সোমালিয়া সংবাদ, গোঘাট: ছাত্র-ছাত্রীদের ভালোবাসায় অভিভূত হয়ে প্রায় একশ কিলোমিটার দূরের স্কুল থেকে বদলি নিয়ে বাড়ির কাছাকাছি স্কুলে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত বদল করলেন শিক্ষিকা। আর সেই খবর জানাজানি হতেই খুশিতে উৎসবের আমেজ স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে। তারা প্রিয় শিক্ষিকাকে জড়িয়ে ধরে কেউ কেক, আবার কেউ বা চকলেট- ক্যাডবেরি উপহার দিল। ঘটনাটি গোঘাটের শুনিয়া ক্ষুদিরাম বিদ্যাভবনের। এই স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পঠনপাঠন চলে। ওই শিক্ষিকার নাম সৌমি ব্যানার্জি। জানা গেছে, উৎসশ্রী পোর্টালের মাধ্যমে তিনি মিউচুয়াল ট্রান্সফারের জন্য আবেদন করেছিলেন। আর সেই আবেদন মঞ্জুর হওয়ায় একেবারে বাড়ির কাছেই উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত গার্লস হাইস্কুলে যোগদানের সুযোগ পেয়েছিলেন। সপ্তাহখানেক আগে সে কথা জানাজানি হতেই স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে প্রায় শোকের ছায়া নেমে আসে। প্রিয় শিক্ষিকা বদলি নিয়ে চলে যাবেন শুনে তারা মিড-ডে-মিল খাওয়া বন্ধ করে দেয়। এমনকি শিক্ষিকা যাতে চলে না যায় সেজন্য ধর্নাতেও বসেছিল। ছাত্র-ছাত্রীরা মাঝেমধ্যেই শিক্ষিকার কাছে কান্নায় ভেঙে পড়ছিল। পড়াশোনায় মন বসাতে পারছিল না কেউই। আর এসব দেখে মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল সৌমিদেবীর। তিনিও সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না কি করবেন। অবশেষে মঙ্গলবার তিনি বদলি নিয়ে বাড়ির কাছের স্কুলে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করে দেন। জানিয়ে দেন এই স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের ভালবাসা ও ভবিষ্যতের কথা ভেবে এখানেই থেকে যাচ্ছেন।

আর তারপরেই পূর্ণিমা হেমব্রম, বিকাশ ভান্ডারী, সন্দীপ সিং সহ সমস্ত ছাত্র-ছাত্রী আনন্দে মেতে ওঠে। তারা বলে, ওই শিক্ষিকা খুবই ভাল পড়ান। আমাদেরকে খুব ভালবাসেন। তাই উনি বদলি নিয়ে চলে গেলে আমাদের পড়াশোনার খুব ক্ষতি হয়ে যেত। তাই ভীষণ মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। এখন উনি থেকে যাবেন শুনে ভীষণ ভাল লাগছে। এ বিষয়ে শিক্ষিকা সৌমি ব্যানার্জি বলেন, আমি বাড়ির কাছের স্কুলে চাকরি করার সুযোগ পেয়েছিলাম। কিন্তু এই প্রান্তিক এলাকার ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি আমার কিছু দায়বদ্ধতা আছে। সেই ভাবনা থেকেই আমি আমার সিদ্ধান্ত বদল করেছি। এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ আমার নিজস্ব। অন্যদিকে স্কুলের প্রধান শিক্ষক সন্দীপ পাল বলেন, আমরা ওনার এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি। শিক্ষিকা হিসেবে উনি যে দায়িত্ববোধ দেখিয়েছেন তাতে আমরা গর্বিত। এর ফলে ছাত্রীরা খুবই উপকৃত হল। অন্যদিকে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকরা জানান, করোনার জন্য প্রায় দীর্ঘ দু বছর স্কুল বন্ধ ছিল। এমনিতেই স্কুলে শিক্ষকের সংখ্যা কম। তারপর ছেলেমেয়েদের মুখে শুনেছি ওই শিক্ষিকা খুবই ভাল পড়ান। তাই উনি চলে গেলে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশুনার ভীষণ ক্ষতি হয়ে যেত। উনি থেকে যাওয়ায় আমরা খুবই খুশি।
More Stories
জয়রামবাটিতে স্টেশনের উদ্বোধন ১১ ডিসেম্বর করার দাবি : কামারপুকুর রেল চাই পক্ষের আবেদন
দার্জিলিংয়ে প্রবল বৃষ্টি ও ধসে মৃত ১৩, নিখোঁজ ১
কালীঘাটে বিজয়া সম্মিলনীতে মমতা–অভিষেক