সোমালিয়া ওয়েব নিউজঃ কাশীরাম দাস অবিভক্ত বর্ধমান জেলার (বর্তমানে পূর্ব বর্ধমান ) কাটোয়া সংলগ্ন ছোট মেগাছি গ্রামের পাশে সিঙ্গি গ্রামে এক বাঙালি কায়স্থ বৈষ্ণব পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন; তার মৃত্যুবার্ষিকী এখনও এই অঞ্চলে পালিত হয়। কাশীরাম ছিলেন কমলাকান্ত দাসের দ্বিতীয় পুত্র; বৈষ্ণব পদাবলী ঐতিহ্যে তাঁর দুই ভাই স্ব স্বভাবে বিশিষ্ট কবি ছিলেন। ১৫৮০-র দশক, বাংলার সিঙ্গি গ্রামে(অধুনা পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার কাটোয়া মহকুমা) এক কবি কলম তুলে নিলেন, উদ্দেশ্য—সংস্কৃত ভাষার জটিল মহাভারত কাহিনি বাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া। তিনি কাশীরাম দাস—বাংলা সাহিত্যের এক প্রাচীন স্তম্ভ, যাঁর অবদানে বাঙালি প্রথমবারের মতো পাঁচ পাণ্ডবের গল্প শুনেছিল নিজের মাতৃভাষায়, আপন ঘরের ভাষায়।
কাশীরাম বেদব্যাস বিরচিত সংস্কৃত মহাকাব্য মহাভারত অবলম্বনে লেখেন ভারত-পাঁচালী। কাশীরাম দাস সংস্কৃত ভাষায় সুপণ্ডিত ছিলেন। তিনি অধুনা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার আবাসগড় বা আসিগড় বা আওসগড়ের জমিদার বাড়ির আশ্রয়ে থেকে শিক্ষকতা করতেন। কথিত আছে, উক্ত জমিদার বাড়িতে কথক ও সংস্কৃত পণ্ডিতদের মুখে মহাভারতের কাহিনী শুনে তিনি বাংলা ভাষায় মহাভারত অনুবাদে উদ্বুদ্ধ হন। গবেষকদের অনুমান, ভারত-পাঁচালী রচনা সমাপ্ত হয়েছিল ষোড়শ শতাব্দীর শেষভাগে কিংবা সপ্তদশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে। তাদের আরও অনুমান, কাশীরাম দাস সম্পূর্ণ মহাভারত অনুবাদ করে যেতে পারেননি। আদি, সভা, বন ও বিরাট – এই চার পর্ব অনুবাদের পর তাঁর মৃত্যু হলে তার জামাই অবশিষ্টাংশ অনুবাদ করেন। কাশীরাম দাসের মৃত্যু তারিখ সঠিকভাবে জানা যায় না, তবে তিনি আনুমানিক সপ্তদশ শতকে মারা যান। তিনি বাংলা সাহিত্যের একজন বিখ্যাত কবি ছিলেন এবং মহাভারত রচনার জন্য পরিচিত।
কিন্তু সময় যত এগিয়েছে, ততই কাশীরাম দাস যেন চলে গিয়েছেন বিস্মৃতির অতলে। আজ তাঁর নাম নেই কোনও স্কুল পাঠ্যপুস্তকে, নেই গবেষণার আলোচনায়, নেই জয়ন্তী পালনের আয়োজন। এমনকি, তাঁর জন্মস্থান সিঙ্গি গ্রামেও অনেকেই জানেন না, এই মাটিতেই রচিত হয়েছিল বাংলা মহাভারতের প্রথম পরিপূর্ণ রূপান্তর।
কাশীরাম দাসের রচনার বিশেষত্ব ছিল তাঁর ভাষার সহজতা ও ছন্দময়তা। তিনি সংস্কৃত কাব্যের ভারী ভাবকে লোকমুখে বলার মতো করে রূপান্তর করেছিলেন। তাঁর লেখায় ধর্ম, নৈতিকতা ও সাহিত্যের অপূর্ব সংমিশ্রণ ছিল—যা আজও অনন্য।
সাহিত্যিকরা বলছেন, “যাঁর কলমে মহাভারতের মতো মহাকাব্য ঘরে ঢুকেছিল, তাঁকে অবহেলা করা মানে বাংলা সাহিত্যের শিকড়কে অবজ্ঞা করা।”
তবে আক্ষেপের বিষয়, তাঁর বসতভিটা আজ জরাজীর্ণ। কোনো স্মারক নেই, সরকারি স্তরে কোনও স্বীকৃতি নেই। স্থানীয় বিদ্যালয়, কলেজে তাঁর সাহিত্য নেই পাঠ্যসূচিতে। এ যেন এক সুপরিচিত অনামা হয়ে যাওয়া।
সাহিত্য অনুরাগীদের দাবি, কাশীরাম দাসের অবদানকে নতুন করে মূল্যায়ন করা হোক। তাঁর নামাঙ্কিত গ্রন্থাগার বা স্মারক তৈরি করা হোক সিঙ্গিতে। পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্তি ও গবেষণায় উৎসাহের জন্য সরকারি ও বেসরকারি স্তরে উদ্যোগ নেওয়া দরকার।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের এই প্রাচীন দিকপাল যদি এভাবেই অন্ধকারে হারিয়ে যান, তবে ভবিষ্যতের প্রজন্মের কাছে কী উত্তর দেব আমরা?


More Stories
জয়রামবাটিতে স্টেশনের উদ্বোধন ১১ ডিসেম্বর করার দাবি : কামারপুকুর রেল চাই পক্ষের আবেদন
দার্জিলিংয়ে প্রবল বৃষ্টি ও ধসে মৃত ১৩, নিখোঁজ ১
কালীঘাটে বিজয়া সম্মিলনীতে মমতা–অভিষেক