সোমালিয়া ওয়েব নিউস:
বাঙালির জীবনে উৎসব যেন নিত্যসঙ্গী। “বারো মাসে তেরো পার্বণ” কথাটি কেবল প্রবাদ নয়, বাস্তব। সেই পার্বণগুলির মধ্যেই একটি বিশেষ লৌকিক উৎসব হলো **রান্না পুজো** বা **অরন্ধন**। বিশ্বকর্মা পুজোর আগের দিন, ভাদ্র সংক্রান্তিতে এই রান্না পুজো অনুষ্ঠিত হয়। এই দিন দেবী মনসাকে বিশেষভাবে স্মরণ করে ঘরে ঘরে চলে নানা আচার, উনুন পুজো ও সমৃদ্ধ ভোজনের আয়োজন।
রান্না পুজো : নাম ও প্রাচীন রীতি
এই রান্না পুজো বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন নামে পরিচিত— কোথাও বলা হয় **বুড়ো রান্না**, কোথাও **ধরাতে রান্না**, কোথাও বা **আটাশে রান্না**। তবে মর্ম একটাই— আগের দিন রান্না করা হবে, আর বিশ্বকর্মা পুজোর দিনে নতুন করে কোনও রকম রান্না হবে না। সেই দিন সারা পরিবার এমনকি প্রতিবেশীরাও আগের দিনের বাসি রান্না ভাগ করে খায়।
ভাদ্র সংক্রান্তির দিন ঘরের মহিলারা দেবী মনসার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন পদ রান্না করে নিবেদন করেন। মনসা পুজো এই উৎসবের অন্যতম প্রধান অঙ্গ। রান্না শুধু খাওয়ার জন্য নয়, দেবীর উদ্দেশ্যে উৎসর্গও বটে।
উনুন পুজোর বিশেষত্ব–
যে উনুনে রান্না হয়, তারই পূজা করা হয় এই দিনে। উনুনকে আগে গোবর-মাটি দিয়ে লেপে নেওয়া হয়, সাজানো হয় আলপনা ও সিঁদুরের ফোঁটায়। তারপর ঘট বসিয়ে পূজার সূচনা হয়। রান্না করা হয় মাটির হাঁড়িতে, ভাত সাজানো হয় শাপলা-শালুক ফুলের মালা দিয়ে।
রান্নার নিয়ম ও বিশেষ পদ–
এই দিনে রান্না করার সময় বিশেষ যত্ন নেওয়া হয়। পরের দিন খাবার যাতে নষ্ট না হয়, তাই রান্না হয় শুকনো ও কম জলে। ভাত রেখে দেওয়া হয় পান্তা করার জন্য। একে একে রান্না হয় পাঁচ রকম ভাজা, কচুশাক, লতি চচ্চড়ি, আলু-কুমড়োর তরকারি, ইলিশ ও চিংড়ি মাছ, ওলের বড়া চাটনি, পায়েসসহ নানা পদ। মূলত ঘরের রোজকার খাবারের প্রায় সব পদই সেদিন অল্প অল্প করে রান্না করা হয়।
সব বাড়িতে রান্না পুজো প্রচলিত না থাকলেও, যেখানে হয় সেখানেই একে সামাজিক রূপে পালন করা হয়। গ্রামের বা পাড়ার নির্দিষ্ট কয়েকটি বাড়িতে এই পুজোর আয়োজন হয়, আর সেখানেই সবাইকে নিমন্ত্রণ জানানো হয়। উৎসব রূপ নেয় মিলনমেলায়।
অরন্ধন উৎসব বছরে দু’বার পালিত হয়। প্রথমটি **মাঘ মাসে**, সরস্বতী পুজোর পরদিন শীতলষষ্ঠীতে। দ্বিতীয়টি **ভাদ্র সংক্রান্তিতে**, মনসা পুজোর দিন। দুই দিনেই নিয়ম একই— উনুন জ্বালানো যাবে না, আগের দিনের রান্নাই সারাদিন ভক্ষণ করতে হবে। অনেকে এই উৎসবকে উনুন পুজো বা গৃহদেবতার পূজা বলেও মানেন।
আজকের যান্ত্রিক যুগেও রান্না পুজো বাঙালির লৌকিক ঐতিহ্যকে স্মরণ করিয়ে দেয়। এখানে যেমন আছে ভক্তি, তেমনই আছে মিলন, পারিবারিক বন্ধন ও খাবার ভাগ করে নেওয়ার আনন্দ। রান্না পুজো তাই শুধু এক উৎসব নয়, বাঙালির সংস্কৃতির অমূল্য উত্তরাধিকার।
More Stories
জয়রামবাটিতে স্টেশনের উদ্বোধন ১১ ডিসেম্বর করার দাবি : কামারপুকুর রেল চাই পক্ষের আবেদন
দার্জিলিংয়ে প্রবল বৃষ্টি ও ধসে মৃত ১৩, নিখোঁজ ১
কালীঘাটে বিজয়া সম্মিলনীতে মমতা–অভিষেক