October 5, 2025

ভিনরাজ‍্যের হাসপাতালে স্বাস্থ্যসাথীর সুবিধা, অভিভূত চাষি পরিবার

সোমালিয়া সংবাদ, আরামবাগ: ভিনরাজ‍্যের নামি হাসপাতালে এ রাজ্যের স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে দেখে খুশি চেপে রাখতে পারলেন না আরামবাগের এক গরিব পরিবার। সেখান থেকে তড়িঘড়ি রাজ্যে ফিরে এসে প্রশাসনের সহায়তায় জরুরিভিত্তিতে বাবার জন্য স্বাস্থ্যসাথী কার্ড করালেন মেয়ে। শুক্রবার সন্ধেয় ওই কার্ড নিয়ে আবার ভেলোরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন ওই পরিবারের সদস্যরা। জানা গেছে, আরামবাগের ডোঙ্গল গ্রামের চাষি বৃদ্ধ সমর মান্না প্রায় বছর খানেক ধরে শারীরিকভাবে নানান অসুস্থতায় ভুগছিলেন। এরপর গত আগস্ট মাসে বাথরুমে পড়ে গিয়ে পেটে চোট পান। তখন সেই অসুস্থতা আরও বেড়ে যায়। সমরবাবুর বাড়িতে স্ত্রী ছাড়া আর কেউ নেই। বিঘে দেড়েক জমিতে তিনি নিজেই চাষবাস দেখাশোনা করে সংসার চালাতেন। কিন্তু বছরখানেক তাও প্রায় বন্ধ। একমাত্র মেয়ে খেয়ালীর বিয়ে হয়েছে আরামবাগের ডহরকুন্ডু গ্রামে। সেখান থেকেই মেয়ে বাবা-মায়ের খোঁজখবর ও দেখাশোনা করেন। বাথরুমে পড়ে যাওয়ার পর তিনিই বাবাকে আরামবাগে চিকিৎসা করান। কিন্তু ওই চিকিৎসক জানান কিডনিতে পাথর হয়েছে এবং কিডনির উপর একটি টিউমার আছে। তাঁর তাড়াতাড়ি অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন আছে। খেয়ালী তখন বাবাকে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। তারা জানিয়ে দেয় বাবার অস্ত্রোপচারের জন্য তিন লক্ষ পাঁচ হাজার টাকা খরচ হবে। পাশাপাশি একটা কিডনি বাদ দিতে হতে পারে। এছাড়াও অন্যান্য রোগীর পরিবারের কাছ থেকে খেয়ালী জানতে পারেন ওই খরচ শুধুমাত্র প্রাথমিক খরচ।  এরপরেও আরও অনেক খরচ আছে, যা মিলিয়ে ১০-১৫ লক্ষ টাকার বেশি বিল হতে পারে। কিন্তু সমরবাবুর পক্ষে এতো টাকা দিয়ে অস্ত্রোপচার করানো সম্ভব ছিল না। তাঁরা শুনেছিলেন ভেলোরে এর থেকে কম খরচে অস্ত্রোপচার সম্ভব। তাই নভেম্বর মাসে খেয়ালী বাবা-মাকে নিয়ে ভেলোরে যান। সেখানে সিএমসি অর্থাৎ খ্রিস্টান মেডিকেল কলেজে বাবাকে দেখান। বেশ কয়েকদিন চিকিৎসা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সেখানকার চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন অস্ত্রোপচার করলেই বাবা সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যাবেন। কিডনি বাদ দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। তবে এর জন্য প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা খরচ হবে। কিন্তু ইতিমধ্যেই আরামবাগ, কলকাতায় চিকিৎসা এবং ভেলোরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য প্রায় দেড় লক্ষ টাকা খরচ হয়ে গিয়েছিল।  তাই তাঁরা আবার আড়াই লক্ষ টাকা কিভাবে জোগাড় করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। মেয়ে খেয়ালী তখন দেখেন ওই হাসপাতালের বোর্ডে লেখা আছে সেখানে স্বাস্থ্য বীমা কার্ড গ্রহণ করা হয়। এরপরই তিনি সেখানে খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারেন পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্যসাথী কার্ডও সেখানে গ্রহণযোগ্য। সঙ্গে সঙ্গে তিনি যেন হাতে চাঁদ পেয়ে যান। সেখান থেকেই ফোনে কথা বলেন আরামবাগ পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ‍্যক্ষ দীপক মাঝির সঙ্গে। দীপকবাবু  বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে ফিরে আসতে বলেন। তিনি দ্রুত স্বাস্থ্যসাথী কার্ড করিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেবেন বলেও জানিয়ে দেন। ইতিমধ্যেই ক্রিসমাসের কারণে ভেলোরের ওই সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ছুটিতে চলে যান। তখন খেয়ালী বাবা-মাকে নিয়ে ডিসেম্বরের শেষ দিকে গ্রামে ফিরে আসেন। যোগাযোগ করেন কর্মাধ‍্যক্ষ দীপক মাঝির সঙ্গে। এরপর দীপকবাবু তড়িঘড়ি আরামবাগ বিডিও অফিসে তাঁদের স্বাস্থ্যসাথীর ফরম পূরণ করে দেন। খেয়ালী প্রশাসনিক আধিকারিকদের জানিয়ে দেন ৮ জানুয়ারি সন্ধের ট্রেনে তাঁরা আবার ভেলোর  রওনা দিলেন।  প্রশাসনের আধিকারিকরা তাঁদেরকে আশ্বস্ত করেন  যাওয়ার আগেই স্বাস্থ্যসাথী কার্ড তুলে দেওয়া হবে। এরপর হুগলি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার তাঁদেরকে চুঁচুড়ায় ডেকে পাঠানো হয়। সেখানে সঙ্গে সঙ্গেই খেয়ালীর মা মমতা মান্না ও বাবা সমর মান্নার ছবি তুলে হাতে হাতে স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড দিয়ে দেওয়া হয়। খেয়ালী বলেন, শুক্রবার সন্ধের ট্রেনে আবার আমি বাবা-মাকে নিয়ে ভেলোর রওনা দিচ্ছি। কি ভাল লাগছে বলে বোঝাতে পারবো না। ভিন রাজ্যেও যে এই কার্ডের এত গুরুত্ব আমরা জানতামই না। এর জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে অসংখ্য ধন্যবাদ। তাঁর জন্যই আমরা সম্পূর্ণ বিনা খরচে এখন বাবার অস্ত্রোপচার করাতে পারবো। পাশাপাশি এই ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য তিনি আরামবাগ পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ দীপক মাঝিকেও একরাশ কৃতজ্ঞতা জানান। এ বিষয়ে দীপক বাবু বলেন, ওই পরিবারের আর্থিক অবস্থা তেমন ভাল নয়।  অস্ত্রোপচারের জন্য দ্রুত স্বাস্থ্যসাথীর কার্ডের প্রয়োজন ছিল। আমরা তা করানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি যে সকলের পাশে আছেন এই ঘটনায় তা আরও একবার প্রমাণিত হল।

Loading