December 1, 2025

খানাকুল ও পুরশুড়ার সভা থেকে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির

সোমালিয়া সংবাদ, খানাকুল ও পুরশুড়া: কালকে একটা মিটিংয়ে এসেছিলেন। আপনি আপনার বক্তব্য রাখতেই পারেন। এটা গণতান্ত্রিক দেশ। কিন্তু আপনি একটা প্রধানমন্ত্রী হয়ে কি করে বলেন নির্বাচনীবিধি লংঘন করে যে  রাজ্য সরকারের অফিসাররা রেডি থাকুন, ডেটা তৈরি করে রাখুন। আমি শপথে আসব। এসে এই কাজটা আমি করব। আপনি আগে দিল্লিতে গিয়ে দিল্লিকে সামলান তো। দিল্লিটাকে সর্বনাশ করে দিয়েছেন। তিন দিনের জন্য বাংলাদেশ গিয়েছিলেন। ওখানে গিয়েও দাঙ্গা লাগিয়ে দিয়ে এসেছেন। আগে নিজেকে সামলান আপনি। খানাকুল লাইব্রেরী মাঠে তৃণমূল প্রার্থী মুন্সি নজবুল করিমের সমর্থনে রবিবার এক জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এভাবেই প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, আমার রাজ্য সরকারকে কোন নির্দেশ দেওয়ার অধিকার আপনার নেই। এটাই আইনবিরুদ্ধ, এটা অসাংবিধানিক। নির্বাচন চলাকালীন আপনি আমাদের  সরকারি কর্মীদের নির্দেশ দিচ্ছেন।  আপনি নিজেকে কি ভাবেন? আপনি কি ভগবান? প্রতিদিন মিথ্যে কথা বলছে, আর নাটক করতে পারে ভাল। দাঙ্গা করেই আবার চোখ দিয়ে জল পড়বে বুঝলেন। কিরকম নাটক করেন, খুন করবে আবার চোখ দিয়ে জল পড়বে। ভালো নাট্যকার হতে পারত ভাই।মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এদের লজ্জা করে না, রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিচ্ছে। তুমি কে নির্দেশ দেওয়ার? যাও আগে নিজের অফিসারদের সামলাও। তোমার অফিসারদের যদি আমি নির্দেশ দিই সেটা ঠিক হবে? এটা ঠিক নয়। আপনাদের লজ্জা করে না আমরা জানি। ১৩৫ জন অফিসারকে আপনারা হটিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু আমরা বেঙ্গলে কোনদিন করিনি। কিন্তু বিজেপির কথা শুনে কেউ কেউ যেভাবে দালালি করছেন আমি দিল্লির এই পথটা একটু একটু অনুসরণ করব। আমি বলিনি তো আমি করব। আমি একটু একটু দেখে নেব, অনুসরণ করব। ভাববেন না যে আমি কিছু জানি না। আমার হাতের তালুতে সবটাই আছে। আমি আজ পর্যন্ত কাউকে করিনি। বরঞ্চ  আমাদের অফিসার সুমন্ত চৌধুরীকে ওখান থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। আমি আমাদের ঘরে জায়গা দিয়েছি।  আমাদের অফিসারদের দিল্লিতে সবকটাকে শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল। আমি অফিসারদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছি। আমি দিল্লির অফিসারদেরও ভালোবাসি, রাজ্যের অফিসারদেরও ভালোবাসি। আমার কাছে কোন  পার্থক্য নেই।মুখ্যমন্ত্রী এদিন বিজেপিকে কটাক্ষ করে বলেন, পুরো হেরে গেছে, পুরো হেরে যাবে। কত সিটে জামানত বাজেয়াপ্ত হবে ঠিক নেই। আর  নির্দেশ দিচ্ছে, লজ্জাও করেনা। পুলিশ অফিসার পরিবর্তন করছে নির্বাচন কমিশন। এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পুলিশ অফিসার পরিবর্তন করছে। কালকেও করেছে চারটে। পুলিশ অফিসার পরিবর্তন করলে কি হবে? ভোট তো দেবে মানুষ। তোমার বিজেপি দালালদের দেখে দেখে নিচ্ছো।  আমি মনে করি পুলিশ নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে।  আর দালালি যারা করবে তারা আগামী দিন তৈরি থাকবেন। 
