সোমালিয়া ওয়েব নিউজঃ দীপান্বিতা অমাবস্যার আগের দিন, অর্থাৎ ভূত চতুর্দশী। আলোর উৎসব দীপাবলির পূর্বসন্ধ্যায় এই দিনেই ঘরে ঘরে জ্বলে চোদ্দটি প্রদীপ, আর রান্না হয় চোদ্দো প্রকার শাক। বিশ্বাস, এই দিনে চোদ্দ শাক ভোজন করলে অশুভ শক্তি ও রোগের প্রভাব দূর হয়, যমের দূতও আসে না কাছে।
আয়ুর্বেদ ও লোকজ বিশ্বাসের মিশ্রণে জন্ম নেওয়া এই প্রথা আজও বাংলার ঘরে ঘরে পালন করা হয় গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে। প্রবাদ আছে—ভূত চতুর্দশীর রাতে পূর্বপুরুষদের আত্মা ঘরে ফিরে আসে। তাঁদের পথ আলোকিত করার জন্যই জ্বলে প্রদীপ, আর চোদ্দ শাক খাওয়ার মধ্য দিয়ে শরীর ও মনকে পবিত্র রাখা হয়।
আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য তাঁর ‘চিরঞ্জীব বনৌষধি’ গ্রন্থে চোদ্দ শাকের তালিকা দিয়েছেন—
১) ওল, ২) কেঁউ, ৩) বেতো, ৪) কালকাসুন্দে, ৫) সরিষা, ৬) নিম, ৭) জয়ন্তী, ৮) শাঞ্চে, ৯) গুলঞ্চ, ১০) পটোল পাতা, ১১) শেলূকা, ১২) হিঞ্চে, ১৩) ভাঁট, ১৪) সুষুনী শাক।
আবার অন্য এক প্রচলিত তালিকায় রয়েছে—ওল, কেঁউ, বেতো, সরিষা, কালকাসুন্দে, নিম, জয়ন্তী, শাঞ্চে, হিলঞ্চ, পলতা, শৌলফ, গুলঞ্চ, ভাঁটপাতা ও শুষণীশাক।
প্রতিটি শাকই ওষধিগুণে সমৃদ্ধ। কারও মধ্যে আছে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপাদান, কারও আছে যকৃত শুদ্ধ করার গুণ। শরৎ থেকে হেমন্তে ঋতু পরিবর্তনের সময় শরীরে যে বিষক্রিয়া বা জ্বরজনিত সমস্যা দেখা দেয়, চোদ্দ শাক তারই প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে।
আজও বাংলার বহু পরিবারে এই আচারটি কেবল ধর্মীয় রীতি নয়, বরং প্রকৃতি ও দেহের ভারসাম্য রক্ষার এক প্রাচীন বিজ্ঞান হিসেবে পালিত হয়।
ভূত চতুর্দশীর এই চোদ্দ শাক—
শুধু রান্নাঘরের পদ নয়, এটি এক গভীর সাংস্কৃতিক স্মৃতি, যেখানে আধ্যাত্মিকতা, চিকিৎসা-বিজ্ঞান ও ঐতিহ্য এক সূত্রে গাঁথা।

![]()

More Stories
পাঁচ লক্ষ কণ্ঠে গীতা পাঠের ডাক ব্রিগেডে, রাজ্যপালকে আমন্ত্রণ সনাতন সংস্কৃতি সংসদের
বিধানসভা নির্বাচনের আগে ইভিএম–ভিভিপ্যাটের এফএলসি শুরু রাজ্যে, চলবে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত
হাতুড়ে ডাক্তারি বনাম পাশ করা ডাক্তার—অরাজকতার জঞ্জালে বাংলার স্বাস্থ্যব্যবস্থা