সোমালিয়া সংবাদ, আরামবাগ: তৃণমূল প্রার্থীদের ওপর বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীদের আক্রমণ, এজেন্টদের বাধা, বাড়ি ভাঙচুর, ভোটারদের ওপর কেন্দ্রীয় বাহিনীর অত্যাচার সহ বিভিন্ন ঘটনায় তৃতীয় দফার নির্বাচনে আরামবাগ মহকুমার বিভিন্ন এলাকা দিনভর উত্তেজনা ছাড়ালো। এইসব ঘটনায় তৃণমূলের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ জানানো হয়েছে। এদিন সকালের দিকে আক্রান্ত হন খানাকুলের তৃণমূল প্রার্থী মুন্সি নজবুল করিম। ঘটনাটি ঘটে খানাকুলের চিংড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের গৌরাঙ্গচকে। তৃণমূল প্রার্থী নজবুল করিম বলেন, এদিন হঠাৎই খবর আসে ওই এলাকার ২২২, ২২৩, ২২৪ ও ২২৫ নং এই চারটি বুথে বিজেপি আশ্রিত বহিরাগত দুষ্কৃতীরা এজেন্টেরকে মারধর করছে। তাঁদের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড সহ নির্বাচনী পরিচয় পত্র কেড়ে নেওয়া হয়েছে। কোনভাবেই তাঁদেরকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। দু’জন এজেন্টকে মারধরও করা হয়। এমনকি ভোটারদের হুমকি দিচ্ছে। ওই এলাকার বেশির ভাগ ভোটার সংখ্যালঘু ও তপশিলি জাতি সম্প্রদায়ের মানুষ। বরাবরই তাঁরা সমর্থক। বিজেপি বুঝতে পেরেছে ওই এলাকার মানুষ তাদেরকে ভোট দেবে না। তাই বাইরে থেকে দুষ্কৃতী নিয়ে এসে ভোটার দেখে ভয় দেখাচ্ছিলো। খবর পেয়ে আমরা সেখানে পৌঁছয়। তখনই তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা আমাদেরকে ঘিরে ধরে লাঠি বাঁশ কাঠ নিয়ে বেধড়ক মারধর করে। এই ঘটনায় আমি ও আমার কর্মী সেখ আজহারউদ্দিন গুরুতর জখম হয়। আমাদের জামা-কাপড় সব ছিঁড়ে দেয়। নজবুল করিমের অভিযোগ, সোমবার থেকেই ওই সমস্ত এলাকায় বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা ভোটারদের হুমকি দিচ্ছিল। বারবার নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকদের জানানো হয়েছে। কিন্তু তারা কোন রকম ব্যবস্থা নেয়নি। ওরা সম্পূর্ণভাবে বিজেপির এজেন্টের মত কাজ করছে। ওদেরকে অভিযোগ জানিয়েও কোন লাভ হচ্ছে না। এছাড়া খানাকুলের ঘোষপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের খাপারা ৩৪ নম্বর বুথে বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা কেন্দ্রীয় বাহিনীর সাহায্য নিয়ে ভোটারদেরকে ভয় দেখায়। যে সমস্ত ভোটাররা তৃণমূলকে ভোট দেবে মনে করছে তাদেরকে ভোট দিতে বাধা দেওয়া হয়। প্রতিবাদ করলে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। পুরশুড়ার কেলেপাড়া এলাকায় আসমিনা বেগম নামে এক তৃণমূল কর্মীর অভিযোগ, তাঁর স্বামী স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য। তিনি এজেন্ট হিসেবে বসায় তাঁদের বাড়িতে ভাঙচুর চালায় বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। এমনকি পড়ে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে গেছে। অন্যদিকে আরামবাগের আরান্ডী এক নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ পাড়ায় আক্রান্ত হন আরামবাগের তৃণমূল প্রার্থী সুজাতা মন্ডল। তিনি বলেন, ওই এলাকাটি সংখ্যালঘু ও তপশিলি জাতি ভুক্ত। ওখানকার ২৬৩ ও ২৬৩এ বুথগুলিতে বরাবরই তৃণমূল বেশি ভোট পায়। কিন্তু এবার সেখানে বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা ভোটারদের ভোট দিতে যেতে দিচ্ছিল না। এমনকি কয়েকজন জোর করে ভোট দিতে গেলে তাঁদেরকে মারধর করা হয়। মহিলাদেরকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়।পুরুষদেরকে খুন করে দেওয়া হবে বলে ভয় দেখানো হয়। খবর পেয়ে আমি সেখানে ছুটে যাই। তখনই আমাকে বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা মারধর করে। এমনকি বন্দুক নিয়ে তাড়া করে। আমার দিকে কাটারি ছোঁড়ে। আমাকে প্রাণে মেরে ফেলার চেষ্টা করে। আমার মাথায় বাঁশ দিয়ে আঘাত করে। এছাড়াও আমার ঘাড়ে , পায়ে আঘাত লাগে। আমাকে বাঁচাতে গিয়ে আমার নিরাপত্তারক্ষীরা গুরুতর জখম হন। তাঁদের মাথা ফেটে যায়। সুজাতা মন্ডলের অভিযোগ, ওরা আমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। কিন্তু ওরা আমাকে চেনে না। আমি এর শেষ দেখে ছাড়ব। শুধু বাংলা থেকেই নয়, দেশ থেকে বিজেপিকে তাড়িয়ে ছাড়বো। আরামবাগের গৌরহাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের সুভয়পুরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সামনেই বিজেপির মহিলা কর্মীরা তৃণমূলের এজেন্টদের মারধর করে বের করে দেয়। খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান তৃণমূলের আরামবাগ ব্লক সভাপতি পলাশ যায়। কিন্তু তাঁর গাড়িতেও ভাঙচুর চালায় বিজেপি কর্মীরা। এছাড়া বিকেলের দিকে আরামবাগের ডিহিবাগনান ও পৈসারায় পুনরায় আক্রান্ত হন তৃণমূল প্রার্থী সুজাতা মন্ডল। অভিযোগ, তাঁর গাড়িতে ভাঙচুর চালায় বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। এদিকে গোঘাটের মান্দারণ গ্রাম পঞ্চায়েতের ফুলজলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোটারদেরকে বিজেপিকে ভোট দেওয়ার জন্য প্রভাবিত করার অভিযোগ ওঠে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, তৃণমূলের এজেন্টদেরকে তারা নানা রকম ভাবে অসহযোগিতা করে। এমনকি ভোটারদেরকে বিজেপির প্রার্থীকে ভোট দেয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়। খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান তৃণমূল প্রার্থী মানস মজুমদার। তিনি বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানান।
More Stories
জয়রামবাটিতে স্টেশনের উদ্বোধন ১১ ডিসেম্বর করার দাবি : কামারপুকুর রেল চাই পক্ষের আবেদন
দার্জিলিংয়ে প্রবল বৃষ্টি ও ধসে মৃত ১৩, নিখোঁজ ১
কালীঘাটে বিজয়া সম্মিলনীতে মমতা–অভিষেক