সোমালিয়া ওয়েব নিউজ: ‘এ নদী এমন নদী, গ্রীষ্মকালে একটুও জল না পাওয়া গেলেও বর্ষার সময় দু’কূল ভাসিয়ে চোখের জলে ভাসিয়ে দেয় পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোট ও আউসগ্রামের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের চাষীদের। চোখের জল ঝরে পড়ে কুনুর নদীর কাছাকাছি বাস করা গরীব মানুষের। বন্যার জল তাদের সাধের কুঁড়েঘর ভাসিয়ে নিয়ে চলে যায়। শুধু তাই নয় এই সময় আতঙ্কে থাকে গুসকরা পুরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। তখন গুসকরা হয়ে ওঠে দ্বীপ শহরের মত – চারপাশে জল, মধ্যেখানে স্থল।নামে নদী হলেও একে ঠিক নদী বলা যায়না। এর থেকে ডিভিসির প্রধান সেচখাল অনেক বেশি চওড়া। তবুও নদী হিসাবে একটা ইজ্জত আছে! যতইহোক এটা হলো অজয় নদের অন্যতম প্রধান উপনদী। এই নদীর উৎপত্তিস্থল হলো পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসা থানার অন্তর্গত ঝাঁঝরার বিখ্যাত ডাঙ্গাল কালীমন্দির এলাকায়। দেখলে মনে হবে ছোট্ট একটি ডোবা থেকে কুনুরের উৎপত্তি। কুনুরের উৎসস্থলকে বড় চৌবাচ্চার মত পাঁচিল দিয়ে ঘিরে রাখা আছে। একে নিয়ে সাধক কবি নীলকণ্ঠ মুখার্জ্জী গানও বেঁধেছিলেন। তিনি একে ভগবতী গঙ্গা বলে উল্লেখ করেছেন। যাইহোক উৎস থেকে প্রায় ১১২ কিমি দীর্ঘ কিলোমিটার দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে আউসগ্রাম ও মঙ্গলকোট ব্লকের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কোগ্রামের উজানি গ্রামের কাছে অজয় নদে পতিত হয়েছে। যাবার পথে গুসকরা শহরকে কার্যত দু’টি ভাগে ভাগ করে দিয়ে গ্যাছে। বর্ষার সময় উৎসমুখ ও উপত্যকা অঞ্চলের বৃষ্টির জল হলো এই নদীর জলের একমাত্র উৎস।
বর্ষার সময় এই নদী ভয়ংকর রূপ ধারণ করলেও অন্য সময় একে দেখে মনে হবে দীর্ঘদিন ধরে খেতে না পাওয়া রাস্তার ধারে অবহেলায় পড়ে থাকা অসহায় শীর্ণকায় এক মানুষ। সেই সময় স্রোতহীন নদীর বুকে জমা হয় কচুরিপানা। নদীর এই অবস্থা দেখেই হয়তো কবি লিখেছিলেন – “যে নদী হারায়ে স্রোত চলিতে না পারে / সহস্র শৈবালদাম বাঁধে আসি তারে”। এই দৃশ্য নদীর বুকে বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায়।নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে অবিভক্ত বর্ধমান জেলা পরিষদের বরাদ্দ করা অর্থে কুনুর নদীর সংস্কারের কাজ হয়েছিল। কাজ হয়েছিল সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে। ছিলনা কোনো মাস্টার প্লান। ফলে নদীর নাব্যতা নুন্যতম বাড়েনি, উল্টে নদীর পাড়ে জড়ো করে রাখা মাটি বর্ষার জলে গলে গিয়ে আবার নদীর গর্ভেই ফিরে আসে। ফলে কাজের কাজ কিছু হয়নি, নদী ফিরেছিল আগের দশায়। মাঝখান থেকে অযথা অর্থব্যয় হয়। স্থানীয়রা ঠাট্টা করে বলত – এতো নদী সংস্কার নয়, দাড়ি কাটার মত নদীর গাল চাঁছা হয়েছে। কেউ কেউ বলত নদী সংস্কারের নামে স্থানীয় কোনো প্রভাবশালী নেতার ছেলেকে কিছু অর্থ পাইয়ে দেওয়ার জন্য এই নাটক করা হয়েছিল। সঠিক পরিকল্পনা ও আধুনিক ড্রেজিং যন্ত্রের সাহায্যে যদি কুনুর নদীর সংস্কার করা হয় তাহলে নিশ্চিতরূপে নদী সংলগ্ন আউসগ্রাম ও মঙ্গলকোটের চাষীদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হবে। বদল ঘটবে এলাকার আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির। সঙ্গে সঙ্গে উপকৃত হবে গুসকরা শহরের। বর্ষার সময় জমা জল দ্রুত বের হয়ে গেলে জল যন্ত্রণা থেকে বাঁচবে শহরের একাধিক ওয়ার্ড। কথা হচ্ছিল মঙ্গলকোটের বালিডাঙার চাষী তাপস বিশ্বাসের সঙ্গে। তিনি বললেন – আমাদের এলাকাটা নীচু। বর্ষার সময় দীর্ঘদিন ধরে জমিতে নদীর জল জমে থাকার জন্য আমরা এই সময় কার্যত ফসল পাইনা। নদী সংস্কার করা হলে সত্যিই আমরা উপকৃত হব। একইসঙ্গে নদীর বুকে কয়েকটি লক গেট করে যদি জল ধরে রাখা হয় তাহলে শীতের মরশুমে আমরা ফসল উৎপাদন করতে পারব। সমস্যা নিয়ে কথা হচ্ছিল আউসগ্রামের বিধায়ক অভেদানন্দ থাণ্ডারের সঙ্গে। তিনি বললেন – বিষয়টি নিয়ে আমরা ওয়াকিবহাল আছি। ইতিমধ্যে আমরা সেচ দপ্তরের সঙ্গে নদী সংস্কারের বিষয়ে কথা বলেছি। আশাকরি ভাল কিছু হবে। একই কথা বললেন মঙ্গলকোটের বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরী।অন্যদিকে গুসকরা পুরসভার চেয়ারম্যান কুশল মুখার্জ্জী বললেন – নদী সংস্কারের বিষয়টি পুরোপুরি সেচ দপ্তরের হাতে। আমরা গুসকরাবাসীর স্বার্থে ইতিমধ্যে সমস্যা সম্পর্কে আমাদের বিধায়ককে অবহিত করেছি। তিনিও সমস্যা নিয়ে চিন্তিত। নদীটির সংস্কার করা হলে জমা জলের হাত থেকে শহরবাসী নিশ্চিতরূপে রক্ষা পাবে।
More Stories
জয়রামবাটিতে স্টেশনের উদ্বোধন ১১ ডিসেম্বর করার দাবি : কামারপুকুর রেল চাই পক্ষের আবেদন
দার্জিলিংয়ে প্রবল বৃষ্টি ও ধসে মৃত ১৩, নিখোঁজ ১
কালীঘাটে বিজয়া সম্মিলনীতে মমতা–অভিষেক