October 5, 2025

গোঘাটে দুর্গোৎসবের মূল আকর্ষণ ‘রাবণ কাটা’ রথের মেলা

সোমালিয়া ওয়েব নিউজ; দুর্গাপূজার দশমী মানেই বাঙালির মনে মিশে আছে বিদায়ের সুর। কিন্তু হুগলির গোঘাটে দশমীর দিন শুরু হয় এক ভিন্নতর উৎসব—‘রাবণ কাটা’ রথযাত্রা এবং তাকে কেন্দ্র করে সাতদিনব্যাপী বিরাট মেলা। স্থানীয়রা একে বলেন স্বরূপনারায়ণের বিজয়ারথ। জনশ্রুতি রয়েছে, স্বরূপনারায়ণ আসলে শ্রীরামচন্দ্রের প্রতিরূপ, যিনি রাবণ বধ করতে এই রথে চেপে আসেন। তাই এই রথযাত্রার নামকরণ হয়েছে ‘রাবণ কাটা’ রথ। ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, প্রায় সাতশো বছর ধরে চলে আসছে এই প্রথা। গোঘাটের রায় পরিবারের পূর্বপুরুষরা ধর্মঠাকুর স্বরূপনারায়ণের আরাধনার উদ্দেশ্যে এই মেলার সূচনা করেছিলেন। কথিত আছে, কুষ্ঠরোগ থেকে মুক্তি পেতে ধর্মঠাকুরের পূজা করার পরামর্শই দিয়েছিলেন এক পূজারী। ধর্মপুরাণ মতে, ধর্মঠাকুর কুষ্ঠরোগমুক্তি ও সন্তান লাভের বরদান করেন। এমনকি স্থানীয় লোককথায় আছে, রায় পরিবারের পূর্বপুরুষদের স্বপ্নে স্বরূপনারায়ণ কচ্ছপরূপে আবির্ভূত হয়ে পূজার নির্দেশ দেন। এ কারণে আষাঢ়ের রথযাত্রার সঙ্গে এই রথের কোনো সম্পর্ক নেই। এটি গোঘাট তথা আরামবাগ মহকুমার একমাত্র স্বতন্ত্র রথযাত্রা। রথ টানতে হুগলির পাশাপাশি বাঁকুড়া, পূর্ব বর্ধমান ও পশ্চিম মেদিনীপুর থেকেও মানুষ ভিড় জমান। মনস্কামনা পূরণের বিশ্বাসে অনেকে রথের দড়ি টেনে মানত করেন। সাতদিন পর পালিত হয় ‘উল্টোরথ’। মেলার মূল আকর্ষণ সাধারণ দোকানপাটের পাশাপাশি বাঁশের তৈরি ঝুড়ি, পেতে, কুলো, চ্যাঙ্গারি ইত্যাদি ঐতিহ্যবাহী সামগ্রী। এই ঐতিহ্যের শিকড় খুঁজলে মেলে গোঘাটের আদি বাসিন্দাদের মধ্যে কৃষিজীবী ও মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের জীবনধারায়। একসময় গৃহস্থালির অপরিহার্য সামগ্রী ছিল এসব বাঁশের জিনিস, আর হাট-বাজার-মেলা মানেই ছিল তার প্রদর্শনী। আজও সেই ঐতিহ্য বয়ে চলেছে গোঘাটের ‘রাবণ কাটা’ রথের মেলা। সব মিলিয়ে দুর্গোৎসবের পরশে গোঘাটে এই ব্যতিক্রমী উৎসব শুধু ভক্তির আবহ নয়, প্রাচীন লোকঐতিহ্য ও গ্রামীণ সংস্কৃতিরও এক অমূল্য ধারক।

Loading