সোমালিয়া সংবাদ, আরামবাগ: শিক্ষাক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য রাজ্যের ‘শিক্ষারত্ন সম্মান-২০২৪’ পুরস্কার পাচ্ছেন আরামবাগ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিকাশ চন্দ্র রায়। এই খবর জানাজানি হতেই আরামবাগ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা, অভিভাবক-অভিভাবিকা, ছাত্রছাত্রী এবং পরিচালন সমিতির পক্ষ থেকে তাঁকে সম্বর্ধনা দেওয়া হল। উপস্থিত ছিলেন হুগলি জেলা সহ-সভাধিপতি কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরা, তৃণমূলের আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা চেয়ারম্যান তথা কাউন্সিলর স্বপন নন্দী, স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি প্রদীপ সিংহ রায় প্রমুখ। স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনায় আরামবাগের সমস্ত মানুষই আপ্লুত ও অভিভূত। প্রধান শিক্ষক বিকাশ চন্দ্র রায়ের আদি বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের নন্দনপুর গ্রামে। কিন্তু ২০১০ সাল থেকে তিনি সপরিবারে আরামবাগে বসবাস করেন। তিনি বাংলাতে মাস্টার ডিগ্রি ও বিএড করার পাশাপাশি এডুকেশনে মাস্টার ডিগ্রী করেছেন। এরপর ১৯৯৭ সালের প্রথমে তিনি কাটোয়ার শ্রীবাটী গোকুল কৃষ্ণ উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। তারপর ২০০৯ সালে গোঘাটের উদয়রাজপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। সেখান থেকে ২০১৬ সালে পুরশুড়ার সোদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এরপর ২০২১ সালে যোগদান করেন আরামবাগ উচ্চ বিদ্যালয়ে। বিকাশবাবু জানান, কাটোয়ার শ্রীবাটি গোকুল কৃষ্ণ উচ্চ বিদ্যালয়ে থাকাকালীন সেখানকার প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলেমেয়েদেরকে কিভাবে স্কুল মুখী করা যায় তার উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি। এর জন্য এলাকায় রাস্তা তৈরি, খেলার মাঠ তৈরি, প্রাচীর দেওয়া ইত্যাদি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। গোঘাটের উদয়রাজপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে থাকাকালীন ভ্রাম্যমান রবীন্দ্র উৎসব পালন করে গ্রামের মানুষের কাছে সংস্কৃতির এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছিলেন। আর আরামবাগ উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদানের পর ছাত্র-ছাত্রীদের পঠন পাঠনের পাশাপাশি তিনি সাংস্কৃতিক বিকাশের জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেন। সারা বিদ্যালয়কে মনীষীদের বাণী এবং ছবিতে চিত্রায়িত করেন। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন ঘটনাবহুল জিনিসকে স্কুলের মধ্যে অতি সুন্দরভাবে উপস্থাপনা তাঁর এক উল্লেখযোগ্য দিক। এছাড়াও স্কুল জুড়ে সবুজায়ন, পাখিদের বাসা তৈরি ইত্যাদি ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা ছাত্র-ছাত্রীদেরকেও আগামী দিনে এক সম্পূর্ণ নাগরিক হওয়ার ক্ষেত্রে অনেকটাই সাহায্য করে করবে। এছাড়াও তাঁর উদ্যোগেই এ বছর থেকে বিদ্যালয়ে চালু হয়েছে ইংরেজি মাধ্যম। আর এ সমস্ত কারণেই রাজ্য শিক্ষা দপ্তর তাঁকে এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেছে। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক বিকাশ চন্দ্র রায় বলেন, আমি চেষ্টা করি কিভাবে ছাত্রদের পঠন-পাঠনের সঙ্গে তাদের শিষ্টাচার, নিয়ম-শৃঙ্খলা, সময়ানুবর্তিতা, সর্বোপরি সংস্কৃতি কিভাবে বজায় রাখা যায়। কারণ সংস্কৃতি যদি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে শিক্ষা ব্যবস্থা ভাল চলে না। তাই সবসময় চেষ্টা করি পঠন পাঠনের সঙ্গে কিভাবে সংস্কৃতিকে অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত করে নিয়ে যাওয়া যায়। তিনি জানান, শিক্ষা দপ্তরের পক্ষ থেকে তাকে মেইল করে এই পুরস্কারপ্রাপ্তির কথা জানানো হয়। এই ঘটনায় তিনি ভীষণই খুশি। তবে তিনি জানান, এটা তাঁর ব্যক্তিগত কৃতিত্ব নয়, এই কৃতিত্ব সমষ্টিগত। কারণ স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্রছাত্রী, পরিচালন সমিতি সকলের সমষ্টিগত উদ্যোগ না থাকলে এই পুরস্কার লাভ সম্ভব ছিল না। উল্লেখ্য এই স্কুলেরই সহকারী প্রধান শিক্ষক রোহিন্দ্রনাথ টুডু গত বছর এই শিক্ষারত্ন সম্মান পেয়েছিলেন। তিনি জানান, এরকম একজন প্রধান শিক্ষককে আমাদের স্কুলে পেয়েছি এর জন্য আমরা গর্বিত। তিনি সহশিক্ষক এবং অন্যান্য শিক্ষাকর্মীদের সঙ্গে এত সুন্দর ব্যবহার করেন এবং পরিচালনা করেন তাতে আমরা সত্যিই আপ্লুত। তাই আজ প্রার্থনা সভায় ওনাকে স্কুলের পক্ষ থেকে সম্বর্ধনা জানানো হয়েছে। স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি প্রদীপ সিংহ রায় বলেন, এই পুরস্কার প্রাপ্তিতে খুবই ভাল লাগছে, একদিকে এই স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা যেমন মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং মেডিকেলে সুযোগ পাচ্ছে তেমনি তাদেরকে গড়ে তোলার কারিগর শিক্ষকরাও সম্মানিত হচ্ছেন এর থেকে ভাল আর কিছু হতে পারে না। স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র অংকন মান্না, নবম শ্রেণীর ছাত্র অঙ্কিত দত্ত প্রমুখরাও জানাল, আমাদের প্রধান শিক্ষক শিক্ষারত্ন সম্মান পাচ্ছেন, আমাদের খুব ভালো লাগছে। আমরা ভীষণ খুশি।
More Stories
সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির গোঘাট এক নম্বর আঞ্চলিক কমিটির তৃতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত
গোঘাটে দুর্গোৎসবের মূল আকর্ষণ ‘রাবণ কাটা’ রথের মেলা
রামকৃষ্ণ সেতু ২৪x৫ ঘন্টা খোলা রাখার আবেদন মহাষষ্ঠী থেকে বিজয়া পর্যন্ত — দুর্গাপুজোয় নির্বিঘ্ন যাতায়াতের স্বার্থে বিধায়ক মধুসূদন বাগের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি