October 6, 2025

যমালয়ে জম্পেশ ভোট প্রচার

 সমীর ঘোষ: হঠাৎ করে যমালয়ে ভোটের দিন ঘোষণা করে দিতেই মৃত্যুপুরীর অধীশ্বর যমরাজ খুব চিন্তিত। মাঝে আর মাত্র কয়েকটা দিন। তারপরেই যমরাজের ভাগ্য নির্ধারণ হবে। সেই সৃষ্টির সূচনা থেকেই যমালয়ে যমরাজের একাধিপত্য। এতদিন যমরাজের বিরোধী দল ছিল না। কিন্তু এবারের চিত্রটা সম্পূর্ণ আলাদা। ‘যমালয় বাঁচাও’ নামে যমরাজ‍্যে অশরীরীরা একটা নতুন দল তৈরি করেছে। এবার ভোটে ওরাই যমরাজের প্রবল প্রতিপক্ষ। ‘যমালয় বাঁচাও’ দলের নেতা ভুলু সামন্ত এবার যমরাজের বিরুদ্ধে ভোট-প্রার্থী হয়েছে। মর্ত‍্যে ভুলু সামন্তের ক্যারিয়ার মোটেই ভাল ছিল না। খুন সহ নানান অপরাধে বেশ কয়েকবার জেল-হাজত হয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই প্রমাণ লোপাট করে খালাস পেয়ে গেছে। পরে একদিন পুলিশের সঙ্গে এনকাউন্টারে খতম হয়ে যমালয়ে চলে আসে। সেই ভুলু সামন্ত এবার স্বয়ং যমরাজের বিরুদ্ধে প্রার্থী। এহেন লোকের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা! অতএব যমরাজ খুব একটা স্বস্তিতে নেই। নতুন দলের অশরীরীরা এখন তাদের প্রার্থীর হয়ে জোরকদমে প্রচার শুরু করে দিয়েছে।  হোর্ডিং, ব্যানার, পোস্টারে নরক একেবারে ছয়লাপ। যমরাজের দলের লোকজনও হাত-পা গুটিয়ে বসে নেই। চিত্রগুপ্তের নেতৃত্বে চলছে মিটিং-মিছিল ও সমাবেশ। নির্বাচন কমিশন এ বছর বেশ কড়াকড়ি করেছে। নির্বাচন কমিশনের শর্ত মেনেই চলছে প্রচার পর্ব।
 চিত্রগুপ্ত এখন দারুণ ব্যস্ত। তাকে এখন একসঙ্গে দুটো কাজ সামলাতে হচ্ছে। মর্ত্য থেকে যারা যমালয়ে আসছে তাদের নাম এন্ট্রি এবং প্রাক নির্বাচনী প্রস্তুতি। যমরাজের জেতার উপর নির্ভর করছে তার চাকরি। তাই চিত্রগুপ্তও খুব চিন্তিত।
 যমরাজের দলের বিভিন্ন জনসভায় যমালয়ের উন্নতিগুলো তুলে ধরছে এবং সেই সঙ্গে আগামী দিনের জন্য প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দিচ্ছে।

