সোমালিয়া ওয়েব নিউজঃ গ্রামবাংলার অন্যতম ঐতিহ্যবাহী লোকোৎসব বাঁদনা পরব আজও গ্রামীণ সমাজে প্রাণের উৎসব হিসেবে পালিত হয়। এই পরব মূলত গরু-গবাদি পশুর আরাধনা কেন্দ্রিক—যাদের পরিশ্রমে কৃষিজীবন টিকে আছে, সেই প্রাণীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোই এই উৎসবের মূল উদ্দেশ্য।
কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথি বা কখনও কার্তিক সংক্রান্তির সময় এই পরব পালিত হয়।বাঁদনা পরব প্রতি বছর কার্তিক অবতার ঠিক পরের দিনমাস্য হয়। এটি কালীপূজার পরের দিন পালিত হয়। বাংলার পাশাপাশি বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা এবং আসামের কিছু অংশেও বাঁদনা পরবের ঐতিহ্য রয়েছে। বিশেষত সাঁওতাল, মুণ্ডা, ওঁরাও প্রভৃতি আদিবাসী সমাজে এই উৎসবের গুরুত্ব অপরিসীম।
পরবের দিনে কৃষকেরা তাঁদের গরু, মহিষ, বলদদের স্নান করিয়ে, রঙিন রঙে সেজে তোলে। শিঙে ও গলায় ঘণ্টা, ফুলের মালা, রঙিন কাপড় পরানো হয়। সন্ধ্যাবেলায় ঢোল, মাদল, করতাল, বাঁশির সুরে শুরু হয় বাঁদনা গান—যেখানে গীত হয় মানুষের সঙ্গে প্রাণীর সহাবস্থানের কথা, প্রকৃতির প্রতি কৃতজ্ঞতার সুর।
অনেক স্থানে এই দিনটিকে গো-ধন পূজা বলেও মানা হয়। বিশ্বাস করা হয়, এদিন গরুর আরাধনা করলে বাড়িতে সমৃদ্ধি আসে এবং ফসল ভালো হয়। কৃষক পরিবারগুলিতে তাই বাঁদনা পরব শুধু ধর্মীয় নয়, বরং কৃষিজীবনের আনন্দ ও কৃতজ্ঞতার প্রতীক।
সাঁওতালি ভাষায় “বাঁদনা” শব্দের অর্থই হচ্ছে “আরাধনা” বা “পূজা”। তাই এই উৎসব প্রকৃত অর্থেই প্রকৃতি ও শ্রমের পূজা—যেখানে মানুষ ও পশুর বন্ধন উদযাপিত হয় গানের ছন্দে, নাচের তালে, এবং মাটির গন্ধে মিশে থাকা সহজ জীবনের আনন্দে।
আজও সন্ধ্যা নামলেই গ্রামের আঙিনায় মাদলের তালে গেয়ে ওঠে গান—
“গোরে গো, তুই আমাদের সাথি,
তোরে বিনে চাষের মাটি ফাঁকি।”
বাঁদনা পরব তাই কেবল উৎসব নয়—এ যেন গ্রামীণ জীবনের এক চিরন্তন গান, মানুষ ও প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কের এক অনন্য উদযাপন।

![]()

More Stories
পাঁচ লক্ষ কণ্ঠে গীতা পাঠের ডাক ব্রিগেডে, রাজ্যপালকে আমন্ত্রণ সনাতন সংস্কৃতি সংসদের
বিধানসভা নির্বাচনের আগে ইভিএম–ভিভিপ্যাটের এফএলসি শুরু রাজ্যে, চলবে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত
হাতুড়ে ডাক্তারি বনাম পাশ করা ডাক্তার—অরাজকতার জঞ্জালে বাংলার স্বাস্থ্যব্যবস্থা