 মুখ্যমন্ত্রীকে দিন প্রশ্ন করেন, তোমাদের সরকার আসবে এখানে? ৫০ টা  সিট আগে পাও,  তাও সিপিএমের সাহায্য নিয়ে। সব মিথ্যা কথা। কোথা থেকে জিতবে? ওদের তো এজেন্টই নেই। অনেক জায়গা থেকে ধার করে  এজেন্ট নিচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কোন নিয়ম-কানুন মানা হচ্ছে না। যা ইচ্ছা তাই করছে। আর শুধু চায়, মানুষ যাতে ভোট দিতে না যায়। তাই সবাই ভোট দিতে যাবেন। যদি চারবার মেশিন খারাপ হয় তাহলে পাঁচবারের বার গিয়ে ভোট দিয়ে আসবেন। এটা ওদের চালাকি। ভোট মেশিন খারাপ করে রেখে দেয়। 
 এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি কর্মীদের সতর্ক করে দেন। বলেন, বিজেপি মারছে, ভয় দেখাচ্ছে, বাইরে থেকে গুন্ডা এনেছে—এই ন্যাকা কান্না আমি সহ্য করবো না। ন্যাকা কান্না আমাকে দেখাবেন না।  যার সাহস নেই, সে এখন থেকেই বলে দিন, আমি এজেন্ট হতে পারবো না। তাতে মহিলাদের বসাও, আমাদের কন্যাশ্রীদেরকে বসাও। তারা অনেক শক্তিশালী। আমাদের ছাত্র-যুবদের ধরে বসাও। তাদের মধ্যে যারা ভালো কাজ করবে তাদের আমরা পুরস্কৃত করবো। 
 এদিনের সভায় মুখ্যমন্ত্রী মিম ও আইএসএফ-কে নিয়ে সংখ্যালঘু ভাই-বোনেদের সতর্ক করে দেন। বলেন, আপনাদের কাছে আমার একটাই অনুরোধ, আপনাদের এখান থেকে একটা পচা ছেলে বেরিয়েছে।  বিজেপির টাকা নিয়ে হায়দ্রাবাদ থেকে এলো গাই, সাথে এলো ওই বোকা ভাই। সংখ্যালঘু ভোট কাটবার জন্য। তিনি চারিদিকে গিয়ে ঝামেলা করছেন, আর খুব সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিচ্ছেন। কোনদিন রাজনীতি করেনি। ভোটের সময় বেরিয়ে এসেছে। আর বড্ড বেশি সাম্প্রদায়িক কথাবার্তা বলছে। আমি পরিষ্কার বলি, আমি সাম্প্রদায়িকতার দল করিনি। আমি হিন্দু-মুসলমান সকলকে একসাথে নিয়ে কাজ করি।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত কর্মী-সমর্থকদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, আসামে দেখেননি? ১৪ লক্ষ বাঙালির নাম বাদ দিয়ে দিয়েছে। ভুলে গেছেন? ওখানে তো পুলিশকে দিয়ে ভোট করিয়েছে। দিল্লির পুলিশ বরাকে গিয়ে ছাপ্পা মেরেছে। ভয়ে কথা বলতে পারেনি সংখ্যালঘুরা। এখানে কিন্তু ভয় পাবেন না । এখানে আমি আছি। বাঘের বাচ্চা বসে আছি। আমি আপনাদের আবার বলি, নিজের ভোট নিজে দিতে হবে। জোড়া ফুলে ভোট দেবেন। সব উন্নয়নমূলক কাজ হবে।   একটা পচা ফুল আছে, ওটাতে দেবেন না। জোড়া ফুল মানে মা-বাবা, জোড়া ফুল মানে ভাই-বোন, জোড়া ফুল মানে স্বামী-স্ত্রী, জোড়া ফুল মানে হিন্দু-মুসলমান, জোড়া ফুল মানে রাখিবন্ধন, জোড়া ফুল মানে ভাতৃদ্বিতীয়া, জোড়া ফুল মানে সবকিছু, সবাই মিলে একসঙ্গে থাকা। এদিন খানাকুলের সভায় এলাকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচির কথা তিনি জানান। তিনি বলেন, আমরা আরামবাগ মহকুমা ও উদয়নারায়ণপুরে বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য ৪০  কোটি টাকার একটা মাস্টার প্ল্যান তৈরি করেছি। কাজ শুরু হয়ে গেছে। এটা হচ্ছে যাতে আরামবাগ, খানাকুল, গোঘাট, উদয়নারায়নপুরে বন্যা না হয়।  