October 5, 2025

খানাকুলে তৃণমূল কর্মী খুন, তীব্র উত্তেজনা, পথ অবরোধ

সোমালিয়া সংবাদ, খানাকুল: এক তৃণমূল নেতাকে নৃশংস  ভাবে খুনের অভিযোগ উঠল বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। এই ঘটনার প্রতিবাদে এদিন দফায় দফায় উত্তেজনা ছড়াল খানাকুলের বিভিন্ন এলাকায়। পথ অবরোধ করে তৃণমূল কর্মী-‌সমর্থকরা এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানান। অবস্থা সামাল দিতে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় আরামবাগ এসডিপিও অভিষেক মন্ডলের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশবাহিনী। জানা গেছে, মৃত ওই তৃণমূল নেতার নাম শেখ নুরসে আনোয়ার (‌৫৫)‌। বাড়ি খানাকুলের সাবলসিংহপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের হরিশচক গ্রামে। অবিবাহিত আনোয়ার দলীয় কাজ ছাড়া জবকার্ডের কাজ করতেন। বাড়িতে মা, দাদা-‌বৌদি ও অন্যান্যরা রয়েছেন।  তিনি দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূলের হয়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করতেন। বর্তমানে তিনি হরিশচক ২৬০ নম্বর বুথের সভাপতি ছিলেন। খানাকুলের তৃণমূল প্রার্থী মুন্সি নজবুল করিমের অভিযোগ, বেশ কিছুদিন ধরেই এলাকার বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা তৃণমূল নেতা-‌কর্মীদের ফোনে ও বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে হুমকি ও ভয় দেখাচ্ছিল। বিষয়টি খানাকুল থানার ওসিকে বারবার জানানো সত্ত্বেও তাঁরা কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। তিনি এদিন অভিযোগ তোলেন, খানাকুল থানার ওসি কৌশিক সরকার  সম্পূর্ণভাবে বিজেপির হয়ে কাজ করছেন। তৃণমূল নেতা-‌কর্মীরা আক্রান্ত হলেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না। আমরা অবিলম্বে ওসির বদলি চাই। তিনি বলেন, আনোয়ারকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে।  পিটিয়ে মেরে অ্যাসিড ঢেলে দেওয়া হয়েছে। মৃতের দাদা শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার বেলা ১১ টার সময় ব্যাংকে যাবার নাম করে ভাই বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল। সে জবকার্ডের কাজ করতো। তাই জবকার্ডের টাকা ব্যাংক থেকে তুলতে গিয়েছিল। কিন্তু তারপর আর বাড়ি ফেরেনি। সন্ধ্যের পর আমরা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেছি। কিন্তু কোথাও তার হদিস পাওয়া যায়নি। এরপর এদিন মিসিং ডায়েরি করব ভাবছিলাম। তখনই জানতে পারি আজগুবিতলার কাছে মুন্ডেশ্বরী নদীর জলে তাঁর মৃতদেহ পড়ে রয়েছে। তিনি দাবি করেন, আমার ভাইকে খুন করা হয়েছে। এদিন এই ঘটনার কথা জানাজানি হতেই সেখানে উপস্থিত হন এলাকার তৃণমূল কর্মী-‌সমর্থকরা তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁরা অবিলম্বে দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান। খবর পেয়ে প্রচার বন্ধ করে ঘটনাস্থলে ছুটে যান তৃণমূল প্রার্থী নজবুল করিম। পৌঁছান তৃণমূলের হুগলি জেলা সভাপতি তথা পুরশুড়া কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী দিলীপ যাদব। এদিকে আরামবাগ এসডিপিও অভিষেক মন্ডল বিশাল পুলিশবাহিনী নিয়ে পৌঁছে যান। ততক্ষণে এই ঘটনার প্রতিবাদে তৃণমূল কর্মী-‌সমর্থকরা খানাকুলের রাজহাটিতে পথ অবরোধ শুরু করেন। এছাড়াও প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় তৃণমূলের পক্ষ থেকে  প্রতিবাদ-‌বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ বিষয়ে তৃণমূলের হুগলি জেলা সভাপতি দিলীপ যাদব বলেন, বিজেপি বুঝতে পেরে গেছে মানুষ আমাদের দলের পক্ষে রায় দেবেন। তাই তারা এলাকাকে অশান্ত করতে চাইছে। এখানকার প্রার্থী নজবুল করিম আগেই আশঙ্কা করেছিল। সে প্রশাসনকে জানিয়েছিল, আমাকেও জানিয়েছিল। আমরা অবাক হয়ে যাচ্ছি মানুষ ভোটের স্বার্থে, নিজের স্বার্থে কতটা  নিচে নামতে পারে। মানুষ যাতে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে না পারে, তার জন্য ভীতি প্রদর্শন করতে খুন করা হচ্ছে। এই ঘটনার প্রতিবাদে আমি খানাকুলের মানুষ, হুগলি জেলার মানুষ, সারা রাজ্যের মানুষের কাছে একটাই আবেদন করব, নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দিয়ে  এর যোগ্য জবাব দিন। পাশাপাশি আমরা থানায় এফআইআর করছি। যারা এই ঘটনায় দোষী তাদের অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে। তিনি অভিযোগ করেন, বিজেপির একটা পতাকা খুলে গেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আর তৃণমূলের একজন খুন হয়ে গেলেও নির্বাচন কমিশন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তাই তাদের নিরপেক্ষতা প্রমাণ করার জন্য এই খুনের সঙ্গে যুক্ত দোষীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে। অন্যদিকে খানাকুলের বিজেপি প্রার্থী সুশান্ত ঘোষ বলেন, এই ঘটনা খুবই দুঃখজনক। তবে এর সঙ্গে বিজেপির কেউ জড়িত নয়। আমরা চাই প্রশাসন উপযুক্ত তদন্ত করে দোষীদের খুঁজে বের করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করুক।

Loading