আবার এক গরীব মানুষের ত্রাতা হয়ে দাঁড়ালো স্বাস্থ্যসাথী কার্ড। ঘটনাটি আরামবাগ ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রান্তিক পল্লীর। হতদরিদ্র লক্ষীকান্ত মন্ডল কয়েক মাস ধরে প্রস্ট্রেটের সমস্যায় ভুগছেন। চিকিৎসা করাচ্ছেন বর্ধমানে। অপারেশনের জন্য প্রয়োজন প্রায় ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু টাকার অভাবে তা সম্ভব হচ্ছিল না। এমনকি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিলও মেটাতে পারেননি। ফলে হাতে পাননি রিপোর্টও। বিষয়টি তাঁরা জানান পৌর প্রশাসক স্বপন নন্দীকে। এরপরই পৌর প্রশাসক উদ্যোগ নিয়ে বৃহস্পতিবার তাঁর স্বাস্থ্য সাথী কার্ড করিয়ে দিলেন।লক্ষ্মীকান্তবাবুর আদি বাড়ি আরামবাগের সালেপুরে। তাঁরা পাঁচ ভাই ও তিন বোন। ভাইদের মধ্যে লক্ষ্মীকান্তবাবু সেজো। তিনি বিয়ে করেননি। গ্রামের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিন কোন সম্পর্কও নেই। প্রায় ৩০ বছর ধরে তিনি আরামবাগে ভাড়াবাড়িতে থাকেন। দোকানে দোকানে বিভিন্ন জিনিস সরবরাহের কাজ করেন। মাঝে মাঝে তাঁকে দিনমজুরিও করতে হয়। কিন্তু গত ছ-সাত মাস তিনি এসব কাজও করতে পারেন না। কারণ ওই সময় হঠাৎই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রস্রাবের নালিতে সংক্রমণ দেখা দেয়। প্রথমে আরামবাগে চিকিৎসা করান। তখনই তাঁর প্রস্টেটের সমস্যা ধরা পড়ে।
এসব কাজে তাঁকে সবরকম সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন তাঁর বাড়িওয়ালা হারাধন মল্লিক। তিনি পেশায় আরামবাগ থানার সিভিক ভলেন্টিয়ার। হারাধনবাবু বলেন, লক্ষ্মীকান্তবাবুর আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। মাত্র পাঁচশ টাকা ভাড়ায় তিনি থাকেন। অনেক সময় তাও দিতে পারেন না। কিন্তু ওনার আর কেউ নেই। তাই আমাকেই এই সমস্ত কিছু দেখাশোনা করতে হয়। প্রথমে আরামবাগে ওনার চিকিৎসা চলছিল। কিন্তু ওনার শারীরিক যন্ত্রণা অত্যন্ত বেড়ে যাওয়ায় মঙ্গলবার বর্ধমানের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে চিকিৎসা করান। তাঁরা কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে দ্রুত অস্ত্রপচার করার কথা বলেন। মঙ্গলবারই তাঁর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়। কিন্তু ন’হাজার টাকা বিল মেটাতে না পারায় তিনি সেই রিপোর্ট হাতে পাননি। কারণ তাঁর কাছে মাত্র তিন হাজার টাকা ছিল। ফলে তাঁকে বর্ধমান থেকে বাড়িতে ফিরে চলে আসতে হয়। এরপরেই বুধবার হারাধনবাবু স্থানীয় তৃণমূল নেতার মাধ্যমে আরামবাগ পুরপ্রশাসক স্বপন নন্দীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। স্বপনবাবু জানান, বৃহস্পতিবার আরামবাগ রবীন্দ্রভবনে ছ’নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের জন্য স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের ছবি তোলা হবে। তিনিও যেন ওই ক্যাম্পে হাজির হয়ে দ্রুত ছবি তুলিয়ে কার্ড করিয়ে নেন। এদিন সকালেই হারাধনবাবু লক্ষ্মীকান্তবাবুকে নিয়ে হাজির হন। উপস্থিত ছিলেন পুরপ্রশাসক স্বপন নন্দী নিজেও। তিনি দ্রুত লক্ষ্মীকান্তবাবুর স্বাস্থ্যসাথী কার্ড করিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। এর ফলে বর্ধমানের অস্ত্রোপচারের জন্য তাঁর আর কোনও খরচ লাগবে না। এই ঘটনায় অভিভূত লক্ষ্মীকান্তবাবু। তিনি বলেন, বিকেলের দিকেই বর্ধমানের নার্সিংহোমে চলে যাব। কারণ চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন অস্ত্রোপচারের জন্য একটুও দেরি করা চলবে না। তাহলে বিপদ হয়ে যেতে পারে।
এখন হাতে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকায় অস্ত্রোপচারে আর কোন বাধা রইল না। তিনি বলেন, এই কার্ড না থাকলে আমি হয়তো অস্ত্রোপচার করাতে পারতাম না। এর জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কাছে আমি চিরজীবন কৃতজ্ঞ। পশাপাশি স্বপনবাবুকেও ধন্যবাদ। এ বিষয়ে পুরপ্রশাসক স্বপন নন্দী বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বাংলার মানুষের এই অসহায় অবস্থার কথা ভেবেই স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প চালু করেছেন। আর প্রতিনিয়ত অসংখ্য মানুষ এর সুবিধা পাচ্ছেন। আমরা তাঁর অনুগত সৈনিক হিসেবে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে কাজ করে চলেছি। আমরা চাই উনি দ্রুত সুস্থ হয়ে ফিরে আসুন।
More Stories
জয়রামবাটিতে স্টেশনের উদ্বোধন ১১ ডিসেম্বর করার দাবি : কামারপুকুর রেল চাই পক্ষের আবেদন
দার্জিলিংয়ে প্রবল বৃষ্টি ও ধসে মৃত ১৩, নিখোঁজ ১
কালীঘাটে বিজয়া সম্মিলনীতে মমতা–অভিষেক