তাছাড়াও মনে রাখবেন, ২৭০০ কোটি টাকার  একটা প্রজেক্ট নিয়েছি, নিম্ন দামোদর বেসিন প্রজেক্ট। এই প্রজেক্ট হল, দামোদরের অন্তর্বর্তী যে সমস্ত  অঞ্চল আছে সেখানে কালভার্ট তৈরি করব, ভাঙ্গন প্রতিরোধ করব, ইরিগেশন করব বন্যা প্রতিরোধ করব। এটা হয়ে গেলে হুগলি জেলা, হাওড়া জেলা, বর্ধমান জেলা ও মেদিনীপুর জেলায় আর কোনদিনও বন্যা হবে না। আমরা ধীরে ধীরে এই কাজটা করছি।
  অন্যদিকে  পুরশুড়ার চিলাডাঙ্গি মাঠে তৃণমূল প্রার্থী দিলীপ যাদবের সমর্থনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যে দলটার না আছে ভূত, না আছে ভবিষ্যৎ সেই  দলটার নাম বিজেপি। ভারতবর্ষের জঘন্য একটা রাজনৈতিক দল। কাজ তাদের একটাই, রোজ রোজ মিথ্যে কথা বলা, দাঙ্গা লাগানো। মুখ্যমন্ত্রী এখানে এদিন বলেন, ভারতবর্ষে আমি এরকম সরকার কখনও দেখিনি। আমিও সাতবার পার্লামেন্ট মেম্বার হয়েছি। আমি অনেক প্রধানমন্ত্রী দেখেছি। আমি অনেক সরকার দেখেছি। কিন্তু এইরকম বাজে প্রধানমন্ত্রী, এরকম বাজে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, এরকম বাজে রাজনৈতিক দল আমি কখনও দেখিনি। যারা সরকারে থেকে মানুষকে খুন করে, মিথ্যা কথা বলে। বাংলায় নাকি কোনো উন্নয়ন হয়নি। তাই বাংলায় নাকি পরিবর্তন দরকার। এই পরিবর্তন স্লোগানটাই আমার। মুখ্যমন্ত্রী এদিন জোর দিয়ে বলেন, আমি যতদিন নিজে থেকে না সরছি, আমাকে সরানো অত সহজ নয়। এটা জেনে রেখে দাও বিজেপি দল। তিনি বলেন, বিজেপিকে বিশ্বাস করার থেকে গলায় দড়ি দিয়ে মরা ভালো। এরা এত ডেঞ্জারাস। এরা হচ্ছে গোখরো সাপ, কোবরা। কামড়ালেই গেল। কাল কেউটে, যে পুষেছে সে বুঝেছে। উত্তরপ্রদেশের মানুষ কথা বলতে পারেনা। আর বলে নাকি বাংলায় মেয়েরা রাস্তায় চলাফেরা করতে পারে না।
 এদিন খানাকুল ও পুরশুড়া দুটো সভাতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি উপস্থিত দলীয় কর্মীদের কাছ থেকে ফুটবল চেয়ে নেন। তারপর মঞ্চের উপর থেকেই তিনি হাতে করে সেই ফুটবল কর্মীদের  দিকে ছুঁড়ে ‘খেলা হবে’ বলে জানিয়ে দেন। খানাকুলের সভায় প্রার্থীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সাংসদ অপরূপা পোদ্দার, অন্যদিকে পুরশুড়ায় প্রার্থী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন হুগলি জেলা সভাধিপতি মেহেবুব রহমান। দুটি সভাতেই রোদ উপেক্ষা করে বহু মানুষ উপস্থিত হয়েছিলেন। মহিলাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। শেষদিনের এই প্রচারে মুখ্যমন্ত্রী নিজে উপস্থিত থাকায় পুরশুড়া এবং খানাকুলের তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা আরও বেশি উজ্জীবিত হয়ে  উঠলেন কোন সন্দেহ নেই।

Loading