সোমালিয়ার সংবাদ, আরামবাগ: দীর্ঘদিন পর আরামবাগে বড়সড় মিছিল করল সিপিএম। দলের হুগলি জেলা কমিটির ডাকে আরামবাগের কালিপুর থেকে বাসুদেবপুর পর্যন্ত এই মিছিলে পা মেলান সিপিএমের পলিটব্যুরোর সদস্য মহম্মদ সেলিম, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, হুগলি জেলা কমিটির সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ, প্রাক্তন সাংসদ শক্তিমোহন মালিকসহ জেলার সিপিএম নেতা-কর্মীরা। এদিন বহু যুব-তরুণ এই মিছিলে পা মেলায়। পরে মিছিল শেষে এক পথসভায় বক্তব্য রাখেন মহম্মদ সেলিম সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। সেলিম এদিন তাঁর বক্তব্যে তীব্র ভাষায় কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে আক্রমণ করেন। বলেন, বিজেপির কাছে টাকার কমতি নেই। নোটবন্দির নামে টাকা লুট করেছে। করোনার সময় মানুষ যখন হাসপাতাল চাইছে, ভেন্টিলেটর চাইছে, ভ্যাকসিন চাইছে, তখন পিএম কেয়ারের নাম করে নরেন্দ্র মোদি সরকার লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা তুলেছে। ২০১৪ সালে বলেছিল দু’কোটি বেকারকে কাজ দেবে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, তাহলে সাত বছরের ১৪ কোটি বেকারের কাজ হয়েছে? তার বদলে এক বছরে আড়াই কোটি মানুষ কাজ হারিয়েছে। এদিনের বক্তব্য সেলিম তীব্র ভাষায় অমিত শাহকে আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, দিল্লিতে দাঙ্গা করালেন আজ কৃষকদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, কৃষকদের ওপর আক্রমণ করছে না? পুলিশ লাঠি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েনি? সেলিম বলেন, প্রকৃতির নিয়মে এমনি এমনি কুয়াশা কেটে যায়, আলো এমনি এমনিই ফোটে। কিন্তু এই চোর, জোচ্চোর, লম্পট, তোলাবাজ, দাঙ্গাবাজদের এমনি এমনি সরানো যায় না। এদেরকে যদি সরাতে হয় সেই কাজটা আমাদেরকেই করতে হবে। গত কয়েক মাস ধরে যেখানেই যাচ্ছি, দেখছি তরুণ প্রজন্মের ঢল নেমেছে। তিনি বলেন, আগে মোদি ব্যাংক থেকে টাকা লোপাট করে দিচ্ছিল, এখন পুরো ব্যাংককেই বিদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। আর মমতা ব্যানার্জি তার বিরুদ্ধে কথাই বলতে পারছে না। তিনি আরও বলেন, তৃণমূল দলটা চোর, জোচ্চোর, মস্তান, থানার পুলিশকে দিয়ে, এসপিকে দিয়ে সব জায়গায় লুট করছে। আর সেই টাকা এ ঘাট ও ঘাট ঘুরে যাচ্ছে কালীঘাটে। তিনি কর্মীদের সামনে আওয়াজ তোলেন , দেশ বাঁচাতে হলে লালকেই ফেরাতে হবে। আর দেশের হাল এমনি এমনি ফিরবে না। যদি হাল ফেরাতে হয়, তাহলে লাল ফেরাতে হবে। তিনি বলেন, আমরা বলেছিলাম তৃণমূল প্রত্যেকটা যে অপরাধ করছে, তার সাজা পেতেই হবে। আমরা এত সহজে ছাড়বো না। চিটফান্ডের টাকা যেমন মেরেছে, মোদির পা ধরলেও বাঁচতে পারবে না। তাদের জমিজমা, ঘরবাড়ি, ওই কালীঘাটের মসনদগুলো নিলাম করে প্রত্যেকটা ইট-পাথর বেচে দিয়ে গরিব মানুষের টাকা আমরা ফেরত দেব। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্রীদীপ ভট্টাচার্য বলেন, এই রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর ২০১১ সাল থেকেই গণতন্ত্রের টুঁটি টিপে ধরা হয়েছে। সারা রাজ্যজুড়ে সন্ত্রাস করে মানুষকে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু এর বিরুদ্ধে সবসময়ই লড়াই জারি ছিল। এদিন সেই লড়াইয়ের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। বাঁধভাঙ্গা এই মিছিল প্রমাণ করে দিয়েছে সন্ত্রাস দিয়ে মানুষকে দাবিয়ে রাখা যাবে না। এই সিপিএমের হাত ধরেই আগামী দিনে আবার নতুন দিন আসতে চলেছে। এদিন এই মিছিলকে ঘিরে আরামবাগ শহর লালপতাকায় ঢেকে গিয়েছিল। বহুদিন পর সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে তীব্র উৎসাহ চোখে পড়ে। এক দশক আগে এরকম মিছিল মানুষ বহুবার দেখেছে। কিন্তু গত সাড়ে ন’বছর তৃণমূল জমানায় এত বড় মিছিল তেমনভাবে আর দেখা যায়নি। তাই এদিনের মিছিলের পর সিপিএম তথা বামফ্রন্ট যে আবার নতুন করে অক্সিজেন পেল এ বিষয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। উল্লেখ্য, গত কয়েক বছর ধরেই সিপিএম ছোট ছোট কর্মসূচির মাধ্যমে নিজেদেরকে সংগঠিত করছিল। কৃষক ও শ্রমিকদের বিরুদ্ধে বঞ্চনা ও অবিচারের প্রতিবাদে তাদেরকে বারেবারেই ছোট ছোট কর্মসূচিতে দেখা গেছে। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই মিছিল নির্বাচনী লড়াইয়ে তাদেরকে অনেকটাই শক্তি জোগাবে কোন সন্দেহ নেই।
More Stories
জয়রামবাটিতে স্টেশনের উদ্বোধন ১১ ডিসেম্বর করার দাবি : কামারপুকুর রেল চাই পক্ষের আবেদন
দার্জিলিংয়ে প্রবল বৃষ্টি ও ধসে মৃত ১৩, নিখোঁজ ১
কালীঘাটে বিজয়া সম্মিলনীতে মমতা–অভিষেক