সোমালিয়া ওয়েব নিউজ; রাজ্যজুড়ে চলেছে খাদ্য দপ্তরের গ্রাহক সম্পর্ক অভিযান এবং সোশ্যাল অডিট। রেশনে প্রাপ্ত খাদ্যসামগ্রীর গুণগত মান কেমন, জনগণ সঠিক পরিমাণে খাদ্যদ্রব্য পাচ্ছে কিনা, রেশন দোকানগুলি গ্রাহকদের সঠিক পরিষেবা দিচ্ছে কিনা ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজখবর চলবে। সরকারের এই উদ্যোগকে অনেকেই সাধুবাদ জানিয়েছেন। তবে অধিকাংশ সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, বর্তমান রেশন ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে অনলাইন। রেশন কার্ডধারীকে আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে রেশন তুলতে হয়, রেশন তোলার সাথে সাথে মোবাইলে মেসেজ এবং প্রিন্টেড রসিদ পাওয়া যায়। এতে করে অবৈধ কাজ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। বেশিরভাগ রেশন কার্ডধারী গ্রাহক মাথাপিছু ৫ কেজি অথবা ২ কেজি করে খাদ্যদ্রব্য পান। এই পাঁচ কেজি বা দু কেজি খাদ্যদ্রব্যে একজনের সারা মাস চলে না। অতি সামান্য পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য বিতরণ করে আর যাই হোক সাধারণ মানুষের বিন্দুমাত্র আর্থিক সামাজিক উন্নতি হবে না। যাদের মারফত এই সোশ্যাল অডিট করানো হচ্ছে সেই সোশ্যাল অডিটের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আদেও এইভাবে দেওয়া যায় কিনা তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। সোশ্যাল অডিটের সমস্ত তথ্য আদেও অনলাইনে লিপিবদ্ধ থাকবে তো বা থাকলেও সেই তথ্য অনুযায়ী দপ্তর পদক্ষেপ নেবে কি? অনেক ডিলারের দাবি, এমন এমন তথ্য নেওয়া হচ্ছে যেগুলি দপ্তরের কাছে আগে থেকেই আছে। সরকারই তো রেশন ডিলারদের কমিশন দেয়, একজন রেশন ডিলারের ইনকাম কত তা জানতে চাওয়া হচ্ছে, এই তথ্য তো খাদ্য দপ্তরের কাছে আগে থেকেই আছে।এইরকম সম্পর্ক অভিযান এবং সোশ্যাল অডিটকে জনগণের মগজ ধোলাই বলে মনে করছেন অনেকেই। তাঁদের প্রশ্ন, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, প্রাইমারি স্কুল, হাই স্কুল, হেলথ সেন্টার, কলেজ, বিডিও অফিস, ভূমি রাজস্ব দপ্তর, পঞ্চায়েত, হসপিটাল, থানা, রেল, সড়ক, কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন দপ্তর, রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ইত্যাদি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আছে। সেগুলির ক্ষেত্রে সোশ্যাল অডিট হয় না কেন? অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে শিশুদের খাবারের গুণগত মান, স্কুল-কলেজে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা কতটা হচ্ছে, কিভাবে আরও ভাল পড়াশোনা করানো যায়, এলাকায় স্বাস্থ্য কেন্দ্র বা হাসপাতাল থেকে সাধারণ মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছে কিনা, সেখানে নিয়মিত ডাক্তার আছে কিনা, সমস্ত ঔষধ সেখান থেকে পাওয়া যাচ্ছে কিনা। শুনেছেন কখনও সরকারি হসপিটাল থেকে রোগী ছাড়া পাওয়ার পর বা চিকিৎসা করাতে গিয়ে রোগীদের থেকে কেউ জানতে চায় সেখানে পরিষেবা কেমন ছিল? শিক্ষক, সরকারি কর্মচারীরা সময় মত অফিসে আসছেন কিনা, তাঁরা তাঁদের সঠিক ডিউটি করছেন কিনা, বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দিন দিন ব্যবসায়ী ভিত্তিতে বেড়ে চলেছে। রেল যাত্রীরা সঠিক পরিষেবা পাচ্ছেন কিনা, রাস্তাঘাট মেরামতি হচ্ছে কিনা, পরিবেশ দূষণের উপর নজরদারি হচ্ছে কিনা, সমস্ত দপ্তরে কোনরকম