষাঢ়ের প্রথম বর্ষা প্রকৃতিমাতার নতুন রূপে সৃষ্টি বা সৃজন করার সময়। তাই নারীদেহের শারীরিক গুণাবলী মেনে ধরিত্রী বা পৃথিবীও ঋতুমতী হয়ে উঠছেন অম্বুবাচীতে, ঠিক যেমন সন্তান সম্ভাবা হওয়ার আগে নারীকে ঋতুমতী হতে হয়।

ঋতুমতী হলে নারীর সাথে যেমন সহবাস শাস্ত্রে নিষিদ্ধ, ঠিক সেই কারণেও অম্বুবাচীর সময় ভূমি হিংসা নিষিদ্ধ, কৃষকরা এই সময় জমিতে হাল দেন না, কোন রকম ভাবে মাটিকে আঘাত করেন না, এই সময় তাদের হালছুটি বা হালকামাই থাকে।

নারীদেহে মেনস্ট্রুয়েশনের উৎপত্তিস্থল ভগ বা যোনি। প্রকৃতিমাতাই আদ্যা শক্তি মহামায়া রূপে পূজিতা। তিনি এবং প্রকৃতি ও অভিন্না নন।

শ্রী শ্রী মার্কন্ডেয় চন্ডীতে আছে, মধুকৈটভ বধকালে ব্রহ্মা, যোগনিদ্রায় শায়িত হরিকে জাগ্রত করবার জন্য তাঁর নয়নে নিদ্রারুপা মহাকালীকে স্তব করছেন এই বলে, “প্রকৃতিস্ত্বং হি সর্বস্য গুণত্রয়বিভাবিনী।”

কামরূপ কামাখ্যায় মহামায়ার যোনি মহামুদ্রা শিলারূপে অবস্থান করছে। তাই কামাখ্যাপীঠের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হলো অম্বুবাচী।

দেবীর যোনির রজঃস্বলা হচ্ছে তাই পুজো পাঠ তিন দিন বন্ধ থাকে, এর দেখাদেখি আপনি কেন আপনার বাড়িতে কালী বা অন্যান্য দেবী মূর্তি ঢেকে রাখতে যাবেন?আপনার বাড়ি বা পাড়ার মন্দির কোনটাই নীলগিরির মহামুদ্রাপীঠ কামরূপ কামাখ্যা নয়। কামরূপ কামাখ্যার মত মহামায়ার যোনিশীলা নেই আপনার বাড়িতে বা পাড়ার মন্দিরে।

সঠিকটা জানুন, এসব কুৎসিত প্রথা ত্যাগ করুন অবিলম্বে। বরং এই তিন দিন দেবীকে বিশেষভাবে শীতল ভোগ দিয়ে পূজা করুন, স্তবস্তোত্র পাঠ করুন ,দুবেলা নাম জপ করুন। দেখবেন ভালো ফল পাবেন। দেবী মূর্তির মুখে লাল কাপড় দিয়ে বেঁধে রাখবেন না প্লিজ, দেখতে বড্ড কুৎসিত লাগে। আপনার নিজের মা যখন রজঃস্বলা হন আপনি কি তাঁর মুখ বেঁধে রাখেন?

Loading