October 5, 2025

ধর্মীয় মেরুকরণের পথে বাংলা

সোমালিয়া সংবাদ, আরামবাগ: এবারের লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যজুড়ে তৃণমূল কংগ্রেসের জয়জয়কার। কারণ যেভাবে বিজেপি হাওয়ার কথা বলা হয়েছিল এবং এক্সিট পোলেও তার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল তার ধারে কাছে পৌঁছাতে পারেনি বিজেপি। এমনকী গতবারের ১৮টি আসনও ধরে রাখতে পারেনি। উল্টে গতবারের আসনের এক- তৃতীয়াংশ আসন তাদের কমে গেছে। আর রাজ্যে বিজেপির এই হতাশাজনক ফলে অনেকেই অবাক হয়েছেন। কিন্তু একটু বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে বিজেপির এই খারাপ ফলের প্রধান কারণ ধর্মীয় মেরুকরণ। এই রাজ্যে সংখ্যালঘু মুসলিমদের সংখ্যা কম-বেশি ৩০ শতাংশ। আর সংখ্যাগুরু হিন্দুদের সংখ্যা ৭০ শতাংশের কিছুটা কম। এবারের ফলাফলে দেখা গেছে সংখ্যালঘু এলাকার তৃণমূল প্রার্থীরা অনেক বেশি ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন। সেই তুলনায় সংখ্যালঘুদের সংখ্যা যেখানে কম সেখানে সেই ব্যবধান অনেকটাই কম। এবারে নির্বাচনে সংখ্যালঘুদের প্রায় বেশিরভাগ ভোটই গেছে তৃণমূল কংগ্রেসের ঝুলিতে। কারণ তৃণমূল কংগ্রেসকেই এই মুহূর্তে এ রাজ্যে তাদের বিশ্বাসযোগ্য ও নির্ভরযোগ্য দল বলে মনে হয়েছে। সংখ্যালঘু ভোটে আইএসএফ, কংগ্রেস বা বামপন্থী দলগুলি তেমনভাবে থাবা বসাতে পারেনি। আবার এটাও ঠিক, অনেক জায়গাতে সংখ্যালঘুরা তাদের সংখ্যালঘু প্রার্থীকেই পছন্দ করেছেন। দল নয়, প্রার্থী সংখ্যালঘু কিনা সেটাই বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক্ষেত্রে একটি উদাহরণ তুলে ধরলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে। বহরমপুর কেন্দ্রে অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু তৃণমূল প্রার্থী ইউসুফ পাঠানকে এলাকার সংখ্যালঘুরা ভোট দিয়েছেন। আবার মালদা দক্ষিণ কেন্দ্রে কংগ্রেসের সংখ্যালঘু প্রার্থী ইশা খান চৌধুরীকে তাঁরা বেছে নিয়েছেন। হিন্দু ভোট এমনভাবে কোনদিনই একত্রিত হতে দেখা যায়নি। কিন্তু তা সত্ত্বেও এবারে নির্বাচনে হিন্দু ভোট একত্রিত হওয়ার অনেকটাই প্রবণতা দেখা গেছে। রাজ্যের হিন্দু এলাকারই বিজেপি প্রার্থীরা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি ভোট পেয়েছেন। কিন্তু হিন্দু ভোট মুসলিম ভোটের মতো একেবারে একত্রিত হতে না পারায় জয়ের ক্ষেত্রে তা খুব বেশি প্রভাব ফেলতে পারেনি। আগামী দিনে এই প্রবণতা যে আরও বেশি করে ধর্মীয় মেরুকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে তা বলাই বাহুল্য। আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। প্রতিটি বিধানসভা ক্ষেত্রেই দেখা গেছে সংখ্যালঘু এলাকাতেই তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী মিতালি বাগ বড় ব্যবধান তৈরি করতে পেরেছেন। তাই অন্যান্য জায়গায় হিন্দু প্রধান এলাকাগুলিতে বিজেপি প্রার্থী অল্প ব্যবধানে এগিয়ে থাকলেও জয়ের ক্ষেত্রে তা নির্ণায়ক ভূমিকা নিতে পারেনি। যদিও এবারে নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের পাশাপাশি শুভেন্দু অধিকারীর প্রচারেও ধর্মীয় মেরুকরণের ইঙ্গিত মিলেছিল। আর তার প্রভাব এবার হিন্দু ভোটেও দেখা গেছে। একটি উদাহরণ দিলে তা আরও পরিষ্কার হয়ে যাবে। আরামবাগ পৌরসভা এলাকার ১৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস জয়ী হয়েছে ৭টি ওয়ার্ডে। আর উল্লেখযোগ্য বিষয়, এই ৭টি ওয়ার্ডেই সংখ্যালঘুদের প্রাধান্য বেশি। উল্টোদিকে বলতে গেলে হিন্দু প্রধান ওয়ার্ডগুলিতে বিজেপি প্রার্থী অরূপকান্তি দিগার জয়ী হয়েছেন। আগামী দিনে যদি এই প্রবণতা চলতে থাকে তাহলে এরাজ্যেও এবার ধর্মীয় মেরুকরণের ভিত্তিতে জয় পরাজয় নির্ধারণ হবে কোন সন্দেহ নেই।

Loading