October 4, 2025

১৩ হাজার ডলারের বিনিময়ে কেনা এক টুকরো বিরানভূমি, যা পরিণত হলো প্রকৃতির স্বর্গে

সোমালিয়া ওয়েব নিউজঃ ১৯৬২ সাল। মাত্র ১৩ হাজার ডলারে এক টুকরো নির্জন ভূমি কিনলেন এক ব্রিটিশ সংবাদপত্র সম্পাদক ব্রেন্ডন গ্রিমশো। দ্বীপটির নাম মোয়েন— সেশেলসের ছোট্ট এক কোণে, যেখানে প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে কোনো মানুষের পদচিহ্ন পড়েনি
প্রথম দর্শনে সেটা ছিল নিঃশব্দ, জনহীন, বৃক্ষশূন্য এক বিরান দ্বীপ। কিন্তু ব্রেন্ডনের চোখে সেটা ছিল সম্ভাবনার ভান্ডার—প্রকৃতির নতুন জন্মভূমি।

স্থানীয় সঙ্গী রেনে লাফোর্টিনকে সঙ্গে নিয়ে তিনি দ্বীপে থিতু হলেন। দুই মানুষ, এক দ্বীপ, আর অফুরন্ত স্বপ্ন।
তাদের দিন কাটতে লাগল বৃক্ষরোপণ, পথ নির্মাণ আর বন্যপ্রাণী রক্ষার কাজে।
৩৯ বছরে তারা রোপণ করলেন ১৬ হাজার গাছ, বানালেন প্রায় ৫ কিলোমিটার লম্বা রাস্তা

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ফিরতে লাগল হারিয়ে যাওয়া প্রাণ। দ্বীপের আকাশ ভরে উঠল পাখির কোলাহলে। ব্রেন্ডন নিয়ে এলেন ২০০০ প্রজাতির পাখি
যে দৈত্যাকার কচ্ছপ প্রায় বিলুপ্তির পথে, সেগুলোকেও রক্ষা করলেন শতাধিক সংখ্যায়। মোয়েন দ্বীপ ধীরে ধীরে পরিণত হলো জীববৈচিত্র্যের এক নতুন আশ্রয়ভূমিতে

১৯৯৬ সালে তিনি নিজের গল্প ও দ্বীপের ইতিহাস লিখলেন বই “Grain of Sand”-এ। পরে, ২০০৯ সালে সেই নামে নির্মিত হলো একটি ডকুমেন্টারি।
কিন্তু ২০০৭ সালে রেনে মারা গেলে ব্রেন্ডন হলেন দ্বীপের একা অধিবাসী। বয়স তখন ৮১।
তবু তিনি দ্বীপ ছাড়লেন না। প্রতিদিন গাছপালার মাঝে, পাখির ডাকে, কচ্ছপের ছায়ায় কাটতে লাগল তাঁর দিন।

একদিন সৌদি আরবের এক রাজপুত্র তাঁকে প্রস্তাব দিলেন— মোয়েন দ্বীপ কিনবেন, মূল্য ৫০ মিলিয়ন ডলার
অর্থাৎ, একসময়ের ১৩ হাজার ডলারের দ্বীপের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে বিপুল সম্পদে।
কিন্তু ব্রেন্ডন বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে বললেন—

“আমি চাই না এই দ্বীপ ধনীদের অবকাশযাপনের স্থান হয়ে উঠুক। আমি চাই, এটি হোক প্রকৃতির আশ্রয়স্থল, মানুষের মুক্ত ভ্রমণের জায়গা।”

অবশেষে, তাঁর ইচ্ছাই পূর্ণ হলো। ২০০৮ সালে মোয়েন দ্বীপকে ঘোষণা করা হলো জাতীয় উদ্যান হিসেবে।
২০১২ সালের জুলাই মাসে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ব্রেন্ডন ছিলেন দ্বীপটির একমাত্র বাসিন্দা

আজ মোয়েন দ্বীপ শুধুমাত্র একটি ভূমিখণ্ড নয়।
এটি এক মানুষের একাগ্রতা, ভালোবাসা ও নিঃস্বার্থ সংগ্রামের গল্প।
যেখানে অর্থলোভের বদলে প্রকৃতিকে আঁকড়ে ধরার সাহসই বড় হয়ে ওঠে।
এক বিরান দ্বীপকে স্বর্গে পরিণত করা ব্রেন্ডন গ্রিমশোর জীবন তাই মানবতার কাছে রয়ে গেল এক অনন্য দৃষ্টান্ত।

Loading