সোমালিয়া ওয়েব নিউজ; হুগলি জেলার গোঘাটের শেষ প্রান্তে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে আছে এক প্রাচীন জমিদার বাড়ি। কালের স্রোতে অনেক কিছু ভেসে গেলেও, স্বর্গীয় রামলাল মন্ডলের তৈরি এই বাড়ি এখনো ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করছে। ১৯২৫ সালে নির্মিত এই জমিদারবাড়ির কারুকার্য দেখে আজও মুগ্ধ হতে হয়—যেন অতীত দিনের মহিমা ফিরে আসে চোখের সামনে। চোখে পড়ে দোতলা বাড়ি, যেখানে খোলা বারান্দা আর খোদাই করা জানালা এখনও অতীতের কথা মনে করিয়ে দেয়। ছাদের কারুকার্য, লোহার গ্রিল, আর মাটির রঙে ধরা পড়ে যায় শতবর্ষের ছাপ। কখনো বিস্তীর্ণ সম্পত্তির অধিকারী ছিল এই পরিবার। নীলগঞ্জে প্রায় ১০০ বিঘা জমি ছাড়াও গরবেতা, চন্দ্রকোনা রোড, মেদিনীপুর, খানাকুল জুড়ে ছড়িয়ে ছিল সম্পত্তি। পরিবারের ছোট ছেলে কালীনারায়ণ মন্ডল সম্পত্তির দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন। এমনকি কোতুলপুরের বিখ্যাত অন্নপূর্ণা সিনেমা হলটিও ছিল এই পরিবারের উদ্যোগে গড়ে ওঠা। শুধু বাড়ি নয়, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক দিক থেকেও ছিল এ বাড়ির বিশেষ গুরুত্ব। জমিদারবাড়ির নিজস্ব আদি কুলো দেবতা মন্দিরে আজও অনুষ্ঠিত হয় বিষ্ণু পূজা, অন্নপূর্ণা পূজা ও রামকৃষ্ণ দেবের পূজা। জমিদার বাড়ির সামনেই কাছারি বাড়িটি, যা ১৯২৩ সালে নির্মিত হয়, এখন রামকৃষ্ণ মন্দির। জানা যায়, স্বয়ং বেলুড় মঠের গহনানন্দ মহারাজ উদ্বোধন করেছিলেন এই মন্দির। অতীতের স্মৃতি আজও লুকিয়ে আছে চারপাশে। পুকুরপাড়ের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কাঠের পুরনো **হামার**, যেখানে একসময় ধান রাখা হতো, এখনো সেই দিনের মতোই শিকল-তালা ঝুলিয়ে আছে। দুটি হামারের মাঝখানে কাঠ ও টিন দিয়ে তৈরি বড় চালের আচ্ছাদন, আচ্ছাদনের নিচে ছিল কাঠের মাচা, অনেক উঁচু সেই মাচাতে বসতো নহবত—বাড়ির বিভিন্ন শুভ অনুষ্ঠানে এবং অন্নপূর্ণা পূজার সময় বাজত সানাই। মন্দিরের পিছনে পুকুরঘাটের বাধানো সিঁড়ি আজও সাক্ষী দেয় সেদিনের আভিজাত্যের। বর্তমান বংশধরেরা যদিও ক্যামেরার সামনে আসতে চান নি, তবে তাঁদের মুখেই ধরা পড়ল হারিয়ে যাওয়া দিনের নানা গল্প। জানা গেল, খ্যাতনামা সংগীত পরিচালক ও সুরকার স্বর্গীয় নচিকেতা ঘোষ এই পরিবারেরই আত্মীয়। গ্রামের মানুষদের শিক্ষা বিস্তারে রামলাল মন্ডলের ভূমিকা ছিল অমূল্য। তাঁর নামেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কালিপুরের নেতাজি মহাবিদ্যালয়ও গড়ে ওঠে তাঁর দান ও সহযোগিতায়। এমনকি অঘোর কামিনী প্রকাশচন্দ্র মহাবিদ্যালয়,বেঙাই হাইস্কুল গড়ে ওঠার পেছনেও রয়েছে এই জমিদারের অবদান। আজ যদিও সম্পত্তি বিলীন, তবু ইতিহাস আর স্মৃতির ভারে এখনো গৌরবান্বিত এই জমিদারবাড়ি।
More Stories
সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির গোঘাট এক নম্বর আঞ্চলিক কমিটির তৃতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত
গোঘাটে দুর্গোৎসবের মূল আকর্ষণ ‘রাবণ কাটা’ রথের মেলা
রামকৃষ্ণ সেতু ২৪x৫ ঘন্টা খোলা রাখার আবেদন মহাষষ্ঠী থেকে বিজয়া পর্যন্ত — দুর্গাপুজোয় নির্বিঘ্ন যাতায়াতের স্বার্থে বিধায়ক মধুসূদন বাগের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি