October 5, 2025

বিদ্যাসাগর : আমাদের পথপ্রদর্শক, আমাদের আলোকবর্তিকা

সোমালিয়া ওয়েব নিউজঃ আজ বিদ্যাসাগরের জন্মজয়ন্তী। কেবল একটি জন্মবার্ষিকী নয়, এটি যেন বাংলার মানবতার মহোৎসব। পশ্চিম মেদিনীপুরের এক অখ্যাত গ্রাম বীরসিংহে জন্ম নিয়ে যিনি হয়ে উঠেছিলেন সমগ্র জাতির বিবেক, তাঁকে আমরা আজ স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়।

বিদ্যাসাগরের জীবন এক অসাধারণ সংগ্রামের কাহিনি। দারিদ্র্য, কুসংস্কার, প্রতিকূলতা—সবকিছুকে অতিক্রম করে তিনি প্রমাণ করেছিলেন, জ্ঞান আর দৃঢ় সংকল্প থাকলে কোনো বাধাই অদম্য নয়। ছোট্ট দোলনার দোল থেকে তিনি যে মানুষটিকে গড়ে তুলেছিলেন, তিনি ছিলেন সমাজের আয়না, যিনি কেবল আলোকিত করেছিলেন নারী-পুরুষের পথ নয়, সমগ্র জাতির চেতনা।

তিনি নারীশিক্ষার দ্বার খুলে দিয়েছিলেন, বিধবা বিবাহের আইন প্রবর্তন করেছিলেন, শোষিত ও বঞ্চিতদের জীবনে নতুন আশার আলো জ্বালিয়েছিলেন। বিদ্যাসাগরের কলমে বাংলা গদ্য সহজ, সরল ও মাধুর্যমণ্ডিত রূপ পেয়েছিল। তাঁর রচনা ছিল শিক্ষার জন্য, আলোকিত সমাজ গঠনের জন্য।

আজ আমরা যখন নারী অধিকার নিয়ে কথা বলি, শিক্ষা বিস্তারের স্বপ্ন দেখি, তখন আমাদের মনে রাখতে হয়—এই পথ প্রথম নির্মাণ করেছিলেন বিদ্যাসাগর। তিনি বলেছিলেন, “সমাজকে বদলাতে হলে প্রথমে শিক্ষা দরকার।” আজও তাঁর বাণী আমাদের কাছে চিরকালীন প্রেরণা।

কিন্তু প্রশ্ন রয়ে যায়—আমরা কি সত্যিই তাঁর পথ অনুসরণ করছি? আজও অনেক শিশু শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। আজও কুসংস্কার, বৈষম্য, অবিচার সমাজের বুকে দগদগে ঘা হয়ে রয়ে গেছে। বিদ্যাসাগরের জন্মজয়ন্তী তাই শুধু ফুল-মালা দেওয়ার দিন নয়; এটি আমাদের আত্মসমীক্ষার দিন।

আজকের দিনে বিদ্যাসাগরের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। তাঁর জীবন আমাদের শেখায়—অসত্য, অন্ধকার আর অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই করাই মানবতার আসল ধর্ম। বিদ্যাসাগর নেই, কিন্তু তাঁর আলোকবর্তিকা আমাদের পথ দেখাচ্ছে, দেখাবে অনন্তকাল।

Loading