October 5, 2025

খাদ্য আন্দোলন শহীদ দিবস: শহীদদের আত্মত্যাগের স্মৃতি, রেশন ডিলারদের আজকের বেদনাময় বাস্তবতা

 সোমালিয়া ওয়েব নিউজ; আজ ৩১শে আগস্ট। বাংলার আকাশ আজও যেন লাল হয়ে ওঠে এই দিনটিতে। ১৯৫৯ সালের কলকাতা—রাজপথে গর্জে উঠেছিল সাধারণ মানুষ। ক্ষুধার জ্বালা, চালের অগ্নিমূল্য, মজুতদারির অভিশাপ—সব কিছুর বিরুদ্ধে সেদিন লাখো মানুষের একটাই স্লোগান ছিল: *“অন্ন চাই, বাঁচতে চাই।”* সেই স্লোগানের জবাব এসেছিল পুলিশের গুলিতে। ঝরে গিয়েছিল অসংখ্য নিরীহ প্রাণ। তাঁদের রক্তে লেখা হয়েছিল বাংলার ইতিহাস—**খাদ্য কোনো দয়া নয়, খাদ্য মানুষের জন্মগত অধিকার।**

আজ শহীদদের স্মৃতিতে আমরা মাল্য দিই, শপথ নেই। কিন্তু প্রশ্ন ওঠে—এই রক্ত কি কেবল স্মৃতিস্তম্ভে আটকে থাকবে? নাকি এই রক্ত আজও আমাদের বিবেককে জাগিয়ে তুলবে?

কারণ আজকের দিনে সেই খাদ্য সংগ্রামের উত্তরাধিকারীরা নতুনভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাঁরা হলেন আমাদের গ্রামের-শহরের **রেশন ডিলাররা**—যাঁদের হাত দিয়েই কোটি কোটি মানুষ এখনও সরকারি খাদ্য পান। করোনার ভয়াল দিনে যখন সবাই ঘরবন্দি, তখন এঁরাই জীবন বাজি রেখে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছিলেন চাল-ডাল। অথচ আজ তাঁদের কথা কেউ ভাবছে না।

সরকারি দপ্তরের অবাস্তব ও পরিকাঠামোবিহীন নির্দেশের বোঝা তাঁদের ঘাড়ে চাপানো হচ্ছে প্রতিদিন। কখনও ডিজিটাল কার্ডের ঝঞ্ঝাট, কখনও ভাঙা যন্ত্রপাতি, কখনও অবাস্তব কাগজপত্রের হিসাব—সব কিছুর দায় চাপানো হচ্ছে তাঁদের উপরেই। উপরে সরকারের চাপ, নিচে জনতার রাগ—এই দুই চাকার মধ্যে পিষ্ট হচ্ছেন রেশন ডিলাররা।

মানুষ খাদ্য না পেলে রাগ দেখায় ডিলারের ওপর। অথচ তাঁদের হাতে নেই কোনো ক্ষমতা। দিনকে দিন মানসিক অবসাদে জর্জরিত হচ্ছেন তাঁরা, কেউ কেউ শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। কেউ আবার অপমান আর অসহায়ের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন। ভাবা যায়? যারা মানুষের মুখে অন্ন তুলে দেয়, তারাই আজ অন্নজলের জন্য হাহাকার করছে!

এই কি শহীদদের রক্তের মর্যাদা? এই কি ১৯৫৯-এর শপথের প্রতিফলন?

আজ, খাদ্য আন্দোলন শহীদ দিবসে তাই শপথ হোক নতুন করে—**শহীদদের রক্ত বৃথা যাবে না। খাদ্যের অধিকারের জন্য যেমন লড়েছি, তেমনি লড়ব খাদ্যবন্টনের যোদ্ধাদের জন্যও।** রেশন ডিলারদের বাঁচাতে হবে, তাঁদের মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে হবে। কারণ তাঁরা বেঁচে থাকলেই মানুষ বাঁচবে, তাঁরা দাঁড়িয়ে থাকলেই শহীদদের আত্মত্যাগ সার্থক হবে।

শহীদ দিবস আজ আমাদের সামনে একটাই প্রশ্ন রাখছে—“শুধু ইতিহাস স্মরণ করব, নাকি ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখব?”

 

Loading