চিত্রগুপ্তের এখন স্নান-খাওয়ার সময় নেই। সবসময় প্লান-প্রোগ্রাম নিয়ে ব্যস্ত। এই ব্যস্ততার মাঝেই হঠাৎ বাড়ির কাজের লোকটি চিত্রগুপ্তকে এসে বলে—– বৌদি তাড়াতাড়ি আপনাকে রেডি হতে বললেন। ম্যাটিনি শোয়ের টিকিট কেটেছেন। আপনার সঙ্গে সিনেমা দেখতে যাবেন।  একথা শুনে চিত্রগুপ্ত খেঁকিয়ে উঠে বলল— আমার এখন মরার সময় নেই, আর আমি যাব সিনেমা দেখতে? শালা, ভুলু যদি জিতে যায় তাহলে আমার ইয়েতে বাঁশ হয়ে যাবে।—-আপনি না গেলে বৌদি ভীষণ রাগ করবেন। প্রয়োজনে হয়তো আপনাকে ডিভোর্স দিতেও দ্বিতীয় বার ভাববেন না।—- বউ গেলে বউ পাব, কিন্তু এমন সুখের চাকরিটা চলে গেলে আর পাব না। এখানে এমন অনেক সুন্দরী বউ আছে যারা তাদের স্বামী ছেড়ে চলে এসেছে। যা তোর বৌদিকে বারণ করবি আমাকে গরম দেখাতে। কাজের লোকটি গোমড়া মুখ করে চলে যেতেই চিত্রগুপ্ত আবার নিজের কাজে মন দেয়। আজ আবার গভীর রাতে যমরাজের সঙ্গে তার গোপন মিটিং। এদিকে ভুলু সামন্তর অশরীরী সমর্থকরা মাইক ঝুলিয়ে মঞ্চ বেঁধে প্রচার করছে। তাদের আওয়াজ যমরাজকে অস্থির করে তুলছে। মঞ্চের উপর  ভুলু সামন্ত অশরীরী বক্তৃতা দিচ্ছে—- বন্ধুগণ, আপনারা বর্তমানে নরকের হাল-হকিকত সব জানেন। এতবছর ধরে যমরাজ আমাদের এই বাসস্থানটিকে কেমন করে রেখেছ তা আর বলার নয়। এর থেকে কলকাতার ধাপার মাঠে অবস্থা অনেক ভালো। কি বলব বলুন তো, এত বছরেও নরকের স্বাস্থ্যব্যবস্থার কোন উন্নতি করতে পারল না। সবার চেহারা দেখুন যেন থ্যালাসেমিয়ায় ভুগছে। মানুষ এখন আর কেউ সহজে নরকে আসতে চায় না। একপ্রকার ঠেলে গুঁজে  তাদেরকে পাঠানো হচ্ছে। আপনারাই বলুন, মর্ত্য থেকে মানুষ কিসের টানে যমালয়ে আসবে? যমালয়ে এখনও সেই বস্তাপচা নিয়ম। মর্তে পাপ করে মানুষ এখানে এলে এখনও তাকে ফুটন্ত তেলের কড়াইয়ে  ফেলে সাজা দেওয়া হয়। বন্ধুগণ, এ নিয়ম আমরা বদলাতে চাই। আপনারা আমাকে ভোট দিয়ে জেতান। কথা দিচ্ছি, নরকের পুরো খোলনলচেটাই পাল্টে দেব। এসব বক্তৃতা শুনে যমরাজ উত্তেজিত হয়ে ছটফট করছেন। ব্লাড প্রেসারটাও বেড়ে গেছে। নন্দনকাননের ঊর্বশীরা এখন যমরাজের দেখভাল করছে। যমরাজের স্ত্রী স্বামীর মঙ্গল কামনায় যজ্ঞের আয়োজন করে ফেলেছেন। বিভিন্ন সংবাদপত্রের প্রতিনিধিরা যমরাজ এবং ভুলু সামন্তর পিছনে ছিনে জোঁকের মতো লেগে আছে। একজন পেত্নী সাংবাদিক যমরাজকে প্রশ্ন করল— আচ্ছা এবার ভোটের ফল সম্বন্ধে আপনার মতামত কি? যমরাজ বললেন, আমি কিছু বলব না। যা বলার চিত্রগুপ্ত বলবে। চিত্রগুপ্তের বক্তব্য, আমরা জিতছি এটা ১০০ শতাংশ সিওর।—- কিন্তু এক্সিট পোল তো অন্য কথা বলছে।—- বলুক না, এখানকার অশরীরীদের স্নায়ু আমরা বুঝি। এরা মুখে বলে এক, আর কাজে অন্য দেখায়। ক্যামেরার সামনে ভুলু সামন্তর বক্তব্য, আমাদের জয় কেউ আটকাতে পারবে না। কারণ আমরা নরকবাসীদের উগ্র আধুনিকতার স্বপ্ন দেখাচ্ছি। প্রতিশ্রুতি দিয়েছি নরকে কম্পিউটার চালু করব।— আচ্ছা, আপনি ক্ষমতায় এলে শিক্ষাব্যবস্থার কি উন্নতি করবেন?—- কি করব এখন বলব না। তবে ক্ষমতায় আসলে দেখবেন ব্যাটা যমরাজ আর তার চামচে চিত্রগুপ্তকে এমন শিক্ষা দেব যা দেখে সবার তাক লেগে যাবে।
 নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী নরকের ভোট প্রচার শেষ হয়েছে। সারা যমালয় এখন পুলিশ বাহিনীর দখলে। চারদিকে থমথমে ভাব। টান টান উত্তেজনা নিয়ে উভয় পক্ষ অপেক্ষা করছে। আর কয়েক ঘন্টা পরেই শুরু হবে যমালয়ে ভোট।

 

Loading