October 6, 2025

মাইকেল মধুসূদন দত্তের প্রয়াণ দিবস

সোমালিয়া ওয়েব নিউজঃ আজ ২৯শে জুন – বাংলা সাহিত্যের এক শ্রেষ্ঠ প্রতিভা, কবি ও নাট্যকার মাইকেল মধুসূদন দত্তের প্রয়াণবার্ষিকী। বাংলাদেশের যশোর জেলায় সম্ভ্রান্ত কায়স্থ পরিবারে মধুসূদনের জন্ম। যৌবনে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করে তিনি “মাইকেল মধুসূদন দত্ত” নাম গ্রহণ করেন এবং পাশ্চাত্য সাহিত্যের দুর্নিবার আকর্ষণে ইংরেজি ভাষায় সাহিত্য রচনায় মনোনিবেশ করেন। জীবনের দ্বিতীয় পর্বে মধুসূদন নিজের মাতৃভাষার প্রতি মনোযোগী হন। এই পর্বে তিনি বাংলায় মহাকাব্য, চতুর্দশপদী কবিতা, নাটক ও প্রহসন ইত্যাদি রচনা করেছেন। তাঁর শ্রেষ্ঠ কীর্তি রামায়ণের উপাখ্যান অবলম্বনে অমিত্রাক্ষর ছন্দে রচিত মহাকাব্য মেঘনাদবধ কাব্য। ১৮৭৩ সালের আজকের দিনে কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেনারেল হাসপাতালের প্রাঙ্গণে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

মধুসূদন দত্ত বাংলা আধুনিক সাহিত্যে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছিলেন। তাঁর মহাকাব্য ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ বাংলা ভাষায় প্রকান্ড এক শক্তিশালী সাহিত্যের উদাহরণ । তিনি বাংলা ছন্দে প্রথম ‘অমিত্রাক্ষর ছন্দ’এবং সনেট প্রবর্তনা করেন, যা বাংলাভাষার আঙ্গিকে বৈচিত্র্য ও গভীরতা আনে। মেঘনাদবধ কাব্য নামক মহাকাব্যটির চরিত্র-চিত্র হিসেবে রয়েছেন : রাবণ, ইন্দ্রজিৎ, সীতা, সরমা, প্রমীলা প্রমুখ। তিনি তার কাব্যকে নয়টি সর্গে বিভক্ত করেছেন এবং সংস্কৃত অলঙ্কারশাস্ত্র অনুযায়ী এতে নগর, বন, উপবন, শৈল, সমুদ্র, প্রভাত, সন্ধ্যা, যুদ্ধ, মন্ত্রণা প্রভৃতির সমাবেশও করেছেন। 

১৯তম শতাব্দীর বাংলা নবজাগরণের সময় মধুসূদন দত্ত ব্রিটিশ শিক্ষাব্যবস্থার আধিক্য, সমাজের কাঠামোগত অন্যান্য সীমাবদ্ধতা উপেক্ষা করে সাহসিকতার সঙ্গে সাহিত্যে অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। ইংরাজী কবিতা, নাটক রচনা, স্ববিবাহ ও ধর্মান্তর—তার জীবনে টানা এ অনেক ঘটনা তাকে সাহিত্যের উর্ধ্বে পৌঁছে দেয় ।

আজকের স্মরণসভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্য গবেষক, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও ভক্ত মহল। বক্তারা বলেন, “মধুসূদন দত্ত যিনি বাংলা কাব্য ও নাট্যভাষাকে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের রূপ দিয়েছেন, তাঁর চিন্তা ও শৈলী আজও প্রাসঙ্গিক”।

কলকাতা শহরের বিভিন্ন সাহিত্যপ্রতিষ্ঠানেও আজ মধুসূদন দত্তের লেখা নিয়ে সাধারণ পাঠ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। তার পদচিহ্ন অনুসরণ করে বাংলার পরবর্তী প্রজন্ম সাহিত্যে অনুপ্রাণিত হোক— এটিই এই প্রয়াণ দিবসে সকলে রাখলেন তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার প্রতীক।

Loading