অবৈধ লেনদেন হচ্ছে কিনা, প্রতিটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে বায়োমেট্রিক অ্যাটেনডেন্স আছে কিনা, সরকারি সমস্ত দপ্তর কম্পিউটারাইজড পরিষেবা এবং পরিষেবার ট্রাকিং সিস্টেম আছে কিনা, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিতে জনসাধারণ গেলে সেখান থেকে উপযুক্ত পরিষেবা বা তথ্য পাচ্ছে কিনা, পুলিশ প্রশাসনের থেকে জনগণ সঠিক বিচার পাচ্ছে কিনা, কোথাও কোন অবৈধ কাজ হলে প্রশাসন বা সংশ্লিষ্ট দপ্তর উপযুক্ত ব্যবস্থা নিচ্ছে কিনা ইত্যাদি আরও বিভিন্ন বিষয়ে সোশ্যাল অডিট করার সাহসিকতা উভয় সরকার দেখাচ্ছে না কেন? যেকোন অডিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অডিটের ওপর নির্ভর করে প্রতিষ্ঠান বা দপ্তরের স্বচ্ছতা। এতো গুরুত্বপূর্ণ অডিট কেন ভিআরপিদের দিয়ে করানো হচ্ছে? প্রতিটি সোশ্যাল অডিটের তথ্য অনলাইনে কম্পিউটারাইজড সংরক্ষণ এবং জনসাধারণের কাছে অনলাইনে পাবলিকেশন বা দৃশ্যমান করা উচিত। অনেক রেশন গ্রাহকের রেশন কার্ড তাঁদের অজান্তেই লাল এবং ডিএ্যাক্টিভ হয়ে যাচ্ছে। সুপ্রিম কোর্ট যেখানে বলছে উপযুক্ত রেশন কার্ডধারীকে কোনভাবেই রেশন থেকে বঞ্চিত করা যাবে না, তা সত্ত্বেও দিনের পর দিন ডিএ্যাক্টিভ এবং লাল কার্ডের জন্য বহু রেশন কার্ডধারী রেশন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। খাদ্য দপ্তর সঠিকভাবে খোঁজখবর না নিয়ে কেন রেশন কার্ড ডিএ্যাক্টিভ বা লাল করে দিচ্ছে এই নিয়ে উঠছে সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন। সাধারণ মানুষ চাইছেন খাদ্য দপ্তর নিজস্ব আধিকারিকদের দিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমস্ত রেশন কার্ড ভেরিফিকেশন করাক। তারপর এ্যাকটিভ বা ডিএ্যাকটিভ করুক। ডিএ্যাক্টিভ বা লাল কার্ডের খাদ্যদ্রব্য যাচ্ছে কোথায়? খাদ্য দপ্তর আধার কার্ড এবং মোবাইল নাম্বার লিঙ্কের অজুহাত দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে রেশন থেকে বঞ্চিত করছে। কোন একজন গ্রাহক কোনো কারণবশত কোন একটি মাসে রেশন যদি না তুলতে পারে তাহলে পরের মাসে গত মাসের রেশন সহ দুই মাসের দেওয়া হচ্ছে না কেন? লিংকের সমস্যা সার্ভারের সমস্যা, আঙুলের ছাপের সমস্যার জন্য সরকার একত্রে ছয় মাসের বিল করার ব্যবস্থা করে দিক, গ্রাহকরা প্রতিমাসে সেই বিল দেখে ডিলার ePos এ খুব সহজে অফলাইন এন্ট্রির মাধ্যমে বিলিবন্টন করবে এবং পরে সেই অফলাইনে এন্ট্রি করা ডাটা অনলাইন করে আপডেট করে দিলে অনেকটাই সুবিধা হবে মনে করছে অভিজ্ঞ মহল। যখন থেকে কেন্দ্রের ছোট NFSA কার্ড চালু হয়েছে তখন থেকেই কার্ডের সমবন্টন হয়নি। আর্থিক অবস্থা না দেখেই সেই সমস্ত কার্ড বন্টন করা হয়েছে এবং সেই ভুল এখনও চলে আসছে। সংশোধন করার কোন রকম উদ্যোগ নেই প্রশাসনের। এতে করে ন্যাশনাল ফুড সিকিউরিটি আইনের আওতায় আসা উচিত এমন যোগ্য পরিবারগুলির অধিকাংশ রেশন গ্রাহক বঞ্চিত হচ্ছেন। আর যারা যোগ্য নয় তাঁরা এই প্রকল্পের লাভ ওঠাচ্ছেন। এতে করে যাদের খাদ্যদ্রব্যের প্রয়োজন নেই তাঁরা খোলাবাজারে চড়া দামে রেশনের চাল, আটা, গম বিক্রি করে দিচ্ছেন। প্রশাসনের সামনেই এলাকায় ফেরিওয়ালাদের বাড়বাড়ন্ত বাড়ছে। সরকারি কোষাগার শূন্য হচ্ছে।
More Stories
জয়রামবাটিতে স্টেশনের উদ্বোধন ১১ ডিসেম্বর করার দাবি : কামারপুকুর রেল চাই পক্ষের আবেদন
দার্জিলিংয়ে প্রবল বৃষ্টি ও ধসে মৃত ১৩, নিখোঁজ ১
কালীঘাটে বিজয়া সম্মিলনীতে মমতা–অভিষেক