সোমালিয়া ওয়েব নিউজ: প্রফুল্ল চন্দ্র রায় তৎকালীন যশোর জেলার (পরবর্তীকালে খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলা) রাড়ুলি-কাটিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন(২ আগস্ট, ১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দ,–১৬ জুন ১৯৪৪,বয়স ৮২) যা তখন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমান বাংলাদেশ) পূর্ব অংশের অন্তর্গত ছিল। তিনি ছিলেন ভুবনমোহিনী দেবী ও হরিশচন্দ্র রায়ের পুত্র। হরিশচন্দ্র রায় স্থানীয় জমিদার ছিলেন। ১৮৭৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রফুল্লচন্দ্র কলকাতায় পুনরায় ফিরে অ্যালবার্ট স্কুলে ভর্তি হন। এই স্কুল থেকেই ১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি স্কুল ফাইনাল তথা প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মেট্রোপলিটন কলেজে (বর্তমান বিদ্যাসাগর কলেজ) ভর্তি হন। ১৮৮১ খ্রিষ্টাব্দে সেখান থেকে কলেজ ফাইনাল তথা এফ এ পরীক্ষায় (ইন্টারমিডিয়েট বা এইচএসসি) দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করে তিনি প্রেসিডেন্সী কলেজে বি এ ক্লাসে ভর্তি হন। প্রেসিডেন্সী থেকে গিলক্রিস্ট বৃত্তি নিয়ে তিনি স্কটল্যান্ডের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে যান। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বি এসসি পাশ করেনপরবর্তীকালে এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়েই ডি এসসি ডিগ্রী লাভের জন্য গবেষণা শুরু করেন। তার সেই গবেষণার বিষয় ছিল কপার ম্যাগনেসিয়াম শ্রেণীর সম্মিলিত সালফেটের সংযুক্তি পর্যবেক্ষণ , দুই বছরের কঠোর সাধনায় তিনি এই গবেষণা সমাপ্ত করেন এবং পিএইচডি ও ডিএসসি ডিগ্রী লাভ করেন। এমনকি তার এই গবেষণাপত্রটি শ্রেষ্ঠ মনোনীত হওয়ায় তাকে হোপ প্রাইজে ভূষিত করা হয়। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ঘুরে ১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রফুল্লচন্দ্র রায় স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। দেশে ফিরে প্রেসিডেন্সী কলেজের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। প্রায় ২৪ বছর তিনি এই কলেজে অধ্যাপনা করেছিলেন।পরবর্তীতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন।
অধ্যাপনাকালে তার প্রিয় বিষয় রসায়ন নিয়ে তিনি নিত্য নতুন অনেক গবেষণাও চালিয়ে যান।বাঙালিদের ব্যবসায় অনাগ্রহ ও হীনমন্যতা পর্যবেক্ষণে ১৮৯২ সালে, ৭০০ টাকা বিনিয়োগে ও নিজ উদ্যোগে, নিজস্ব গবেষণাগার থেকেই বেঙ্গল কেমিক্যাল কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন এবং পরবর্তীকালে ১৯০১ খ্রিষ্টাব্দে তা কলকাতার মানিকতলায় ৪৫ একর জমিতে স্থানান্তরিত করা হয়। তখন এর নতুন নাম রাখা হয় বেঙ্গল কেমিক্যাল এন্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস লিমিটেড। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্রের মৃত্যুর পর এবং ১৯৫০-এর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে বেঙ্গল কেমিক্যালস ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ ডিসেম্বর এই সংস্থাটির পরিচালনার দায়িত্ব ভারত সরকার গ্রহণ করে এবং ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দের ১৫ ডিসেম্বর সংস্থাটির জাতীয়করণ করা হয়। ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দের ২ মার্চ থেকে নতুন পাবলিক সেক্টর পরিচালিত সংস্থা চালু হয় এবং নামকরণ করা হয় বেঙ্গল কেমিক্যালস অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড (বিসিপিএল) দীর্ঘ কয়েকবছর দশক ধরে ক্ষতির মধ্যে দিয়ে চলার পর ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষে সংস্থাটি মুনাফায অর্জন করতে সক্ষম হয়। করোনা মুকাবিলায় বিশ্বজুড়ে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের চাহিদা বেড়ে গেলে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোল কমিশন বেঙ্গল কেমিক্যালকে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন উৎপাদনের অনুমতি দেয়। এছাড়াও ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর অনুমতি থাকায় ২০২০ অর্থবর্ষে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয় এবং লাভের আলো দেখে। বর্তমানে কোম্পানিটি বিভিন্ন ধরনের পণ্যসামগ্রী প্রস্তুত করে থাকে- অ্যালুমিনিয়াম সালফেট(অ্যালাম),ড্রাগ এবং ফার্মাসিউটিক্যালস, যেমন- অ্যানালজেসিক ও অ্যান্টিপাইরেটিক, অ্যান্টিব্যাকটেরিক ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ড্রাগ, নন-স্টেরয়েড অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি ড্রাগ, অ্যান্টি-টিউবারকিউলোসিস ড্রাগ, অ্যান্টিম্যালেরিক ড্রাগ, ভিটামিন প্রস্তুতি অ্যান্টি ভেনাম সিরাম,প্রসাধনী ও গৃহসামগ্রী প্রস্তুতি।
More Stories
আলকুশি
শিশুর বিকাশে সংগীত শিক্ষা অপরিহার্য: গবেষণা জানাচ্ছে নতুন দিগন্তের কথা
চাঁদের পূর্ণগ্রহণ আজ : আকাশজুড়ে ‘রক্তচাঁদ’-এর বিরল দৃশ্য